পারলেন না ইমরান খান
শেষ পর্যন্ত পারলেন না ইমরান খান। ২০১৮ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর মসনদে বসে তিনি যে চমক দেখিয়েছিলেন সেই চমক সবটুকু শুষে নিয়ে এখন তাকে বিদায় নিতে হচ্ছে। জিও নিউজ সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যেই হেলিকপ্টার করে ইসলামাবাদ ছেড়েছেন ইমরান এবং শাহবাজ শরিফ অধিবেশনে বক্তব্য রাখছেন।
রবিবার (১০ এপ্রিল) পাকিস্তানের ইসলামাবাদে পাকিস্তান জাতীয় অধিবেশনে ইমরানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা ভোট শুরু হয়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মানতে স্থানীয় সময় ১২টার আগেই শুরু হয় ভোট প্রক্রিয়া। পরে চার মিনিটের জন্য তা স্থগিত করা হয়। পরে ফের ১২ টা ২০ মিনিটে শুরু হয় ভোট প্রক্রিয়া। সেই অনাস্থা ভোটর লড়াইয়ে অবশেষে হেরে যান ইমরান। অনাস্থা ভোটে ইমরানের বিরুদ্ধে পড়ে ১৭৪ ভোট। প্রস্তাব পাসের জন্য দরকার ছিল ১৭২ ভোট।
ইমরান খান ছিলেন পাকিস্তানের ২২তম প্রধানমন্ত্রী। তার ক্ষমতাচ্যুতির মধ্য দিয়ে দেশটির নির্বাচিত একজন প্রধানমন্ত্রীও তার মেয়াদ পূর্ণ করতে পারলেন না। ইমরান যখন ক্ষমতায় আসেন তখন তার দল ভোট পেয়েছিলো ১৫৫ টি। ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে হাত মিলিয়ে সেই সময় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও বিপদের মুহুর্তে একে একে হাত ছেড়েছে বিরোধীরা।
ক্ষমতা ধরে রাখতে সব চেষ্টাই করেছেন সদ্য সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। দেশটির সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারে, স্থানীয় সময় সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে (বাংলাদেশ সময় বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১টা) পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন অজুহাতে অধিবেশন বারবার পেছান হচ্ছিল। জিয়ো নিউজ জানিয়েছে, ইচ্ছা করেই অধিবেশন বিলম্বিত করা হয়।
নতুন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে শাহবাজ শরিফ
নতুন প্রধানমন্ত্রীর জন্য নাম মনোনীত করতে পাকিস্তানের স্থানীয় সময় অনুযায়ী দুপুর ২টায় ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির অধিবেশন ডাকা হতে পারে বলে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে। পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন শাহবাজ শরিফ। সোমবারই নতুন প্রধানমন্ত্রী বেছে নিতে পারে পাকিস্তান।
গত ৭ মার্চ জাতীয় পরিষদের সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেয় বিরোধী দলগুলো। এরপর ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করেন স্পিকার। প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটির জন্য ৩ এপ্রিল দিন ধার্য করা হয়। কিন্তু বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব ‘অসাংবিধানিক’ ঘোষণা দিয়ে খারিজ করে দেন ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি। একইসঙ্গে অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন তিনি।
টানা ৫ দিনের দীর্ঘ শুনানি শেষে ওই অনাস্থা ভোট খারিজ ও জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করে বৃহস্পতিবার সর্বসম্মতভাবে রায় দেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ৫ সদস্যের বেঞ্চ। একইসঙ্গে অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর শনিবার ভোট গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে সর্বোচ্চ আদালত বলেছেন, অনাস্থা প্রস্তাবের সুরাহা না করা অবধি পার্লামেন্টের অধিবেশন মুলতবি করা যাবে না।
ইমরান খানকে ক্ষমতায় এনেছিল সেনাবাহিনী। ক্ষমতায় আসার মত জনপ্রিয়তা এবং সংখ্যাগরিষ্ঠতা তার ছিল না। কিন্তু সেনাবাহিনীর সমর্থনে ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সেনাবাহিনীর সঙ্গে সেই সম্পর্কটি আর অটুট রাখতে পারেননি। ফলে সেনাবাহিনীও আর তার পাশে নেই। যে কারণে ইমরান খান পাকিস্তানের রাজনীতিতে শেষ পর্যন্ত আর একটি পরিত্যক্ততা বলে বিবেচিত হলেন।
/এএস