একনজরে ইমরানের উত্থান-পতন
বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার-অধিনায়ক হিসেবে নিজের দেশকে জিতিয়েছিলেন বিশ্বকাপের ট্রফি। ১৯৯২ সালের সেই বিশ্বকাপের কয়েক বছর পরই নিজের রাজনৈতিক দল চালু করেছিলেন ইমরান খান। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর ২০১৮ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন এই প্রাক্তন ক্রিকেটার। তবে পাকিস্তানের ‘ঐতিহ্য’ বজায় রেখে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই ইমরানকে ছাড়তে হলো গদি।
১৯৯৬ সালে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ইমরান খান। তবে প্রাথমিকভাবে পাকিস্তানের রাজনীতিতে খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারেনি তার দল। ১৯৯৭ ও ২০০২ সালে ইমরানের দল পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে খুব বাজেভাবে হেরে যায়।
ক্রিকেটার হিসেবে অবসর নেওয়ার আগেই ইমরান খানকে বেশ কয়েকবার রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। ১৯৮৭ সালে পাকিস্তানের তত্কালীন রাষ্ট্রপতি মুহাম্মদ জিয়া-উল-হক ইমরান খানকে পাকিস্তান মুসলিম লিগে (পিএমএল) যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেন। নওয়াজ শরিফও ইমরানকে তার দলে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে ইমরান উভয় প্রস্তাবই প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
ইমরান খানের দল ২০০৮ সালের নির্বাচন বয়কট করেছিল। কারচুপির অভিযোগ তুলে ইমরান নির্বাচন বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন। এরপর ২০১৩ সালের নির্বাচনে পিটিআই পাকিস্তানের অন্যতম শক্তিশালী দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। ২০১৩ সালের নির্বাচনে পিটিআই ভোটের নিরিখে পাকিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল এবং জয়ী আসনের নিরিখে তৃতীয় বৃহত্তম দল হয়।
বিরোধী দলের নেতা হিসাবে ইমরান খান জনসাধারণের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরে ‘আজাদি মার্চ’ শুরু করেছিলেন ২০১৪ সালে। সরকারের বিরোধিতায় ১২৬ দিন ধরে ইসলামাবাদে ধরনায় বসেছিলেন ইমরান ও তাঁর দলের কর্মী, সমর্থকরা।
২০১৮ সালে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে ইমরান খানের দল একক বৃহত্তম দল হিসেবে উঠে আসে। সেই নির্বাচনে তারা ১৪৯টি আসনে জয়লাভ করে। শরিকদের সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠন করেন ইমরান। তা ছাড়া পাঞ্জাব, খাইবার পাখতুনখোয়া, গিলগিট বালতিস্তান এবং কাশ্মীর বিধানসভায় ইমরান খানের দল এখন সংখ্যাগরিষ্ঠ।
ইমরান খান তার শপথের সময় বড় বড় সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। পাকিস্তানকে একটি মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে নীতিমালা প্রণয়ন করবেন বলে দাবি করেছিলেন। তবে তিনি পাকিস্তানের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে ব্যর্থ হন। দেশে জঙ্গি কার্যকলাপ বাড়তে থাকে। বেকারত্বের হার, মূল্যস্ফীতির হারও ঊর্ধ্বমুখী। আল-কায়দা জঙ্গি ওসামা বিন লাদেনকে ‘শহিদ’ আখ্যা দিয়ে বিতর্কে জড়ান। আফগানিস্তানের পালাবদলের সময় তালেবানের পক্ষে অবস্থান নেন ইমরান।
গত কয়েক বছরে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। পাকিস্তানে চীনের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা, সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করতে দেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সংযোগের কারণে মার্কিন তোপের মুখেও পড়তে হয় ইমরানকে। যে কারণে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গেও সম্পর্কের ইমরানের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। যার প্রকাশ ঘটে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর। ওই সময়ে ইমরান মস্কো সফর করে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে সমর্থন দিয়েছেন। অথচ সেনাপ্রধান রাশিয়ার ওই অভিযানকে ‘ক্ষমার অযোগ্য’ বলে বক্তব্য দিয়েছেন। পাকিস্তানে রাজনৈতিক সংকট শুরুর পর দেশটির সেনাবাহিনী ইমরানের উপর থেকে সমর্থন সরিয়ে নেয়।
এই আবহে গতরাতে অনাস্থা ভোটে হেরে গদিচ্যুত হন ইমরান খান। এর আগে তিনি সরাসরি এক মার্কিন কূটনীতিক ডোনাল্ড লুর নাম নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন যে, তার রাশিয়া সফরের কারণে যুক্তরাষ্ট্র তার সরকার উৎখাত করতে চেয়েছে। এ অজুহাতে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোট খারিজ করে দেওয়া হয়। মামলা পৌঁছায় সুপ্রিম কোর্টে। শেষে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আস্থা ভোট অনুষ্ঠিত হয়। ক্ষমতা হারান ইমরান। তবে এর আগে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে পুরো ঘটনাকে ‘বিদেশি ষড়যন্ত্র’ উল্লেখ করে বলেছেন, ক্ষমতা ছাড়তে হলেও তিনি হাল ছেড়ে দিচ্ছেন না। লড়াই চালিয়ে যাবেন শেষ পর্যন্ত।
এসএ/