দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন ৩৩ লাখ ইউক্রেনীয়
রাশিয়া সামরিক অভিযান চালানোর পর থেকে প্রায় ৩৩ লাখের বেশি মানুষ ইউক্রেন ছেড়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। এ ছাড়া ইউক্রেনের অভ্যন্তরে প্রায় ৬৫ লাখ মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, শুক্রবার (১৮ মার্চ) পর্যন্ত হালনাগাদ হিসাব অনুযায়ী, রাশিয়া ইউক্রেনে অভিযান শুরু করার পর ইউক্রেনের ৩৩ লাখ ২৮ হাজার ৬৯২ জন মানুষ দেশ ছেড়েছেন। এ ছাড়া আশ্রয়ের উদ্দেশে ঘর ছেড়েছেন আরও ৫৮ হাজার ৩০ জন ইউক্রেনীয়।
ইউএনএইচসিআরের প্রধান ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বলেন, ‘বোমা হামলা, বিমান হামলা ও নির্বিচার ধ্বংসযজ্ঞের আশঙ্কায় ভীত হয়ে ইউক্রেন ছেড়ে দেশটির মানুষের অন্য দেশে পালানো অব্যাহত রয়েছে। এখন এসব মানুষের কাছে সাহায্য পৌঁছানো খুব জরুরি। কিন্তু এতে তাঁদের ভয় কাটবে না। ভয় কাটবে শুধু যুদ্ধ বন্ধ হলে।’
যারা ইউক্রেন ছেড়েছেন তাদের ৯০ শতাংশই নারী ও শিশু। কারণ ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী পুরুষদের যারা যুদ্ধ করতে পারবেন তারা দেশ ছাড়তে পারছেন না।
এদিকে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর বুধবার পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের ১ লাখ ৬২ হাজার মানুষ দেশটি ছেড়েছেন।
এ ছাড়া আরও লাখ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়েছেন। তবে তারা এখনো দেশত্যাগ করতে পারেননি। এসব মানুষ ইউক্রেনের বিভিন্ন সীমান্তে আটক পড়ে আছেন।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, গত বুধবার পর্যন্ত ইউক্রেনজুড়ে আনুমানিক ৬৪ লাখ ৮০ হাজার মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।
ইউএনএইচসিআর প্রাথমিকভাবে জানিয়েছিল, ইউক্রেনের ৪০ লাখ মানুষ দেশত্যাগ করতে পারেন। তবে গত সপ্তাহে বলেছে, এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
প্রসঙ্গত, গত ২১ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রুশপন্থী বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেন। সেখানে ‘শান্তি রক্ষায়’ সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি। এরপর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। একই সঙ্গে ‘প্রজাতন্ত্র’ দুটিতে রুশ সেনাদের ‘শান্তিরক্ষী’ হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন তিনি। পুতিনের এই পদক্ষেপের পর পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে দিয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহীনিয়ন্ত্রিত ডনবাস অঞ্চলে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্ব ইউক্রেনের ওই অঞ্চলে গত আট বছরের লড়াইয়ে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।
২৪ দিনের যুদ্ধে ইউক্রেনের একাংশ এখন রাশিয়ার দখলে। আজ চলছে যুদ্ধের ২৫তম দিন। রাজধানী কিয়েভ ঘিরে রেখেছে রাশিয়ার বিশাল সেনাবহর। ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে একের পর এক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো বা অন্য কোনো পশ্চিমা শক্তিধর দেশ সামরিক হস্তক্ষেপ করতে এগিয়ে আসেনি।
এসএ/