রেকর্ড সামরিক ব্যয় বৃদ্ধির বছরে শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র
গত বছর বিশ্বজুড়ে সামরিক ব্যয় রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। সামরিক ব্যয় বৃদ্ধির দিক দিয়ে এক নম্বরে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিতীয় অবস্থানে চীন এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। তবে গত বছর ইউক্রেন সীমান্তে যুদ্ধাবস্থা বিরাজমান থাকার পরও রাশিয়া রয়েছে পঞ্চম স্থানে। ২০২১ সালে ইউরোপের দেশগুলোতে সামরিক ব্যয় বৃদ্ধির প্রবণতা ছিল সবচেয়ে বেশি। সোমবার (২৫ এপ্রিল) সুইডেনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই-সিপরি) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ খবর জানিয়েছে।
ওই গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, করোনা মহামারির মধ্যে অর্থনীতি সংকুচিত হলেও বিশ্বজুড়ে সামরিক ব্যয় বেড়েছে। দেশগুলো তাদের অস্ত্রাগারে অস্ত্র বাড়িয়েছে। গত বছর বৈশ্বিক সামরিক খাতে ব্যয় দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পর সামরিক খাতে ব্যয়ের দিক থেকে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চীন। ২০২১ সালে দেশটি সামরিক খাতে ২৯ হাজার ৩০০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে। ২০২১ সালে চীনে সামরিক খাতের ব্যয় ৪ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্য দিয়ে টানা ২৭ বছর ধরে চীনের সামরিক খাত ব্যয় বেড়েছে।
সামরিক ব্যয়ে বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে আছে ভারত। ২০২১ সালে ভারতের সামরিক ব্যয় দশমিক ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বছর ভারত সামরিক খাতে ৭ হাজার ৬৬০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে। যুক্তরাজ্য গত বছর দেশটির সামরিক ব্যয় ৩ শতাংশ বাড়িয়ে সৌদি আরবকে টপকে চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে। গত বছর সামরিক খাতে ৬ হাজার ৮৪০ কোটি ডলার ব্যয় করে যুক্তরাজ্য। এদিকে গত বছর সৌদি আরবের সামরিক ব্যয় ১৭ শতাংশ কমে ৫ হাজার ৫৬০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।
সিপরির জ্যেষ্ঠ গবেষক দিয়োগে লোপেজ ডি সিলভা বলেন, ‘২০২১ সালে টানা সপ্তম বছরের মতো বিশ্বজুড়ে সামরিক খাতে ব্যয় বেড়ে ২ লাখ ১০ হাজার কোটি ডলারে গিয়ে ঠেকেছে। এর আগে কোনো এক বছরে বিশ্বজুড়ে সামরিক খাতে দেশগুলোর যৌথ ব্যয় এত বেশি হতে দেখা যায়নি।’
তিনি আরও জানিয়েছেন, সামরিক ব্যয়ে বিশ্বে রাশিয়ার অবস্থান পঞ্চম। ২০২১ সালে টানা তৃতীয় বছরের মতো দেশটির সামরিক ব্যয় ২ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়ে ৬ হাজার ৫৯০ কোটি ডলারে ঠেকেছে। সামরিক ব্যয় রাশিয়ার মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপির) ৪ দশমিক ১ শতাংশ, বৈশ্বিক গড়ের চেয়েও যা অনেক বেশি। ইউরোপের দেশগুলোতে সামরিক খাতে ব্যয় আরও বাড়বে বলে ধারণা করছেন তিনি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর সামরিক খাতে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করেছে যুক্তরাষ্ট্র, অন্যান্য দেশের তুলনায় যা অনেক বেশি। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ব্যয় ছিল ৮০ হাজার ১০০ কোটি ডলার। তবে বৈশ্বিক প্রবণতার বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ব্যয় ১ দশমিক ৪ শতাংশ কমেছে।
গত এক দশকে গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যয় ২৪ শতাংশ বেড়েছে এবং অস্ত্র সংগ্রহ ৬ দশমিক ৪ শতাংশ কমেছে। তবে গত বছর দুটি খাতেই দেশটির ব্যয় কমেছে। তবে গবেষণা খাতে ব্যয় কমার বিষয়টি নিয়ে তেমন কথা হয় না। এতে করে দেশটি যে নতুন প্রজন্মের প্রযুক্তিতে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, তা উঠে এসেছে।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধের কারণে ইউরোপে উত্তেজনা শুরু হয়েছে। এতে করে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর অন্যান্য দেশও সামরিক খাতের ব্যয় বৃদ্ধি করছে। ন্যাটোর আটটি দেশ গত বছর জিডিপির ২ শতাংশ সামরিক খাতে ব্যয় করার লক্ষ্য পূরণ করেছে। তবে ২০২০ সালের সাত দেশ এ লক্ষ্য পূরণ করেছিল।
এসএ/