ইউক্রেনে পশ্চিমা অস্ত্রবহরে হামলার হুমকি রাশিয়ার
রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন পশ্চিমা দেশ ইউক্রেনে সমরাস্ত্র সরবরাহ করছে। রাশিয়া ইউক্রেন বাহিনীকে আক্রমণ করলেও এসব সমরাস্ত্রকে লক্ষ্য করে আক্রমণ চালায়নি। তবে এবার তারা এসব পশ্চিমা সরবরাহ ব্যবস্থাকেও লক্ষ্যবস্তু করার কথা জানিয়েছে পুতিন প্রশাসন।
শনিবার (১২ মার্চ) রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে দিয়েছি যে বিভিন্ন দেশ থেকে ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানো শুধু একটি বিপজ্জনক পদক্ষেপ নয়, এটি এমন একটি পদক্ষেপ যা এই অস্ত্রবহরগুলোকে বৈধ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে পারে।’
পশ্চিমারা ইউক্রেনের সেনাদের কাঁধে বহনযোগ্য আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা, ট্যাংক ধ্বংস করার ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করছে জানিয়ে রুশ উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ওয়াশিংটন মস্কোর সতর্কতাকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয়নি। ফলে ইউক্রেনের বিষয়ে কোনো আলোচনা প্রক্রিয়ায় যাচ্ছে না রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র।’
রাশিয়া অভিযান শুরু করার আগে অর্থাৎ মস্কো যখন ইউক্রেন সীমান্তে সেনা মোতায়েন করছিল, তখন থেকেই বারবার পশ্চিমা শক্তির কাছে সামরিক সহায়তা চেয়ে আসছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে মস্কো শুধু সীমান্তেই থেমে থাকবে না।
এদিকে রুশ সামরিক অভিযানের হাত থেকে বাঁচতে প্রতিদিনই ইউক্রেন ছেড়ে পালাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। মধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ অভিমুখে অভিবাসী ঢলের মধ্যেই এবার ইউক্রেন থেকে প্রতিদিনই ইউরোপে আশ্রয় নিচ্ছেন হাজার হাজার শরণার্থী।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, অভিযান শুরুর পর এ পর্যন্ত ২৫ লাখের বেশি মানুষ প্রতিবেশী দেশ পোল্যান্ড ও রোমানিয়াসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন। অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুর সংখ্যা প্রায় ৪৪ লাখ। এ অবস্থায় ইউক্রেন সীমান্তে সক্রিয় হয়ে উঠেছে মানবপাচারকারীরা।
প্রসঙ্গত, গত ২১ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রুশপন্থী বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেন। সেখানে ‘শান্তি রক্ষায়’ সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি। এরপর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। একই সঙ্গে ‘প্রজাতন্ত্র’ দুটিতে রুশ সেনাদের ‘শান্তিরক্ষী’ হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন তিনি। পুতিনের এই পদক্ষেপের পর পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে দিয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহীনিয়ন্ত্রিত ডনবাস অঞ্চলে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্ব ইউক্রেনের ওই অঞ্চলে গত আট বছরের লড়াইয়ে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।
সতের দিনের যুদ্ধে ইউক্রেনের একাংশ এখন রাশিয়ার দখলে। আজ চলছে যুদ্ধের ১৮তম দিন। রাজধানী কিয়েভ ঘিরে রেখেছে রাশিয়ার বিশাল সেনাবহর। ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে একের পর এক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো বা অন্য কোনো পশ্চিমা শক্তিধর দেশ সামরিক হস্তক্ষেপ করতে এগিয়ে আসেনি।
এসএ/