কেমন হবে পাকিস্তানের নতুন সরকার
পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তে জাতীয় পরিষদ পুনর্বহাল ও প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট হওয়ার পর নতুন কেন্দ্রীয় সরকার কেমন হবে, তা নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা সেরেছেন দেশটির বিরোধীদলীয় নেতারা। এতে তারা নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন নিয়েও কথা বলেন। বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের বিশ্লেষণে এমন খবর দিয়েছে।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটি জাতীয় সরকারের আদলে নতুন কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করা হবে। যাতে সব বিরোধী দলেরই অংশগ্রহণ থাকবে।
নতুন সরকার গঠন হলে তার মেয়াদ হবে অন্তত ছয় মাস কিংবা এক বছর। এ সময়ে নির্বাচনী সংস্কারসহ জবাবদিহি আইনসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু আইন প্রণয়ন করা হবে।
একটি জাতীয় নির্বাচনের আগে সংসদীয় আসনের পুনর্বিন্যাস ও সীমানা নির্ধারণে জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে (ইসিপি) পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হবে। নতুন প্রধানমন্ত্রী প্রার্থিতায় এগিয়ে আছেন জাতীয় পরিষদে বিরোধী দলীয় নেতা শাহবাজ শরিফ। শপথ নেওয়ার পর তার সরকারের অগ্রাধিকারগুলো তুলে ধরবেন তিনি।
সম্ভাব্য কেন্দ্রীয় সরকারের অগ্রাধিকারগুলোর মধ্যে রয়েছে, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নতুন অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারণ করা ও মুদ্রার দরপতন কমিয়ে আনা। যুদ্ধ নয়, শান্তি প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্রবিন্দু করে সব দেশের সঙ্গে সমমর্যাদার সম্পর্ক স্থাপনে পররাষ্ট্র নীতিও পর্যালোচনা করা হবে। এছাড়া সাধারণ জনগণের জন্য ত্রাণ প্যাকেজসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
বিরোধী দলগুলোর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মামলাগুলোর অবসানে আইনি প্রক্রিয়া নেওয়া হবে। প্রেসিডেন্ট ও চার প্রদেশের গভর্নর স্থলাভিষিক্ত করার ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পথ বেছে নেওয়া হবে।
এ ছাড়া ইমরান খান সরকারের নেওয়া সব সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা ও পরিবর্তন করার কথাও ভাবছেন বিরোধী দলীয় নেতারা। রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নওয়াজ শরিফ ও ইশহাক ধরকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দ।
এর আগে পাকিস্তানের পার্লামেন্ট পুনর্বহাল করেছেন সুপ্রিম কোর্ট। এখন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি হবে। এ জন্য শনিবার দিন ধার্য করেছেন সর্বোচ্চ আদালত।
পাঁচ দিনের শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়ালের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে বৃহস্পতিবার রাতে এ রায় দেন।
সর্বোচ্চ আদালত বলেন, পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে প্রেসিডেন্টকে পরামর্শ দেওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই প্রধানমন্ত্রীর। এ সংক্রান্ত সব সিদ্ধান্ত বাতিল ঘোষণা করা হলো। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবকে অসাংবিধানিক বলে ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরির খারিজ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তও বাতিল করেছেন আদালত।
শনিবার (৯ এপ্রিল) স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসবে জানিয়ে সর্বোচ্চ আদালত বলেন, অনাস্থা প্রস্তাবের সুরাহা না করে অধিবেশন মুলতবি করা যাবে না।
ক্রিকেট মাঠ থেকে রাজনীতিতে এসে প্রধানমন্ত্রী হওয়া ইমরান খানকে এখন আইনসভায় আস্থার প্রমাণ দিতে হবে। যদিও সেখানে তার হার আগেই এক প্রকার নিশ্চিত হয়ে আছে।
৩৪২ আসনের পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে অন্তত ১৭৩ জন সদস্যের সমর্থন পেতে হবে; কিন্তু তার বিরোধীরা অনাস্থা প্রস্তাব তোলার আগেই ১৭৭ জন সদস্যের সমর্থন জড়ো করে রেখেছে।
এসএ/