জাতিসংঘ মহাসচিবের উপর ক্ষুব্ধ জেলেনস্কি
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান চলছে। এর মধ্যেই জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আগামী বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করবেন। এর আগে মস্কো সফর করবেন তিনি। জাতিসংঘ মহাসচিবের এই মস্কো সফর নিয়েই ক্ষুব্ধ জেলেনস্কি।
ইতিমধ্যে ক্রেমলিনের তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, আগামী মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অ্যান্তনিও গুতেরেসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘এটি ভুল যে, প্রথমে রাশিয়া সফর এরপর ইউক্রেন।’ রাজধানী কিয়েভে সাংবাদিকদের তিনি আরও বলেন, ‘এর মধ্যে কোনো ন্যায়বিচার এবং কোনো যুক্তি নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘যুদ্ধ চলছে ইউক্রেনে, মস্কোর রাস্তায় কোনো মরদেহ নেই।’ প্রথমে ইউক্রেনে যাওয়া যৌক্তিক বলে মনে করেন তিনি। এদিকে, জেলেনস্কি আবারও যুদ্ধ বন্ধে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছেন বলে জানা গেছে।
ইউক্রেন, রাশিয়া সফরের আগে আন্তোনিও গুতেরেস ২৫ এপ্রিল আঙ্কারা সফর করবেন। জাতিসংঘ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আঙ্কারায় জাতিসংঘ মহাসচিবকে অভ্যর্থনা জানাবেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান। তুরস্কই ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ বন্ধে মধ্যস্ততাকারী হিসেবে কাজ করে আসছে। এর আগে আঙ্কারায় বৈঠকও করেন দুদেশের প্রতিনিধিরা। যদিও কোনো সুরাহা মেলেনি।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ অভিযান শুরুর পর থেকে সরব ভূমিকা পালন করছে জাতিসংঘ। যুদ্ধ থামাতে দু’পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসতে আন্তোনিও গুতেরেস চলতি সপ্তাহে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন।
ধারণা করা হচ্ছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ব্রিটেন, চীন ও রাশিয়ার মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে এবং সেটি দূর করতেই জাতিসংঘ মহাসচিবের এমন পদক্ষেপ। পশ্চিমারা রাশিয়াকে দুর্বল করার চেষ্টা অব্যাহত রাখলেও চীন এখনো রাশিয়ার অভিযান নিয়ে সরাসরি নিন্দা জ্ঞাপন করেনি।
প্রসঙ্গত, গত ২১ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রুশপন্থী বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেন। সেখানে ‘শান্তি রক্ষায়’ সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি। এরপর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। একই সঙ্গে ‘প্রজাতন্ত্র’ দুটিতে রুশ সেনাদের ‘শান্তিরক্ষী’ হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন তিনি। পুতিনের এই পদক্ষেপের পর পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে দিয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহীনিয়ন্ত্রিত ডনবাস অঞ্চলে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্ব ইউক্রেনের ওই অঞ্চলে গত আট বছরের লড়াইয়ে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।
৫৯ দিনের যুদ্ধে ইউক্রেনের একাংশ এখন রাশিয়ার দখলে। আজ চলছে যুদ্ধের ৬০তম দিন। কিয়েভ থেকে সরে এসে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে শক্তি বৃদ্ধি করেছে রাশিয়া। এখ পুরো ডনবাস অঞ্চল তারা দখলে নেওয়ার লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে রুশ বাহিনীর অভিযান। ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে একের পর এক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো বা অন্য কোনো পশ্চিমা শক্তিধর দেশ সামরিক হস্তক্ষেপ করতে এগিয়ে আসেনি।
এসএ/