অর্থনৈতিক সংকট: দেশ ছাড়তে চান শ্রীলঙ্কানরা
মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছে শ্রীলঙ্কা। এমন পরিস্থিতিতে দেশে থাকতে অনীহা তৈরি হয়েছে দেশটির নাগরিকদের মধ্যে। উন্নত জীবনের আশায় দেশের বাইরে পাড়ি জমাতে চান তারা। এ কারণে দেশটির পাসপোর্ট অফিসে ভিড় জমাচ্ছেন শ্রীলঙ্কান নাগরিকরা। পাসপোর্টের জন্য দীর্ঘ সময় লাইনে অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাদের।
বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আর.এম.আর লেনোরা নামে এক নারী গত সপ্তাহে দুদিন ধরে শ্রীলঙ্কার ইমিগ্রেশন এবং ইমিগ্রেশন বিভাগের সদর দপ্তরের বাইরে সাপের মতো আঁকাবাঁকা লাইনে একটি পাসপোর্টের আশায় দাঁড়িয়েছিলেন। একইসঙ্গে অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে থাকা শ্রীলঙ্কা ছেড়ে যাওয়ার সুযোগের আশায় লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি।
৩৩ বছর বয়সী লেনোরা পেশায় একজন গার্মেন্টস কর্মী। তার স্বামী একটি ছোট রেস্তোরাঁয় কাজ করতেন। যেখানে তিনি রান্নার কাজ করতেন। কিন্তু চলমান অর্থনৈতিক সংকটের কারণে চাকরি হারিয়েছেন তিনি। আর তাই এবার কুয়েতে গৃহকর্মীর কাজের জন্য আবেদন করার সিদ্ধান্ত নেন লেনোরা।
লেনোরা বলেন, আমার স্বামী তার চাকরি হারিয়েছেন। কারণ রেস্তোরাঁয় রান্নার গ্যাস নেই এবং খাবারের দাম আকাশচুম্বী। বর্তমান পরিস্থিতিতে কাজ খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন এবং বেতন খুব কম। তিনি প্রতিদিন প্রায় ২৫০০ শ্রীলঙ্কা রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬৩৪ টাকা) উপার্জন করেন। উপার্জিত অর্থ দিয়ে দুই সন্তান নিয়ে জীবন অতিবাহিত করা সম্ভব নয় বলে জানান লেনোরা।
এ কারণে গত সপ্তাহে শ্রীলঙ্কার মধ্য পাহাড়ের নুওয়ারা এলিয়া শহর থেকে ট্রেনে ১৭০ কিলোমিটার ভ্রমণ করে বাণিজ্যিক রাজধানী কলম্বোতে পৌঁছান লেনোরা। এরপর সেখানে তিনি তার প্রথম পাসপোর্টের কাগজপত্র জমা দিতে লাইনে দাঁড়ান।
প্রতিবেদনে বলা হয়, লেনোরা শ্রমিক, দোকান মালিক, কৃষক, সরকারি কর্মচারী এবং গৃহিণীদের সঙ্গে পাসপোর্টের ওই লাইনে দাঁড়ান। তাদের মধ্যে অনেকেই সারা রাত লাইনে অবস্থান করেছেন। পাসপোর্টের আশায় তারা সেখানেই ঘুমিয়েছেন। তারা সবাই সাত দশকের মধ্যে শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে খারাপ আর্থিক সংকট থেকে বাঁচতে চান। পাড়ি জমাতে চান বিদেশে।
শ্রীলঙ্কান সরকারি তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালের প্রথম পাঁচ মাসে শ্রীলঙ্কান সরকার ২ লাখ ৮৮ হাজার ৬৪৫টি পাসপোর্ট ইস্যু করেছে যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৯১ হাজার ৩৩১টি।
রয়টার্স বলছে, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং করোনাভাইরাস মহামারির কারণে শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এর ফলে শ্রীলঙ্কার ২২ মিলিয়ন মানুষ খাদ্য, রান্নার গ্যাস, জ্বালানি এবং ওষুধের সংকটে পড়েছে। একইসঙ্গে ডলারের বিপরীতে নিজস্ব মুদ্রার অবমূল্যায়ন, ৩৩ শতাংশের বেশি মূল্যস্ফীতি এবং দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার উদ্বেগ অনেক নাগরিককে দেশান্তরিত হওয়ার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, রেমিটেন্স বা বৈদেশিক মুদ্রা বাড়ানোর জন্য শ্রীলঙ্কা সরকার বিদেশে কাজ করতে চায় এমন আরও বেশি মানুষকে সমর্থন করতে আগ্রহী। কারণ সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রেমিটেন্সের প্রবাহ অর্ধেকে নেমে গেছে।
আর এ কারণে নিজের ও নিজের সন্তানের কথা মাথায় রেখে তাদের উন্নত জীবনের জন্য যা প্রয়োজন সেটাই করতে চান লেনোরা। তিনি বলেন, আমি কুয়েতে দুই বছর কাটাতে চাই। এরপর আমি নিশ্চিত যে, আমি আয় করতে পারব এবং ফিরে আসার জন্য যথেষ্ট সঞ্চয় করতে পারব।
তিনি আরও বলেন, আমি আমার মেয়েদের শিক্ষিত করতে চাই। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এসজি/