রুশ নিয়ন্ত্রণে মারিউপোল, ইউক্রেনে আরও অস্ত্র পাঠাবেন বাইডেন
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেনকে আরও ৮০০ মিলিয়ন ডলারের নিরাপত্তা সহযোগিতার ঘোষণা দিয়েছেন। এ সহযোগিতার আওতায় ইউক্রেন ভারী অস্ত্র, গোলাবারুদ ও কৌশলগত কাজে ব্যবহার করা যায় এমন ড্রোন সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে ‘মুক্তির জন্য লড়াইরত’ সেনাদের কাছে পাঠাবে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, চলতি সপ্তাহের শেষ নাগাদ যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাবে রাশিয়া সাড়া দেয়নি। তবে এ বিষয়ে মস্কোর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ওদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মারিউপোলে ইউক্রেন সেনাদের সর্বশেষ দলটি যেখানে অবস্থান নিয়েছে, সেখানে হামলা না করার নির্দেশ দিয়েছেন। এর পরিবর্তে তিনি জায়গাটি এমনভাবে ঘিরে রাখতে বলেছেন যাতে ‘একটি মশাও উড়ে যেতে না পারে’।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী ইউক্রেনের স্পেশাল সিকিউরিটি সার্ভিসের (এসবিইউ) সব সদস্যদের পরিচিতিমূলক তথ্য পেয়েছে রাশিয়া। খারসন অঞ্চলে এসবিইউ সদস্যরা পালিয়ে যাওয়ার পর এসব তথ্য সম্বলিত ডকুমেন্ট পরিত্যক্ত অবস্থায় পেয়েছে রুশ সৈন্যরা। এসব তথ্যের মধ্যে এসবিইউ সদস্যদের নাম ও ছবি রয়েছে, যা ইতোমধ্যে রাশিয়ার সরকারি মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
রুশ সৈন্যরা চলে গেছে; কিন্তু এরপরেও কিয়েভের শহরতলীর এলাকাগুলো বিপজ্জনক রয়ে গেছে। কর্মকর্তারা ব্যস্ত সময় পার করছেন মাইন আর গোলা অপসারণে, যা রুশ সৈন্যরা ফেলে গেছে। এসব অবিস্ফোরিত গোলাবারুদের সংস্পর্শ এসে আহত হয়ে হাসপাতালে যাওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।
এদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গত চব্বিশে এপ্রিল ইস্টার সানডে উপলক্ষে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেওয়া হলেও রাশিয়া তা প্রত্যাখ্যান করেছে। এক ভিডিও বার্তায় জেলেনস্কি বলেন, ‘যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হলেও তিনি এখন শান্তির আশায় আছেন।’
তবে ক্রেমলিন থেকে মিস্টার জেলেনস্কির এ দাবির বিষয়ে কোনো বক্তব্য এখনো আসেনি।
মার্চে রাশিয়ান হেলিকপ্টার ভূপাতিত করার এই ছবি প্রকাশ করেছিল ইউক্রেন।
দোনেৎস্কের পূর্বাঞ্চলের ৪২টি গ্রামের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার কথা নিশ্চিত করেছে ইউক্রেন। টেলিভিশনে এ তথ্য দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্টের চীফ অফ স্টাফ। তবে তিনি আশা করেছেন যে, ইউক্রেনের সেনারা শিগগিরই তা পুনর্দখল করতে সক্ষম হবে।
ওদিকে, রাশিয়া ডনবাসের দিকে লড়াই জোরদার করেছে এবং তাদের মূল লক্ষ্য হলো ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে তাদের নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো।
এদিকে ইউক্রেনের ডনবাসের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর নগরী মারিউপোলের পূর্ণ দখল নেওয়ার দাবি করেছে রুশ সেনা বাহিনী। বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই সোইগু রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
মারিউপোলের মেয়র ভাদিম বইচেঙ্কো বলেছেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত মারিউপোলের লক্ষাধিক বেসামরিক নাগরিকের জীবন এখন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের হাতে। তাদেরকে এখন কি করা হবে তা কেবল পুতিনই নির্ধারণ করতে পারেন।
তিনি বলেন, ‘এটি বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, মারিউপোল শহরে এখন আটকে থাকা মানুষের ভাগ্য কেবল একজন ব্যক্তির হাতে। আর তিনি হচ্ছেন ভ্লাদিমির পুতিন। এবং এখন থেকে যে সব মৃত্যুর ঘটনা ঘটবে তাও তার (পুতিনের) হাতে।’ বইচেঙ্কো আরও বলেন, ‘শহরকে মুক্ত বা স্বাধীন করার কোনো পরিকল্পনাই ছিল না (রুশ সেনাদের)। পরিকল্পনা ছিল কেবল ধ্বংসের।’
মারিউপোল দখলের খবরে বেশ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন পুতিন। তিনি বলেন, মারিউপোল শহরটি ইউক্রেনীয় সেনাদের হাত থেকে ‘স্বাধীন’ করা হয়েছে। ওই অঞ্চলের বৃহত্তম আজোভস্তাল স্টিল প্ল্যান্টেরও দখল নিয়েছে রাশিয়া।
প্রসঙ্গত, গত ২১ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রুশপন্থী বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেন। সেখানে ‘শান্তি রক্ষায়’ সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি। এরপর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। একই সঙ্গে ‘প্রজাতন্ত্র’ দুটিতে রুশ সেনাদের ‘শান্তিরক্ষী’ হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন তিনি। পুতিনের এই পদক্ষেপের পর পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে দিয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহীনিয়ন্ত্রিত ডনবাস অঞ্চলে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্ব ইউক্রেনের ওই অঞ্চলে গত আট বছরের লড়াইয়ে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।
৫৭ দিনের যুদ্ধে ইউক্রেনের একাংশ এখন রাশিয়ার দখলে। আজ চলছে যুদ্ধের ৫৮তম দিন। কিয়েভ থেকে সরে এসে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে শক্তি বৃদ্ধি করেছে রাশিয়া। এখ পুরো ডনবাস অঞ্চল তারা দখলে নেওয়ার লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে রুশ বাহিনীর অভিযান। ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে একের পর এক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো বা অন্য কোনো পশ্চিমা শক্তিধর দেশ সামরিক হস্তক্ষেপ করতে এগিয়ে আসেনি।
যুদ্ধ সম্পর্কিত সর্বশেষ তথ্য
• মারিউপোল সিটি কাউন্সিল আকাশ থেকে তোলা একটি ছবি প্রকাশ করে বলেছে, রাশিয়ার সেনারা ওই শহরের বহু মানুষকে নিকটবর্তী একটি গ্রামে গণকবর দিয়েছে।
• রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তার সেনারা মারিউপোলে ইউক্রেনের সেনাদের আশ্রয়স্থল ঘিরে রেখেছে। সেখানে ৫শর মতো বেসামরিক নাগরিকও আছেন।
• ইউক্রেন নিয়ন্ত্রিত একটি করিডোর ব্যবহার করে মারিউপোলের বিভিন্ন জায়গা থেকে বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ।
• যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, মারিউপোলের পুরোপুরি পতন হয়েছে এমন কোনো প্রমাণ তারা পাননি।
• রাশিয়া বলেছে, ইউক্রেনের দুজন ব্রিটিশ যোদ্ধা এখন তাদের হাতে আছে। তবে তারা ভালো আছে ও তাদের খাদ্য ও পানি দেওয়া হচ্ছে।
এসএ/