অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর অনুমতি ব্রিটিশ আদালতের
বিচারের মুখোমুখি হওয়ার জন্য উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর অনুমতি দিয়েছেন ব্রিটেনের একটি আদালত। যদিও এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল নেবেন বলেও আদালত জানিয়েছেন। তবে জুলিয়ানের আইনজীবীরা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ১৪ দিনের মধ্যে নতুন করে আবেদন করতে পারেন বলেও আদালতের পক্ষ থেকে জানানো হয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ খবর জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ আটকাতে অ্যাসাঞ্জ যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন; কিন্তু গত মাসে সুপ্রিম কোর্ট অ্যাসাঞ্জের ওই আবেদন বাতিল করে দেয়। তারপরই ওয়েস্টমিনিস্টার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সংক্ষিপ্ত শুনানি শেষে বুধবার (২০ এপ্রিল) এই আদেশ দেওয়া হলো।
আদালতের চিফ ম্যাজিস্ট্রেট পল গোল্ডস্প্রিং অ্যাসাঞ্জকে প্রত্যর্পণের আদেশ দেন। তিনি অ্যাসাঞ্জকে বলেন, ‘আইন অনুযায়ী আপনার এই মামলা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানোটা আমার দায়িত্ব।’ তবে অ্যাসাঞ্জ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ পাবেন বলেও জানান চিফ ম্যাজিস্ট্রেট।
শুনানিতে বেলমার্শ কারাগার থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন আ্যাসাঞ্জ। আদালতে শুনানি চলাকালে বাইরে অ্যাসাঞ্জের সমর্থকরাও জড়ো হয়েছিলেন। অ্যাসাঞ্জের স্ত্রী মরিসও আদালতের পাবলিক গ্যালারিতে ছিলেন।
অ্যাসাঞ্জের আইনজীবী মার্ক সামার্স আদালতের চিফ ম্যাজিস্ট্রেটকে বলেছেন, ‘মামলাটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পাঠানো ছাড়া তার হাতে আর কোনো বিকল্প ছিল না। এই মুহূর্তে অ্যাসাঞ্জের দলের পক্ষে নতুন প্রমাণ উপস্থাপনের দ্বার খোলা ছিল না। কিন্তু সেখানে নতুন কিছু অগ্রগতি হয়েছে।’ যুক্তরাষ্ট্রের সাজা এবং তাদের শর্তাবলী সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ‘গুরুত্বপূর্ণ নথি দেওয়া’ হবে বলেও জানান তিনি।
এর আগে গত ডিসেম্বরে যুক্তরাজ্যের একটি উচ্চ আদালত অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের পক্ষে রায় দেয়।
প্রসঙ্গত, ৫০ বছর বয়সী অ্যাসাঞ্জ ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে লন্ডনের উচ্চ নিরাপত্তার বেলমার্শ কারাগারে বন্দি রয়েছেন। সুইডেন সরকারের কাছে হস্তান্তর এড়াতে ২০১২ সালে পালিয়ে লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয় নেন অ্যাসাঞ্জ। ২০১৯ সালে ইকুয়েডরে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলে দূতাবাস ছাড়তে হয় অ্যাসাঞ্জকে। পরে দূতাবাসের বাইরে অপেক্ষারত লন্ডনের পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। তখন থেকেই বেলমার্শ কারাগারে আছেন অ্যাসাঞ্জ।
একটি মামলায় জামিনের শর্ত লঙ্ঘন ও আদালতে হাজিরা না দেওয়ায় গ্রেপ্তার হন তিনি। ওই মামলার সাজার মেয়াদও ফুরিয়েছে। তাই যুক্তরাষ্ট্র অ্যাসাঞ্জকে সে দেশে নিয়ে বিচার করতে চাইছে।
উইকিলিকস প্রতিষ্ঠা ও ওয়েবসাইটে যুক্তরাষ্ট্রসহ দেশ-বিদেশের লাখো গোপন ও স্পর্শকাতর সামরিক ও কূটনৈতিক তথ্য ফাঁস করে বিভিন্ন সরকারকে ক্ষেপিয়ে তোলেন অস্ট্রেলীয় সম্পাদক, প্রকাশক ও তথ্য অধিকারকর্মী অ্যাসাঞ্জ।
মার্কিন নেতৃত্বে ইরাক ও আফগানিস্তানে চালানো আগ্রাসন সংক্রান্ত পাঁচ লাখ গোপন সামরিক নথি ফাঁস করার অভিযোগ উঠে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে। আর যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়া হলে গোপনীয় সামরিক ও কূটনৈতিক নথি ফাঁসের জন্য তার বিচার করা হবে। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রে তাকে অপরাধীও ঘোষণা করা হয়। তার বিরুদ্ধে ১৭টি গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগসহ ১৮টি অভিযোগ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। সব অভিযোগ প্রমাণে ১৭৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে তার।
এসএ/