ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে শান্তি আলোচনার মধ্যেও চলছে হামলা
কয়েক দফা শান্তি আলোচনার পরও ইউক্রেনে অব্যাহত রয়েছে রুশ হামলা। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, শুক্রবার (১ এপ্রিল) ইউক্রেনের তৃতীয় বৃহত্তম শহর ওডেসার বেসামরিক এলাকায় অন্তত তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। কিয়েভের দাবি, ক্রিমিয়া থেকে ওই ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। তবে হামলায় হতাহতের বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু জানানো হয়নি।
এদিকে রেড ক্রস জানিয়েছে, যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউক্রেনের মারিউপোল শহরে রুশ হামলা অব্যাহত থাকায় শহরটি থেকে সীমিত সংখ্যক বেসামরিক নাগরিককে নিরাপদে বের করে আনা সম্ভব হয়েছে। আর এদিন পুরো ইউক্রেনে মাত্র ছয় হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়। এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৪০ লাখের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে প্রতিবেশী দেশগুলোতে। যা ইউক্রেনের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ।
একদিকে যেমন রুশ সেনারা অভিযান অব্যাহত রেখেছে, অন্যদিকে পুনরায় ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরের দখল ফিরে পাওয়ার দাবি করছে কিয়েভ। শুক্রবার কিয়েভের কাছের একটি শহর বুচার নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার দাবি করেছেন শহরটির মেয়র।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, ইউক্রেনে রাসায়নিক হামলা চালানোর আশঙ্কায় দেশটিতে প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জাম পাঠানো হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র জেন সাকি।
ইউক্রেনে চলমান রুশ সেনা অভিযানের মুখে কিয়েভ সফর করেছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রধান রবার্তা মেটসোলা। এ সময় তিনি দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
এদিকে ইউক্রেনের বিভিন্ন এলাকা থেকে রুশ সেনারা সরতে শুরু করেছে বলে দাবি করেছে মস্কো। তাদের এমন দাবির পর শুক্রবার নতুন স্যাটেলাইট ছবি প্রকাশ করেছে মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মাক্সার। এতে দেখা যায়, ইউক্রেনের আন্তোনভ বিমানবন্দর থেকে সেনা সরঞ্জাম ও সামরিক যান সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। যদিও ন্যাটো দাবি করেছে, সেনা সরিয়ে নিচ্ছে না রাশিয়া। এক জায়গার সেনা অন্য জায়গায় নিয়ে নিজেদের অবস্থান আরও দৃঢ় করছে তারা।
প্রসঙ্গত, গত ২১ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রুশপন্থী বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেন। সেখানে ‘শান্তি রক্ষায়’ সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি। এরপর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। একই সঙ্গে ‘প্রজাতন্ত্র’ দুটিতে রুশ সেনাদের ‘শান্তিরক্ষী’ হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন তিনি। পুতিনের এই পদক্ষেপের পর পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে দিয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহীনিয়ন্ত্রিত ডনবাস অঞ্চলে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্ব ইউক্রেনের ওই অঞ্চলে গত আট বছরের লড়াইয়ে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।
৩৭ দিনের যুদ্ধে ইউক্রেনের একাংশ এখন রাশিয়ার দখলে। আজ চলছে যুদ্ধের ৩৮তম দিন। রাজধানী কিয়েভ ঘিরে রেখেছে রাশিয়ার বিশাল সেনাবহর। ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে একের পর এক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো বা অন্য কোনো পশ্চিমা শক্তিধর দেশ সামরিক হস্তক্ষেপ করতে এগিয়ে আসেনি।
এসএ/