বিজয় দিবসে সামরিক শক্তির জানান দিচ্ছে রাশিয়া
সোমবার (৯ মে) রাশিয়ার ৭৭তম বিজয় দিবস। এ উপলক্ষ্যে মহড়াসহ নানা আয়োজনে ব্যস্ত রাশিয়ার সেনাবাহিনী। মস্কোর রেড স্কয়ারে পারমাণবিক হামলা মোকাবিলায় সক্ষম আইএল-এইটি ‘ডুমসডে’ কমান্ড বিমান নিয়েও অনুশীলন করেছেন তারা। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এর মাধ্যমে মূলত পশ্চিমাদের আরও একবার কঠোর বার্তা দিতে যাচ্ছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
মস্কোসহ রাশিয়ার বিভিন্ন সড়ক ও আকাশপথে টানা মহড়ায় ব্যস্ত দেশটির সামরিক বাহিনী। এবারও মস্কোর রেড স্কয়ারে সামরিক কুচকাওয়াজ, যুদ্ধ সরঞ্জাম ও আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হবে। এবার কুচকাওয়াজে প্রায় ১১ হাজার সেনা সদস্য অংশ নেবেন বলে জানিয়েছে রুশ সংবাদমাধ্যম রাশিয়া টুডে।
রুশ সেনারা মস্কোয় অনুশীলন চালাচ্ছেন আইএল-৮০ ‘ডুমসডে’ কমান্ড বিমান নিয়ে। রাশিয়ার সবচেয়ে বিপজ্জনক কৌশলগত এই ফাইটার বিমান পারমাণবিক যুদ্ধ মোকাবিলার আদলে তৈরি। ২০১০ সালের পর এই প্রথম ‘ডুমসডে’ বিমান উড়াতে যাচ্ছে মস্কো।
বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজে এই ডুমসডে বিমানকে পাহারা দিতে পাশেই থাকবে আরও কয়েকটি যুদ্ধবিমান। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নিজেদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি আর পশ্চিমাদের কঠোর বার্তা দিতেই ‘ডুমসডে’ বিমান প্রদর্শন করবে পুতিন বাহিনী।
পশ্চিমাদের সব হুমকি উপেক্ষা করে ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। সামরিক সক্ষমতার জানান দিতে এবারের বিজয় দিবসে তাই থাকছে বাড়তি আয়োজন।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক তিমোফেই বোরডাচেভ বলেন, রাশিয়ার জন্য এবারের বিজয় দিবস ব্যতিক্রমই হবে। রেড স্কয়ারে দিবসটি উদযাপনের সব প্রস্তুতি শেষ তাদের। চলমান যুদ্ধে আরেকটি বিজয় উদযাপনে মরিয়া হয়ে আছে ক্রেমলিন।
১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির বিরুদ্ধে জয় ছিনিয়ে এনেছিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন। সে সময় দেশরক্ষায় সামরিক-বেসামরিক অন্তত আড়াই কোটি মানুষ হতাহত হন। যারা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, তাদের স্মরণেই ৯ মে বিজয় দিবস পালন করে রাশিয়া।
প্রসঙ্গত, গত ২১ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রুশপন্থী বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেন। সেখানে ‘শান্তি রক্ষায়’ সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি। এরপর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। একই সঙ্গে ‘প্রজাতন্ত্র’ দুটিতে রুশ সেনাদের ‘শান্তিরক্ষী’ হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন তিনি। পুতিনের এই পদক্ষেপের পর পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে দিয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহীনিয়ন্ত্রিত ডনবাস অঞ্চলে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্ব ইউক্রেনের ওই অঞ্চলে গত আট বছরের লড়াইয়ে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।
৭৩ দিনের যুদ্ধে ইউক্রেনের একাংশ এখন রাশিয়ার দখলে। আজ চলছে যুদ্ধের ৭৪তম দিন। কিয়েভ থেকে সরে এসে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে শক্তি বৃদ্ধি করেছে রাশিয়া। এখন পুরো ডনবাস অঞ্চল তারা দখলে নেওয়ার লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে রুশ বাহিনীর অভিযান। ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে একের পর এক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো বা অন্য কোনো পশ্চিমা শক্তিধর দেশ সামরিক হস্তক্ষেপ করতে এগিয়ে আসেনি।
এসএ/