ইউক্রেনে জৈব ও রাসায়নিক অস্ত্রে বিনিয়োগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র
ইউক্রেনে অত্যাধুনিক জৈব ও রাসায়নিক অস্ত্র তৈরি প্রকল্পে সহায়তার কথা স্বীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার (১ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি স্বীকার করে হোয়াইট হাউস। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
এ সম্পর্কিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হোয়াইট হাউস প্রেস সচিব জেন সাকি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা এই প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ ইউক্রেনে পাঠিয়েছিলাম। এর কারণ, আমাদের শঙ্কা ছিল–রাশিয়া যে কোনো সময় ইউক্রেনে জৈব বা রাসায়নিক অস্ত্রের হামলা চালাতে পারে।’
সাকি আরও দাবি করেন, ‘সম্ভাব্য সেই হামলা থেকে ইউক্রেনের সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই দেশটিতে জৈব ও রাসায়নিক অস্ত্র নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরুর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল এবং এ বিষয়ক সহায়তা দেওয়া হয়েছিল।’
তবে রাশিয়া ইউক্রেনে জৈব বা রাসায়নিক অস্ত্রের হামলা করতে পারে–এমন কোনো নিশ্চিত তথ্য তিনি জানাননি। গত সপ্তাহে দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনীর এক কর্মকর্তা জানান, ইউক্রেনে রাশিয়া জৈব বা রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে–এমন কোনো প্রমাণ তারা এখনও পায়নি যুক্তরাষ্ট্র।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের বহু আগে থেকেই মস্কো অভিযোগ করে আসছে যে, ইউক্রেনকে অত্যাধুনিক জৈব ও রাসায়নিক অস্ত্র তৈরিতে সহায়তা করছে যুক্তরাষ্ট্র। রুশ অভিযান শুরু হওয়ার পর জরুরি ভিত্তিতে এসব গবেষণাগার ধ্বংসের নির্দেশ দেয় ইউক্রেন সরকার। এর ফলে মস্কোর সন্দেহ আরও দৃঢ় হয়।
অভিযানের মধ্যেই গত ১২ মার্চ এ বিষয়ক দু’টি নথি প্রকাশ করে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, ২০০৫ সাল থেকে ইউক্রেনের জৈব ও রাসয়ানিক অস্ত্র প্রকল্পে অর্থায়ন করছে যুক্তরাষ্ট্র।
ওয়াশিংটন এবং কিয়েভ অবশ্য বরাবরই মস্কোর এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কিন্তু রাশিয়া সেই নথি উদ্ঘাটনের পর ইউক্রেনে গবেষণাগার নির্মাণে ওয়াশিংটনের অর্থায়নের ব্যাপারটি স্বীকার করেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড। তবে সেসব গবেষণাগারে জৈব অস্ত্র নিয়ে কোনো গবেষণা হতো না বলে দাবি করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ২১ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রুশপন্থী বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেন। সেখানে ‘শান্তি রক্ষায়’ সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি। এরপর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। একই সঙ্গে ‘প্রজাতন্ত্র’ দুটিতে রুশ সেনাদের ‘শান্তিরক্ষী’ হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন তিনি। পুতিনের এই পদক্ষেপের পর পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে দিয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহীনিয়ন্ত্রিত ডনবাস অঞ্চলে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্ব ইউক্রেনের ওই অঞ্চলে গত আট বছরের লড়াইয়ে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।
৩৮ দিনের যুদ্ধে ইউক্রেনের একাংশ এখন রাশিয়ার দখলে। আজ চলছে যুদ্ধের ৩৯তম দিন। রাজধানী কিয়েভ ঘিরে রেখেছে রাশিয়ার বিশাল সেনাবহর। ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে একের পর এক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো বা অন্য কোনো পশ্চিমা শক্তিধর দেশ সামরিক হস্তক্ষেপ করতে এগিয়ে আসেনি।
এসএ/