বুচায় তিন শতাধিক নিহতের দাবি জেলেনস্কির
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর ব্যাপকভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে রাজধানীর নিকটবর্তী বুচা শহর। সেখানে তিন শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
গত ৩০ মার্চ বুচা শহর ত্যাগ করে রুশ সেনারা। পরে শহরটির নিয়ন্ত্রণ নেয় ইউক্রেনের সেনাবাহিনী। বুচা ছাড়াও রাশিয়ার কাছ থেকে নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়া অন্যান্য শহরে আরও বেশি মানুষ নিহত হয়ে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি স্থানীয় সময় সোমবার (৪ এপ্রিল) এ খবর জানিয়েছে।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ধ্বংস হয়েছে বাড়িঘর, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাস্তাঘাট। সড়কে পড়ে আছে গোলার আঘাতে বিধ্বস্ত সাঁজোয়া যান। চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মরদেহ। ভেঙে পড়েছে সেতু। চারপাশে ধ্বংসযজ্ঞের নানা ছবি।
যুদ্ধ শুরুর পর প্রথমবারের মতো বিধ্বস্ত বুচা শহর পরিদর্শন করে জেলেনস্কি দাবি করেন, শহরটিতে বেসামরিক নাগরিকদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। নিরীহ মানুষদের হত্যার জন্য রাশিয়াকে জবাবদিহি করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জেলেনস্কি বলেন, ‘সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে, রাশিয়া বেসামরিক নাগরিক নিহতের সব প্রমাণ নষ্টের চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু তাদের জবাবদিহি করতে হবে। দনবাস ও খারকিভে বহু সেনা জড়ো করছে রাশিয়া। আমরা জানি তারা সেখানে কী করতে যাচ্ছে। রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে। পাশাপাশি ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করতে আবারও পশ্চিমা বিশ্বের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি আমি।’
এদিকে ইউক্রেনে বেসামরিক নাগরিক হত্যার কারণে রাশিয়াকে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা ইউএনএইচসিআর থেকে বহিষ্কারের আবেদন করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জেন সাকি।
রাশিয়ার ওপর যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেছেন, শিগগিরিই রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে এ বিষয়ে এরইমধ্যে আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মস্কোর বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি বিবেচনা করছি আমরা। পুরো ইউক্রেনে হামলা না চালিয়ে রাশিয়া এখন দেশটির পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে অভিযান চালাতে সেনা জড়ো করছে।
তবে পশ্চিমাদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে মস্কো। এক সংবাদ সম্মেলনে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, সব মিথ্যাচারের জবাব দেওয়া হবে। শিগগিরই সত্য উন্মোচন করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত ২১ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রুশপন্থী বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেন। সেখানে ‘শান্তি রক্ষায়’ সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি। এরপর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। একই সঙ্গে ‘প্রজাতন্ত্র’ দুটিতে রুশ সেনাদের ‘শান্তিরক্ষী’ হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন তিনি। পুতিনের এই পদক্ষেপের পর পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে দিয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহীনিয়ন্ত্রিত ডনবাস অঞ্চলে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্ব ইউক্রেনের ওই অঞ্চলে গত আট বছরের লড়াইয়ে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।
৪০ দিনের যুদ্ধে ইউক্রেনের একাংশ এখন রাশিয়ার দখলে। আজ চলছে যুদ্ধের ৪১তম দিন। রাজধানী কিয়েভ ঘিরে রেখেছে রাশিয়ার বিশাল সেনাবহর। ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে একের পর এক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো বা অন্য কোনো পশ্চিমা শক্তিধর দেশ সামরিক হস্তক্ষেপ করতে এগিয়ে আসেনি।
এসএ/