ইমরানের ‘ভাগ্য নির্ধারণী’ অধিবেশন: দেড়টা পর্যন্ত মুলতবি
পাকিস্তানের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ইসলামাবাদের স্থানীয় সময় দুপুর সাড়ে ১২টা (বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টা) পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করেছেন স্পিকার আসাদ কায়সার। এর আগে, সকাল সাড়ে ১০টায় এই অধিবেশন শুরু হয়।
কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে অধিবেশন শুরু হয়। এরপর জাতীয় সংগীত ও ফাতেহা পাঠ করা হয়। তবে মুলতবির আগ পর্যন্ত অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন না ইমরান খান।
দিবসের কার্যসূচিতে চার নম্বরে আছে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব। অধিবেশনে বিরোধী দলগুলোর সব আইনপ্রণেতা অংশ নিয়েছেন। তবে শুরুতে সরকারি দলের আইনপ্রণেতাদের মধ্যে কয়েকজনকে অধিবেশনে দেখা যায়।
সুপ্রিম কোর্টের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে আজকের অধিবেশনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট অনুষ্ঠিতের কথা রয়েছে। ফলে সব চোখ এখন দেশটির জাতীয় পরিষদের দিকে স্থির।
ভোটে হারলে ক্ষমতাচ্যুত হবেন ইমরান খান। আর জিতে গেলে এ যাত্রায় টিকে যাবেন তিনি।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, নিম্নকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে এমন ধারণা সত্ত্বেও ক্ষমতাসীন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এখনো অনড় অবস্থানে থাকার কথা জানিয়ে বলছে, তারা বিরোধীদের কাছে এত সহজে রাজনীতির মাঠ ছেড়ে দেবে না। এ ছাড়া, বিরোধীদের সব পরিকল্পনা কঠিন করে তোলারও অঙ্গীকার করেছে পিটিআই। তা ভোটের প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে হোক, কিংবা বিরোধীদের মনোনীত প্রার্থী শাহবাজ শরিফকে নির্বাচনে যেতে বাধা দিয়ে হোক।
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী জানান, সরকারের পক্ষ থেকে আজ জাতীয় পরিষদে ‘হুমকিপূর্ণ’ বিষয়গুলো উত্থাপন করা হবে এবং এসব বিষয়ে স্পিকারের কাছে বিতর্কের জন্য আহ্বান জানাবে।
গতকাল রাতে এআরওয়াই নিউজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, অনাস্থা ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়টি আজ আলোচ্যসূচিতে থাকলেও, সেটি সম্ভবত শনিবার অনুষ্ঠিত হবে না।
ফাওয়াদ চৌধুরী বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট ৯ এপ্রিলে ডাকা অধিবেশনে অনাস্থা ভোট করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন, তার মানে এই নয় যে ভোট একই দিনে হতে হবে।’
প্রসঙ্গত, গত ৭ মার্চ জাতীয় পরিষদের সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেয় বিরোধী দলগুলো। এরপর ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করেন স্পিকার। প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটির জন্য ৩ এপ্রিল দিন ধার্য করা হয়। কিন্তু বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব ‘অসাংবিধানিক’ ঘোষণা দিয়ে খারিজ করে দেন ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি। একইসঙ্গে অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন তিনি।
টানা ৫ দিনের দীর্ঘ শুনানি শেষে ওই অনাস্থা ভোট খারিজ ও জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করে বৃহস্পতিবার সর্বসম্মতভাবে রায় দেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ৫ সদস্যের বেঞ্চ। একইসঙ্গে অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর শনিবার ভোট গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে সর্বোচ্চ আদালত বলেছেন, অনাস্থা প্রস্তাবের সুরাহা না করা অবধি পার্লামেন্টের অধিবেশন মুলতবি করা যাবে না।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান শুক্রবার (৮ এপ্রিল) জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে বলছেন, তিনি পাকিস্তানে একটি ‘বিদেশি সরকার’ প্রতিষ্ঠা মেনে নেবেন না। যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে তাহলে তিনি জনগণের শরণাপন্ন হবেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এমন কোনো জাতি নই, যাকে টিস্যু পেপারের মতো ব্যবহার করা যেতে পারে। পাকিস্তান কোনো দেশের সঙ্গে একতরফা সম্পর্ক চায় না।’
জিও নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাবের বিষয়ে নিজের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘আমি কখনোই ‘আমদানি করা সরকার’ মেনে নেব না এবং আমি জনগণের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছি।’
এসএ/