অনাস্থা ভোট: ইমরান খানের ভাগ্য নির্ধারণ ২৫ মার্চ
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে ২৫ মার্চ হতে চলেছে অনাস্থা ভোটের। ওই দিন বেলা ১১টায় পাক সংসদের নিম্নকক্ষের অধিবেশন আহ্বান করেছেন। ওই অধিবেশনেই প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে ভোটাভুটি হবে। খবর দ্যা গার্ডিয়ানের।
এমনকি ইমরান খানের ইস্তফা চাইছেন পাক সেনারা। সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া এবং ডিজি (আইএসআই) লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাদিম আঞ্জুমসহ চারজন সিনিয়র জেনারেল প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে বলেছেন বলে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্রে খবর, পাক সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া এবং আইএসআই প্রধান নাদিম আনজুমও ২২ ও ২৩ মার্চ ওআইসির সম্মেলনের পরই ইমরান খানের পদত্যাগ চাইছেন।
এদিকে, নিজ দলের মধ্যেও অনাস্থার মুখে পড়েছেন ইমরান খান। তার দলের অন্তত দুই ডজন সাংসদ ইমরান খানের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। তারা আনাস্থা ভোট দেবেন বলে প্রকাশ্য হুঁমকি দিয়েছেন।
পাকিস্তানে রাজনৈতিক সংকট এখন চরমে পৌঁছেছে। ইমরান খানের পদত্যাগের দাবিতে এককাট্টা পাকিস্তানের বিরোধী দলগুলি। গত ৮ মার্চই জাতীয় পরিষদ সচিবালয়ে ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দিয়েছিলেন বিরোধীরা। ওই দিন পাক সংসদের স্পিকার আসাদ কায়সার, তার অফিসে না থাকায়, তার সচিবের কাছেই প্রস্তাবটি জমা দেওয়া হয়েছিল। জাতীয় সংসদের মোট ৮৬ জন সদস্য ওই প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেছিলেন। পাক সংসদের নিয়ম অনুযায়ী অন্তত ৬৮ জন এমএনএ-র স্বাক্ষর লাগে অনাস্থা প্রস্তাব আনার জন্য।
পার্লামেন্টে ইমরান খানকে পরাজিত করতে ৩৪২ সদস্যের পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে বিরোধীদের কমপক্ষে ১৭২ ভোট প্রয়োজন। বর্তমানে ইসলামাবাদের সিন্ধু হাউসে অবস্থানরত পিটিআই আইনপ্রণেতাদের একটি 'উল্লেখযোগ্য' সংখ্যকের খবর রয়েছে, যাঁরা তাদের নিজের দলের বিরুদ্ধে ভোট দেবেন বলে বিশ্বাস করেন।
পাকিস্তানের বিরোধী দলগুলোর নেতৃত্ব প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের ভোটের আগে জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে তাদের সংসদ সদস্যদের ইসলামাবাদে থাকতে বলেছে।
বিরোধী নেতাদের মতে, সংসদের নিম্নকক্ষের স্পিকার যেকোনো সময় বিধানসভা অধিবেশন আহ্বান করতে পারেন এবং তাদের দলের আইন প্রণেতাদের ইসলামাবাদে থাকার নির্দেশ দেন।
অনাস্থা প্রস্তাবকে ঘিরে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক তৎপরতার মধ্যে, খানের জন্য যে বিষয়টি আরও খারাপ করে তোলে তা হল অনেক শক্তিশালী পাকিস্তান সেনাবাহিনী পুরো বিষয়টি থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে।
অন্যদিকে, শনিবার (১৯ মার্চ) পেশোয়ারে বিরোধী দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম-ফজল বা জেইউআই-এফ এর মহাসচিব মৌলানা আব্দুল গফুর হায়দারি দাবি করেছেন, ইমরানের নিজের দলেরই মোট ৩৪ জন সাংসদ তাদের দিকে রয়েছেন। মৌলানা আব্দুল গফুর হায়দারি আরও বলেন, ইমরান ও তার দল শাসন করার নৈতিক কর্তৃত্ব হারিয়েছে। মুখ বাঁচাতে ইমরান খানকে এখন পদত্যাগ করে নতুন করে সাধারণ নির্বাচন ঘোষণা করার পরামর্শ দিয়েছেন এই বিরোধী নেতা। তিনি আরও বলেছেন, শীঘ্রই দেশ সুসংবাদ পাবে।
প্রথমদিকে এই বিষয়ে মুখে চুপ ছিল পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী। তবে, বর্তমানে জেনারেল বাজওয়া এবং অন্যান্য পাক পদস্থ সামরিক কর্তারা মনে করছেন, ইমরান খানকে আর সুযোগ দেওয়া উচিত নয়। তার পদত্যাগ করাই উপযুক্ত হবে। অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে বর্তমান রাজনৈতিক সংকট দেশের স্বার্থবিরোধী বলে মনে করছেন তাঁরা। এমনকী গদি বাঁচাতে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে মধ্যস্থতার জন্য সৌদি আরব (থেকে প্রাক্তন সেনাপ্রধান জেনারেল রাহিল শরিফকেও ডেকে এনেছিলেন ইমরান। তবে, সেই চেষ্টাও সম্ভবত ব্যর্থ হয়েছে। এই অবস্থায়, জেনারেল বাজওয়ার বদলে অন্য কাউকে সেনা প্রধান করে, শেষ চেষ্টা করতে পারেন ইমরান, এমন খবরও শোনা যাচ্ছে।
কেএফ/