এবার পত্রিকা ছাপানো বন্ধ শ্রীলঙ্কায়
আর্থিক দুর্দশায় বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কা। কয়েকদিন আগে কাগজের সংকটে পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়। এবার এই সংকটে পত্রিকা ছাপানোও বন্ধ হয়ে পড়েছে। শনিবার (২৬ মার্চ) পত্রিকা প্রকাশ করতে পারেনি শ্রীলঙ্কার প্রথম সারির দুটি পত্রিকা। ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআই এ খবর জানিয়েছে।
অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে অন্যসব প্রয়োজনীয় উপকরণের পাশাপাশি কাগজের দাম বেড়ে গেছে শ্রীলঙ্কায়। নিউজ প্রিন্ট সংকট ও মূল্যবৃদ্ধির কারণে ইংরেজি দৈনিক দ্য আইল্যান্ড ও তার সহ-প্রতিষ্ঠান সিংহলিজ দৈনিক দিবায়িনা পত্রিকা ছাপানো বন্ধ করে দিয়েছে। দেশটির ইতিহাসে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের সবচেয়ে বড় সংকটের কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে জানা যায়।
পত্রিকা দুটির প্রধান প্রতিষ্ঠান উপালি নিউজপেপার লিমিটেড এক বিবৃতিতে বলেছে, আমরা দুঃখের সঙ্গে আমাদের পাঠকদের জানাচ্ছি যে নিউজ প্রিন্ট সংকটের কারণে পরবর্তী নোটিশ না দেওয়া পর্যন্ত দ্য আইল্যান্ডের ছাপা সংস্করণ প্রকাশ বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছি। তবে আমাদের অনলাইন মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হবে। এখন থেকে পত্রিকাটি ই-পেপার হিসেবে প্রকাশিত হবে। ১৯৮১ সালে যাত্রা শুরু করে দ্য আইল্যান্ড পত্রিকা। এতদিন সুনামের সাথে খবর প্রকাশ করে আসছিল তারা।
দেশটির আয়ের একটি বিশাল অংশ আসে পর্যটন খাত থেকে। করোনার মহামারির কারণে পর্যটন খাত ও প্রবাসী আয়ে ধাক্কা খাওয়ায় দেশটির ইতিহাসে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের সবচেয়ে বড় সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। এই মাসের শুরুর দিকে সরকার মার্কিন ডলারের বিপরীতে রুপি বিনিময়ের ক্ষেত্রে ভাসমান মুদ্রানীতি গ্রহণ করলে নিউজপ্রিন্ট আমদানির খরচ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়ে যায়।
১৯৪৮ সাল অর্থাৎ স্বাধীনতার পর থেকে এমন চরম আর্থিক সংকটের মুখে পড়তে হয়নি শ্রীলঙ্কাকে। দেশজুড়ে চলছে চরম হাহাকার। অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন অনেকে। দেশের রিজার্ভে অর্থ নেই বললেই চলে। সব মিলিয়ে তীব্র হাহাকার ও অরাজকতা চলছে শ্রীলঙ্কায়। খাদ্যসামগ্রী কিনতে মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। জ্বালানি সংকটের কারণে হাজারো মানুষ ফিলিং স্টেশনের সামনে কয়েক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। বিদ্যুৎ ঘাটতির ফলে প্রতিদিন দীর্ঘ সময় ধরে চলছে লোডশেডিং। এ অবস্থায় পাশের বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। ১৯৮৯ সালে গৃহযুদ্ধের সময় যেভাবে মানুষ পালিয়েছিল এবারও সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় সংকটে শ্রীলঙ্কা মারাত্মক অর্থনৈতিক ও জ্বালানি সংকটে পড়েছে। মুদ্রা বিনিময় সংকটের কারণে আমদানি বিধিনিষেধ থাকায় সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে শ্রীলঙ্কা। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে বলেছেন, তার সরকার সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সঙ্গে কাজ করবে।
এসএ/