আক্রমণের ধার বাড়িয়েছে রাশিয়া, পতনের মুখে মারিউপোল
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু কয়েকদিন পর থেকেই অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল বন্দরনগরী মারিউপোল। শহরটিকে ঘিরে রেখে আক্রমণ তীব্র করেছে রাশিয়া। এখন কেন্দ্রস্থলে চলছে তুমুল লড়াই। গত কয়েকদিনের সংঘর্ষে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া মারিউপোল এখন পতনের মুখে বলে মনে করা হচ্ছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান এ খবর জানিয়েছে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, তাদের বাহিনী মারিউপোলের চারপাশ ঘিরে ফেলেছে এবং শহরটির কেন্দ্রে ইউক্রেনের ‘জাতীয়তাবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াই’ চলছে। মস্কোর এ দাবি নিশ্চিত করে মারিউপোলের মেয়র ভাদিম বোইচেঙ্কো সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেছেন ‘সত্যিকার অর্থেই’ লড়াই চলছে। ট্যাংক এবং মেশিনগান দিয়ে তুমুল লড়াই অব্যাহত রয়েছে। সবাই (সাধারণ মানুষ) বাংকারে লুকিয়ে আছে।
বন্দরনগরী মারিউপোল কৌশলগত কারণে গুরুত্বপূর্ণ। আর এ কারণেই ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পরপরই প্রথমে এ শহরটির নিয়ন্ত্রণ নেয় রুশ বাহিনী। রাশিয়া আক্রমণ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় শিগগিরই মারিউপোল পতনের আশঙ্কা করা হচ্ছে। দ্য ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার (আইএসডব্লিউ) নামে এক মার্কিন থিংক ট্যাংক এ আশঙ্কার কথা জানিয়েছে।
রাশিয়ার সামরিক অভিযানের মুখে শহরটি ছেড়ে পালিয়েছেন হাজারো মানুষ, প্রাণ হারিয়েছেন অনেকে। আর এখনো যারা সেখানে রয়েছেন তাদের বেশিরভাগই দিন পার করছেন ক্ষুধার্ত অবস্থায়। মারিউপোল এখন যেন এক দুর্ভোগের প্রতীক।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুসারে, সংঘর্ষে মারিউপোল শহরের ৯০ শতাংশ বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে হতাহতদের বের করে আনছেন উদ্ধারকর্মীরা। মারিউপোল থেকে পালিয়ে আসা লোকজন জানান, শহরে বেশ কিছুদিন ধরে গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ নেই। প্রায় ৩০ হাজার মানুষ শহরটি ছেড়ে পালাতে পেরেছেন। তবে এখনো প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ আতঙ্কের মাঝে সেখানে আটকে আছেন।
প্রসঙ্গত, গত ২১ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রুশপন্থী বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেন। সেখানে ‘শান্তি রক্ষায়’ সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি। এরপর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। একই সঙ্গে ‘প্রজাতন্ত্র’ দুটিতে রুশ সেনাদের ‘শান্তিরক্ষী’ হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন তিনি। পুতিনের এই পদক্ষেপের পর পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে দিয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহীনিয়ন্ত্রিত ডনবাস অঞ্চলে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্ব ইউক্রেনের ওই অঞ্চলে গত আট বছরের লড়াইয়ে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।
২৩ দিনের যুদ্ধে ইউক্রেনের একাংশ এখন রাশিয়ার দখলে। আজ চলছে যুদ্ধের ২৪তম দিন। রাজধানী কিয়েভ ঘিরে রেখেছে রাশিয়ার বিশাল সেনাবহর। ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে একের পর এক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো বা অন্য কোনো পশ্চিমা শক্তিধর দেশ সামরিক হস্তক্ষেপ করতে এগিয়ে আসেনি।
এসএ/