গাজায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও পণ্য সরবরাহ বন্ধ করল ইসরায়েল

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যাকায় শনিবার দিন গড়িয়ে রাতেও দফায় দফায় বিমান চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। অনেকটা অন্ধকার ও আতঙ্কে রাত্রীটা পার করেছে ফিলিস্তিনিরা। এ অবস্থার মধ্যেই গাজায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও পণ্য সরবরাহ স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরায়েলের নিরাপত্তা পরিষদ।
ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হামলায় তিন শতাধিক নিহতের ঘটনা ঘটেছে। এই হামলার পর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেছেন, ‘দীর্ঘ ও কঠিন’ এক যুদ্ধের সম্মুখীন এখন ইসরায়েল।
একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘গাজায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও অন্যান্য পণ্যের সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হবে।’
অবশ্য এই বিবৃতির আগে শনিবার সম্পূর্ণ অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে গেছে গাজা উপত্যকা। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ সেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ ইতিমধ্যেই বন্ধ করে দিয়েছে। মিসরের পাশাপাশি নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ২০০৭ সাল থেকে গাজা উপত্যকা অবরোধ করে রেখেছে ইসরায়েল। এলাকাটির সম্পূর্ণ আকাশসীমা নিয়ন্ত্রণ করে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী। সীমান্ত দিয়ে গাজায় ফিলিস্তিনিদের জন্য কী কী পণ্য প্রবেশ করবে, সেটাও নিয়ন্ত্রণ করে তারা।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী ও হামাসের লড়াই অব্যাহত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দেশবাসীর উদ্দেশে বলেছেন, ‘দীর্ঘ ও কঠিন যুদ্ধে’ প্রবেশ করছে ইসরায়েল। এক বার্তায় তিনি বলেন, ‘হামাসের রক্তক্ষয়ী হামলার মাধ্যমে আমাদের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ের ইতি ঘটবে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই, যখন ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামাসের অধিকাংশ যোদ্ধাকেই নিশ্চিহ্ন করা হবে।’
এদিকে হামাসের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলো ইসরায়েলি বন্দিদের গাজা উপত্যকায় জীবিত অবস্থায় ধরে আনার বহু ভিডিও ফুটেজ পোস্ট করেছে। হামাস বলেছে, আটক ইসরায়েলিদের সংখ্যা ইসরায়েল যা জানে তার চেয়েও অনেক বেশি।
ইসরায়েলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, হামলার পর আহতদের চাপ বেড়েছে দক্ষিণ ইসরায়েল ও গাজার সবগুলো হাসপাতালে। তাই এসব হাসপাতালে একটি বেডও ফাঁকা পাওয়া যাচ্ছে না।
অন্যদিকে পৃথক এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছেন, গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ২৩২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ১ হাজার ৬৯৭ জন।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সীমান্তের অন্তত ২২টি স্থানে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী এবং শত শত হামাস যোদ্ধারা যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন।
এমনি এক প্রেক্ষাপটে ‘গাজায় বাস্তবতার চেহারা পরিবর্তন’ করার হুমকি দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট। তিনি বলেন, আমরা আজ শয়তানের চেহারা দেখেছি। নারী, শিশু এবং বয়স্কদের মধ্যে পার্থক্য না করেই হামাস সন্ত্রাসী আক্রমণ শুরু করেছে। হামাস খুব দ্রুত বুঝতে পারবে যে তারা একটি গুরুতর ভুল করেছে। আমরা গাজা উপত্যকায় বাস্তবতার চেহারা পাল্টে দেব।
এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনের গাজাকে একটি ‘মরু দ্বীপে’ পরিণত করার হুমকি দিয়ে বাসিন্দাদের ‘এখনই চলে যেতে’ বলার পর গাজায় স্থল আক্রমণের আশঙ্কা বাড়ছে। এরই মধ্যে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় বোমাবর্ষণ বাড়িয়েছে, শহরের কেন্দ্রস্থলে হামাসের ব্যবহৃত একটি ১৪তলা ভবন ধূলায় মিশিয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
