শ্রীলঙ্কাকে সহায়তা দিতে প্রস্তুত চীন
দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক গোলযোগের মধ্যে পড়ে অতি কষ্টে দিন পার করছেন দেশটির সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের পদত্যাগের দাবিতেও চলছে আন্দোলন। এর মাঝে চীনের পক্ষ থেকে এলো অর্থ সহায়তার বার্তা। জরুরি প্রয়োজনে শ্রীলঙ্কাকে সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে চীন।
দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে নতুন মন্ত্রিসভা নিয়ে ক্ষমতায় বসা দেশটির প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে শুক্রবার (২২ এপ্রিল) কথা বলেছেন চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের সঙ্গে। বেইজিংয়ের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা শিনহুয়া জানিয়েছে, এসময় চীনের প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতির অধীনে শ্রীলঙ্কাকে স্থিতিশীল অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন অর্জনে সহায়তা করতে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে ইচ্ছুক চীন। কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে মাহিন্দা রাজাপাকসের সরকার। সে কারণে রাজাপক্ষে চীনের এই জোরালো সমর্থনের প্রশংসা করেছেন বলে জানা গেছে। অর্থ, বাণিজ্য ও পর্যটনের উন্নয়নে মুক্ত-বাণিজ্য চুক্তি নিয়েও কথা হয়েছে দু’দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের মাঝে।
খাদ্যপণ্য ও জ্বালানির তীব্র সংকট ও মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) মধ্য শ্রীলঙ্কার রামবুক্কানায় একটি মহাসড়ক অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা। টায়ার জ্বালিয়ে রাজধানী কলম্বোয় যাওয়ার প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন হাজার হাজার মানুষ। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এসময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন একজন।আন্দোলকারীরা রাজাপাকসের পরিবারের শাসনের অবসান চাইছেন। সংঘর্ষের আগে দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিনদিনের জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করেন।
শ্রীলঙ্কার এই কঠিন পরিস্থিতিতে ৪০০ কোটি ডলার অর্থ সহায়তা প্রয়োজন বলে জানা গেছে। এর আগে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) দেশটির পাশে দাঁড়ানোর চিন্তাভাবনা করছে বলে আভাস পাওয়া যায়। বেইজিংয়ে চীনা কূটনীতিক পালিথা কোহোনা শুক্রবার উইচ্যাটের মাধ্যমে বলেন, আইএমএফের আগ্রহ থাকলেও চীনা সহায়তার প্রতিশ্রুতি শ্রীলঙ্কার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দৃঢ়ভাবে কাজ করবে। চীন আড়াই বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেবে বলেও আশাবাদী তিনি। চীনের কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তিনি এমন বার্তাও দেন যে ঋণ ও ক্রেডিট লাইনের মাধ্যমে সতায়তা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। তবে ফান্ডিংয়ের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাতে পারেননি তিনি এবং কবে সেটি দেওয়া হবে তাও স্পষ্ট করেননি এই চীনা কূটনীতিক।
চা উৎপাদনে অগ্রগণ্য, শিক্ষিত জনগণ, পর্যটনখাতে বিপুল পরিমাণ আয়, তা সত্ত্বেও কেন শ্রীলঙ্কার এমন আর্থিক পরিণতি তার জন্য এককভাবে কোনো কারণকে দায়ী করা মুশকিল। শ্রীলঙ্কার নাগরিকরা বলছেন, ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর এমন বিপর্যয়ের মুখে পড়েনি দেশটির অর্থনীতি।
এসএ/