প্রেসিডেন্টকে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার পরামর্শ ইমরানের
জাতীয় পরিষদ ভেঙে দিতে প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভিকে পরামর্শ দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। আজ রবিবার (৩ এপ্রিল) জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এই আহ্বান জানান বলে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়।
বিরোধী দল পাকিস্তান মুসলিম লিগের (পিএমএল-এন) সভাপতি শেহবাজ শরীফ বলছেন, দেশকে বিভক্ত করার চেষ্টা করছেন ইমরান খান। দেশকে ‘গৃহযুদ্ধের’ দিকে ঠেলে দিচ্ছেন ইমরান, এমন মন্তব্যও করেছেন শেহবাজ। বিরোধী দলগুলো এখন সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবে বলে জানিয়েছে।
সংবিধানিক প্রক্রিয়ায় অনাস্থা ভোটকে ইমরান খানের ‘যুক্তরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্র’ হিসেবে অভিহিত করা বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও এর সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে অনেক সখ্য ছিল তার। তিনি বলেন, ‘এখন হঠাৎ করে অনাস্থা ভোটকে যুক্তরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্র হিসেবে প্রচার করছেন তিনি।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন বিরোধীরা সুপ্রিম কোর্টে যাবেন। তবে প্রেসিডেন্ট যদি পার্লামেন্ট ভেঙে দেন তাহলে আগাম নির্বাচন হতে পারে। সংবিধান অনুযায়ী, এই সময়কালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইমরান খানই ক্ষমতায় থাকবেন। ইমরান খান আগেই জানিয়েছেন, এ সময়ে তিনি অবস্থান করবেন প্রধানমন্ত্রী হাউসে। বিশেষ পরিস্থিতি সৃষ্টি না হলে তিনি সেখানেই থাকবেন।
এর আগে, জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকারের সভাপতিত্বে রবিবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টার দিকে অধিবেশন শুরু হয়। সেখানে বিরোধীদের উত্থাপিত অনাস্থা প্রস্তাবকে তিনি ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়েছেন।
ষড়যন্ত্রের কারণে এই প্রস্তাব তোলা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন কাশিম সুরি। এরপরই অধিবেশন মুলতবি করেন তিনি। এক পর্যায়ে বিরোধী দলগুলোর তোপের মুখে পড়তে হয় তাকে।
এর আগে জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের আগে সকালে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে রাজধানী ইসলামাবাদে ১৪৪ ধারা জারি করে জেলা প্রশাসন। নেয়া হয় বাড়তি নিরাপত্তা।
ইমরান খানের বিরুদ্ধে দেশ শাসনে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ এনে গত ৮ মার্চ অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেয় বিরোধী দলগুলো। এ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা ও ভোটাভুটির জন্য অধিবেশন ডাকতে স্পিকার আসাদ কায়সারের প্রতি লিখিত আবেদন জানান তারা।
পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী, লিখিত আবেদন জমার ১৪ দিনের মধ্যে স্পিকারকে আলোচনার জন্য অধিবেশন ডাকতে হবে। সে অনুযায়ী, ২২ মার্চের মধ্যে অধিবেশন আয়োজন করার কথা ছিল।
তবে ২২ মার্চ থেকে জাতীয় পরিষদে ওআইসির দুই দিনব্যাপী পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন শুরু হওয়ায় তা আর হয়নি। এরপরই অধিবেশনের তারিখ পেছায়।
নিম্নকক্ষে ৩৪২ আসনের মধ্যে বিরোধীদের দখলে আছে ১৬৩টি। বাকি ১৭৯ আসন। এর মধ্যে ইমরানের দলের আছে ১৫৫টি, চার জোট সঙ্গীর ২০টি।
অনাস্থা প্রস্তাবে টিকে থাকতে হলে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) ইমরান খানকে অন্তত ১৭২ সদস্যের সমর্থন পেতে হতো। এর মধ্যে তিন জোটসঙ্গী মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট পাকিস্তান (এমকিউএম-পি), পাকিস্তান মুসলিম লিগ-কায়েদ (পিএমএল-কিউ) এবং বালুচিস্তান আওয়ামী পার্টি (বিএপি) বিরোধী শিবিরে যোগ দেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে।
দুর্নীতির দায়ে নওয়াজ শরিফ অভিশংসিত হওয়ার পর ২০১৮ সালে চার দলের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসেন ইমরান খান। ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত তার সরকারের মেয়াদ রয়েছে।
এর আগে তিন বছরের মাথায় গত মার্চে অনাস্থা ভোট হয় ইমরানের বিরুদ্ধে। সেবার সুবিধাজনক অবস্থানে থাকায় অনায়াসেই উতরে গিয়েছিলেন তিনি। তবে এবার অনাস্থা ভোটের আগে ইমরান খান সাফ জানিয়ে দেন, ভোটে যা-ই হোক, পদত্যাগ করবেন না তিনি।
এসএ/