ন্যাটো-রাশিয়ার সংঘাতে হতে পারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ: বাইডেন
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন শুরুর পর থেকেই অনেকে এটিকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা বলে মনে করছিলেন। সংঘাত এড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মার্কিন বা ন্যাটো সৈন্য ইউক্রেনে পাঠাতে নারাজ। তবে কোনো কারণে ন্যাটো-রাশিয়া মুখোমুখি হলে তা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে রূপ নেবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার (১১ মার্চ) এক টুইট বার্তায় বাইডেন লিখেছেন, ‘আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, ন্যাটো অঞ্চলের প্রতিটি ইঞ্চি আমরা আমাদের সর্বশক্তি দিয়ে রক্ষা করব। তবে আমরা ইউক্রেনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব না। কারণ ন্যাটো এবং রাশিয়ার মধ্যে সরাসরি সংঘাত শুরু হলে তা হবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ।’
এ সময় রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর বিষয়টি আলোচনার টেবিলে নেই বলে জানিয়েছেন বাইডেন। তবে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং তার দেশের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান আক্রমণাত্মক নিষেধাজ্ঞার প্রচারণা চালিয়েছে বাইডেন প্রশাসন।
শুক্রবার রাশিয়ান অ্যালকোহল, সামুদ্রিক খাবার এবং হীরা আমদানিতেও নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছেন বাইডেন। নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি অলিগার্কদের তালিকা আরও বড় করেছেন তিনি।
এর আগে, ইউক্রেনে অভিযানের জবাবে সম্প্রতি রাশিয়ার ধনকুবের ব্যবসায়ী, যাদের প্রেসিডেন্ট পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহচর ভাবা হয়, তাদের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন প্রশাসন।
এদিকে, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে জব্দ করা অস্ত্র দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক প্রজাতন্ত্রকে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই সোইগু।
শুক্রবার (১১ মার্চ) তিনি বলেন, পশ্চিমাদের সরবরাহ করা ক্ষেপণাস্ত্রসহ এসব অস্ত্রের সদ্ব্যবহার করতে পারবে ডনবাসের বাহিনী। ট্যাংক, সাঁজোয়া যানসহ ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ ছোট অস্ত্র জব্দ করেছি। এ ছাড়াও অনেক জেভেলিন ও স্টিংগার সিস্টেমও রাশিয়ার বাহিনী জব্দ করেছে বলে জানান তিনি।
মার্কিন-নির্মিত হাতে বহনীয় বিমান ও ট্যাংকবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র জেভেলিন। ওয়াশিংটন ও তার মিত্ররা এসব অস্ত্র কিয়েভকে দিয়েছিল। রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের বিদ্রোহীদের এসব অস্ত্র হস্তান্তরের একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। নিজেদের প্রতিরক্ষায় তারা এসব ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারবেন।’
প্রসঙ্গত, গত ২১ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রুশপন্থী বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেন। সেখানে ‘শান্তি রক্ষায়’ সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি। এরপর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। একই সঙ্গে ‘প্রজাতন্ত্র’ দুটিতে রুশ সেনাদের ‘শান্তিরক্ষী’ হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন তিনি। পুতিনের এই পদক্ষেপের পর পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে দিয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহীনিয়ন্ত্রিত ডনবাস অঞ্চলে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্ব ইউক্রেনের ওই অঞ্চলে গত আট বছরের লড়াইয়ে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।
ষোল দিনের যুদ্ধে ইউক্রেনের একাংশ এখন রাশিয়ার দখলে। আজ চলছে যুদ্ধের ১৭তম দিন। রাজধানী কিয়েভ ঘিরে রেখেছে রাশিয়ার বিশাল সেনাবহর। ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে একের পর এক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো বা অন্য কোনো পশ্চিমা শক্তিধর দেশ সামরিক হস্তক্ষেপ করতে এগিয়ে আসেনি।
এসএ/