নারীর ক্ষমতায়নে ঐতিহাসিক আইন পাস করল সিয়েরা লিওন
সরকারি ও বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানে চাকরির ৩০ ভাগ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষণ করে একটি ঐতিহাসিক আইন পাস করেছে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ সিয়েরা লিওন।
রাজধানী ফ্রিটাউনে অবস্থিত পার্লামেন্টে বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) এ আইন পাস করে দেশটি। এই আদেশে পুরুষের পক্ষের একটি সমাজে লিঙ্গঅসমতা দূর করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। আইনটিতে স্বাক্ষর করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জুলিয়াস মাদা বায়ো।
এই আইন আরও নিশ্চিত করেছে যে,সকল প্রতিষ্ঠানকে নারীদের অন্তত ১৪ সপ্তাহের মাতৃত্বকালীন ছুটি প্রদান করতে হবে। তাদের সমান বেতন দিতে হবে ও সমান প্রশিক্ষণের সুযোগ প্রদান করতে হবে।
প্রেসিডেন্ট বায়ো বলেছেন, ‘এই আইন দেশের সামনের ও পেছনের লিঙ্গঅসমতাকে নির্দেশ করে। আমাদের আইনটি যেন কার্যকর হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে।’
৫৮ বছরের এই রাজনীতিবিদ আরও বলেছেন, ‘আমাদের অবশ্যই নির্বাচনগুলো এবং সাধারণ মানুষের জীবন থেকে নারীদের বিপক্ষে সকল ধরনের বলপ্রয়োগকে থামিয়ে দিতে হবে এবং তাদের প্রতি করা সব অন্যায় থেকে মুক্তি দিতে হবে। যারা এর বিপক্ষে কাজ করেন তাদের শাস্তি দিতে হবে এবং সকল ধরনের বলপ্রয়োগের সুযোগ বন্ধ করতে হবে।’
সিয়েরা লিওনের নারীদের নিয়মতান্ত্রিক পক্ষপাতিত্বের অভিজ্ঞতা ঘটে এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তথ্যানুসারে গর্ভাবস্থায় উপনীত হলে তাদের চাকরি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া একটি সাধারণ নিয়ম হয়েছে। অনেক নারী ও কিশোরীকে বড় ধরনের যৌন নির্যাতনের মোকাবেলা এবং মুখোমুখি হতে হয়।
সিয়েরা লিওনে ১৯৯১ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত টানা ১১ বছরের দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের সময় নারী ধর্ষণকে একটি শক্তিশালী ও বড় অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
এই নতুন আইনের মাধ্যমে দেশটিতে নারীদের অর্থনীতিতে শক্তিশালী হবার সুযোগও প্রদান করা হয়েছে। ৩০ শতাংশের অনুপাতিক অংশ হিসেবে নারীদের স্বীকৃতি প্রদানের এই খাতগুলোর মধ্যে ব্যবস্থাপনা বিভাগও রয়েছে। কেবলমাত্র নীচু স্তরের কাজগুলোতে মেয়েদের সুযোগ প্রদানের প্রচলিত নিয়মকেও বন্ধ করে দেওয়া হলো এই আইনে। এর মাধ্যমে দেশের ১৪৬ সিটের সংসদে মেয়েরা ৩০ ভাগ এবং সরকারি সকল ধরনের চাকরিতেও ৩০ ভাগ কোটা লাভ করবেন।
পশ্চিম আফ্রিকার অনেক দেশের মতো সিয়েরা লিওনের রাজনীতিতেও অত্যন্ত দুর্বলভাবে নারীরা উপস্থিত। বর্তমানে এই দেশের মাত্র ১৮ জন নারী সংসদ সদস্য। এর মধ্যে প্রেসিডেন্ট বায়োর ৩২ সদস্যের মন্ত্রীসভায় মোট ৪ জন।
প্রেসিডেন্ট বায়ো বলেছেন, ‘নারীদের মধ্যে যারা জনগণের অফিসে কাজ করতে চান তাদের সমর্থন ও সাহায্যগুলোকে অবশ্যই ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা করা যাবে না। তাদের কাউকেই কোনো চাকরিতে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা যাবে না। তাদেরকে খাটো করা যাবে না বা অপদস্থ করা যাবে না।’
‘তবে এই কাজগুলো সহজসাধ্য হবে না। কারণ তাদের জন্য তৈরি জায়গাগুলোর সবই পুরুষে ভর্তি হয়ে আছে অনেক বছর ধরে। তবে আমাদের অবশ্যই অনুসরণ করে যেতে হবে নির্বাচনকালীন পদ্ধতিতেগুলো যাতে নিবাচনগুলো ভীতিহীন ও স্বচ্ছ হয়’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
যে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন এই আইনকে অস্বীকার করবে তাদের প্রতিটি নিয়োগ বরখেলাপের জন্য ৫০ হাজার লিওন বা ২ হাজার ৬০০ ইউরো পর্যন্ত জরিমানা করার বিধান করা হয়েছে।
সিয়েরা লিওনের উইম্যানস ফোরামের প্রধান এই আইনকে স্বাগত ও সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, ‘আমরা নারীরা আজ খুশি হলাম এই কারণে যে আমাদের স্বপ্ন সিয়েরা লিওনের নারী ও বালিকাদের জন্য উন্নততর রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের শুরু হলো।’
জাতিসংঘের ২০২০ সালের লিঙ্গ উন্নয়ন সূচকে বিশ্বের ১৮৯টি দেশের মধ্যে সিয়েরা লিওনের অবস্থান ১৮২তম।
ওএফএস/এএস