পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিদায়ের ঘড়ি টিক টিক করে বাজছে
আগামীকাল সোমবার জাতীয় পরিষদের স্পিকারের কাছে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করতে পারে ঐক্যবদ্ধ বিরোধী জোট। ধারণা করা হচ্ছে পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী ইমরানে খানের বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে। এতে নতুন রাজনৈতিক অস্থিরতার দিকে যাচ্ছে দেশটি।
বিরোধীরা সতর্ক করেছে যদি স্পিকার প্রস্তাবটি গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন, করে তবে নেতারা বিধানসভা সচিবালয়ে অবস্থান বিক্ষোভ করবেন। কারণ বিধানসভা সচিবালয়ে আগামী ২২ থেকে ২৩ ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।আর সোমবার স্পিকার প্রস্তাবটি গ্রহণ করলে আগামী ২৮ মার্চ অনাস্থা ভোট নেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পার্লামেন্টে ইমরান খানকে পরাজিত করতে ৩৪২ সদস্যের পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে বিরোধীদের কমপক্ষে ১৭২ ভোট প্রয়োজন। বর্তমানে ইসলামাবাদের সিন্ধু হাউসে অবস্থানরত পিটিআই আইনপ্রণেতাদের একটি 'উল্লেখযোগ্য' সংখ্যকের খবর রয়েছে, যাঁরা তাদের নিজের দলের বিরুদ্ধে ভোট দেবেন বলে বিশ্বাস করেন।
বিরোধী জোটের পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাবের উদ্যোগের ফলে ইমরান খানের ওপর রাজনৈতিক চাপ বাড়ছে।
এদিকে গোয়েন্দা তথ্য মতে, সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া এবং ডিজি (আইএসআই) লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাদিম আঞ্জুমসহ চারজন সিনিয়র পাকিস্তান সেনা জেনারেল ওআইসি-এফএমের পরে প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে বলেছেন।
যদিও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)পার্টির বহুল আলোচিত তুরুপের তাস হিসেবে পরিচিত সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল রাহিল শরীফ সেনাবাহিনীর সাথে ইমরান খানের পক্ষে মধ্যস্থতা উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তা দৃশ্যত ব্যর্থ হয়েছে। জানা গেছে, জেনারেল শরীফ ইমরান খানের নির্দেশে জেনারেল বাজওয়ার সাথে দেখা করতে পাকিস্তানে এসেছেন। কিন্তু তিনি সেনাপ্রধানকে বোঝাতে পারেননি।
দিল্লিতে পৌঁছানো রিপোর্ট অনুসারে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে ইমরান খানকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে।কারণ ক্রমাগত রাজনৈতিক অস্থিরতায় পাকিস্তান গুরুতর অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে।এছাড়া ইউক্রেন সংকট এবং আফগানিস্তান নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অবস্থান নিয়ে পাক সেনাবাহিনী ক্ষুব্ধ।
ওআইসি সম্মেলনের পরে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ইমরান খানকে তার কাগজপত্র দিতে বলেছে এবং বিরোধী নেতারাও গতি বাড়িয়েছে। ইমরান খানের পক্ষে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে যদি প্রস্তাবটি গ্রহণ না করা হয় তবে পুরো বিধানসভার কার্যক্রম ব্যাহত করার হুমকি দিয়েছে বিরোধীরা।
এরপরে কি হবে?
সংবিধান অনুসারে, যদি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব নিম্নকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ দ্বারা পাস হয়, তবে প্রধানমন্ত্রী তার পদে থাকাতে পারবেন না। প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণের পর, জাতীয় পরিষদকে অবিলম্বে নতুন নেতা নির্বাচনের জন্য ভোট দিতে হবে।
জাতীয় পরিষদ বিধি ৩২ অনুসারে "সাধারণ নির্বাচনের পরে স্পিকার এবং ডেপুটি স্পিকার নির্বাচনের পরে বা যখনই কোনও কারণে প্রধানমন্ত্রীর পদ শূন্য হয়ে যায়, তখন বিধানসভা, অন্য কোনও কাজ বাদ দিয়ে, নির্বাচন করতে এগিয়ে যাবে।একজন মুসলিম সদস্যকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করবেন।
আইনজীবী আব্দুল মইজ জাফরি জানান, অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণ করা হলে তার মন্ত্রিসভাও ভেঙে দেওয়া হয়। “মন্ত্রিসভা হল প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার সম্প্রসারণ। মন্ত্রী, উপদেষ্টাদের মধ্য থেকে একটি মন্ত্রিসভা নির্বাচন করা যেতে পারে [...] কিন্তু সংসদের নেতা ছাড়া মন্ত্রিসভা থাকতে পারে না। একটি মন্ত্রিসভা ঘনিষ্ঠভাবে হাউসের নেতাকে সহায়তা করে,”।
জাফরি যোগ করেছেন যে জাতীয় পরিষদ নেতা ছাড়া চলতে পারে না।
“একটি নির্বাচনের পর প্রথম কাজ হলো একজন স্পিকার নির্বাচন করা, যাতে হাউসের একজন তত্ত্বাবধায়ক থাকে।পারে এবং আপনি একজন স্পিকার নির্বাচন করার সাথে সাথে আপনি হাউসের একজন নেতা নির্বাচন করেন।
"যদি হাউসের একজন নেতা না থাকে, আপনাকে অবশ্যই আবার একজনকে নির্বাচন করতে হবে।"
জাফরি যোগ করেছেন হাউসের কোন নেতা না থাকলে রাষ্ট্রপতি বিধানসভা ভেঙে দিতে পারেন এবং একটি নির্বাচন আহ্বান করতে পারেন।
জাতীয় পরিষদের স্পিকারের অপসারণের ক্ষেত্রে, ডেপুটি স্পিকার অস্থায়ীভাবে স্পিকার হিসাবে কাজ করবেন, যতক্ষণ না স্পিকার নিয়োগ করা যায়।
এদিকে, আইনজীবী সালার খান ভিন্ন মত পোষণ করে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীকে পদ থেকে অপসারণ করা হলে কী হবে তা "এক ধরণের ধূসর এলাকা"।
জাতীয় পরিষদের ৩২নং বিধি অনুসারে, বিধানসভাকে "অন্য যে কোনো কাজ বাদ রেখে একজন নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করতে হবে"।
যদিও ইমরান খান উল্লেখ করেছেন যে, বিধি ৩৭ এর বলে যে প্রস্তাবটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিধানসভা স্থগিত করা যাবে না।
সুতরাং একটি মাত্র উপায় আছে দ্রত প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করা।
অধিবেশনটি স্থগিত করতে পারেন [প্রধানমন্ত্রী অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে অপসারণের পরে] তবে কোনও নতুন কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন না।
বাস্তবতা হলো অতীতের কোনো প্রধানমন্ত্রী অনাস্থাভোটের মাধ্যমে অপসারণ করা হয়নি। অতীতে দুইজন প্রধানমন্ত্রী অনাস্থার মুখে পড়েছিলেন।
২০০৬ সালে সাবেক পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী শওকত আজিজের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আসে। কিন্তু তা অতিক্রম করতে সক্ষম হন। ১৯৮৯ সালে বেনজির ভুট্টোকে অনাস্থার মুখে পড়তে হয়েছি।