ইউক্রেনে আবারও রাশিয়ার হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
ইউক্রেনে আবারও হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। সামরিক অভিযান শুরুর পর এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো রুশ বাহিনী এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাল। রবিবার (২০ মার্চ) ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর একটি জ্বালানি তেল মজুত স্থাপনা লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয়। এতে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে স্থাপনাটি।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, রবিবার (২০ মার্চ) ইউক্রেনের ‘কিনজাল’ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় রাশিয়ার সেনারা। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, শব্দের চেয়ে ১০ গুণ গতির এই কিনজাল ক্ষেপণাস্ত্রের হামলায় ইউক্রেন সেনাবাহিনীর একটি স্থাপনা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।
শনিবার (১৯ মার্চ) ও রবিবার (২০ মার্চ) ইউক্রেন সেনাবাহিনীর বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। সফলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে ক্ষেপণাস্ত্রগুলো। এর মধ্যে শনিবারের হামলায় একটি প্ল্যান্ট পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। এই প্ল্যান্টে যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত ইউক্রেনের সাঁজোয়া যানগুলো মেরামত করা হতো। আর রবিবার হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের হামলায় একটি তেল মজুতের স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে।
রয়টার্স জানায়, ২০১৪ সালে দখলকৃত ক্রিমিয়ার আকাশসীমা থেকে ইউক্রেনে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে রুশ সেনাবাহিনী। শব্দের চেয়ে ১০ গুণ দ্রুত চলতে পারে রাশিয়ার তৈরি নতুন হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র কিনজাল। ফাঁকি দিতে পারে বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকেও। রাশিয়ার তৈরি এই ক্ষেপণাস্ত্রের গতি উঠতে পারে ঘণ্টায় সাড়ে ১২ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত। সর্বোচ্চ ২ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুল আঘাত হানতে পারে এটি।
৮ মিটার বা ২৬ ফুট লম্বা এই অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্রের ওজন প্রায় ৪ হাজার ৩০০ কেজি। ২০১৮ সালে এই ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির বিষয়টি নিশ্চিত করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সে সময় এটিকে যেকোনো যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য সবচেয়ে আদর্শ অস্ত্র হিসেবে আখ্যা দেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ২১ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রুশপন্থী বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেন। সেখানে ‘শান্তি রক্ষায়’ সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি। এরপর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। একই সঙ্গে ‘প্রজাতন্ত্র’ দুটিতে রুশ সেনাদের ‘শান্তিরক্ষী’ হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন তিনি। পুতিনের এই পদক্ষেপের পর পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে দিয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহীনিয়ন্ত্রিত ডনবাস অঞ্চলে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্ব ইউক্রেনের ওই অঞ্চলে গত আট বছরের লড়াইয়ে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।
২৫ দিনের যুদ্ধে ইউক্রেনের একাংশ এখন রাশিয়ার দখলে। আজ চলছে যুদ্ধের ২৬তম দিন। রাজধানী কিয়েভ ঘিরে রেখেছে রাশিয়ার বিশাল সেনাবহর। ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে একের পর এক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো বা অন্য কোনো পশ্চিমা শক্তিধর দেশ সামরিক হস্তক্ষেপ করতে এগিয়ে আসেনি।
এসএ/