অনাস্থা ভোটে হেরে ইমরান খানের রেকর্ড
পাকিস্তানের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত কোনো ভোটে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী পূর্ণ মেয়াদ পার করতে পারেননি। ইমরান খানও এর বাইরে নন। তবে অনাস্থা ভোটে হেরে যাওয়া প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রেকর্ডের খাতায়ও নাম লেখালেন তিনি। শনিবার (৯ এপ্রিল) মধ্যরাতে অনাস্থা ভোটে হেরে যান তিনি। এর আগে দেশটির ইতিহাসে অনাস্থা ভোটে হেরে কোনো প্রধানমন্ত্রী পদ হারাননি।
অনাস্থা ভোটের অধিবেশনটি পরিচালনা করেন সাবেক স্পিকার আয়াজ সাদিক। বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাবে ইমরানের বিরুদ্ধে ভোট পড়েছে ১৭৪টি। প্রস্তাব পাসের জন্য দরকার ছিল ১৭২ ভোট।
পাকিস্তানের ২২তম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ইমরান খান। তার পতনের মধ্য দিয়ে দেশটির নির্বাচিত একজন প্রধানমন্ত্রীও তার মেয়াদ পূর্ণ করতে পারলেন না। মধ্যরাতেই ইমরান খান ইসলামাবাদের সরকারি বাসভবন ছেড়েছেন।
২০১৮ সালে সামরিক বাহিনীর সহায়তা নিয়ে ক্ষমতায় আসেন ৬৯ বছর বয়সী ইমরান খান। করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে সতেজ করা ও দুর্নীতিমুক্ত পাকিস্তান গড়তে তার ব্যর্থতার অভিযোগ করা হয়েছে।
ফলাফল ঘোষণার পর স্পিকার আয়াজ সাদিক শেহবাজ শরিফকে বক্তৃতা দেওয়ার অনুরোধ জানান। শেহবাজ বলেন, আমরা এই নতুন দিনটি দেখার অপেক্ষায় ছিলাম। সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ।
তিনি আরও বলেন, ‘নতুন সরকার গঠন হলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর কোনো প্রতিশোধ নেওয়া হবে না।’
ইমরানের অনাস্থা ভোটের অধিবেশনটি শনিবার চার বার মূলতবি করা হয়েছিল।
এদিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন শুরু হয়। কিন্তু অনাস্থা ভোটের আগে ইমরান খানের সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে সংসদের ভেতর তুমল হট্টগোলে জাতীয় পরিষদের স্পিকার সাময়িকভাবে অধিবেশন মুলতবি করেন।
এর দুই ঘণ্টা পর আবার অধিবেশন শুরু হয়। পরে দেওয়া হয় যোহরের নামাজের বিরতি। এরপর পুনরায় শুরু হলে আবারও হট্টগোলে বিরতিতে যান স্পিকার। পরে দুদফায় দেওয়া হয় ইফতার ও এশার নামাজের বিরতি। রাত সাড়ে ৯টায় তা আবার শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বিলম্বিত হয়।
শেষমেষ পাকিস্তান সময় শনিবার রাত ১২টা বাজার ১০ মিনিট আগে অনাস্থা ভোট শুরু হয়।
গত ৩ এপ্রিল অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করে দেন জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি। পরে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট।
ওই দিন অনাস্থা প্রস্তাব খারিজের বৈধতা নিয়ে শুনানি গ্রহণ করেন সুপ্রিমকোর্ট। টানা পাঁচ দিনের দীর্ঘ শুনানি শেষে গত বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ ও জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিপক্ষে রায় দেন সর্বোচ্চ আদালত। শনিবার (৯ এপ্রিল) অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটিরও নির্দেশ দেন সুপ্রিম কোর্ট।
অনাস্থা ভোট শুরুর আগে জাতীয় পরিষদের স্পিকার আসাদ কায়সার ও ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি পদত্যাগ করেছেন। তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য কোনো বিদেশি ষড়যন্ত্রে অংশ নিতে পারবেন না।
এসএ/