পুলিশ কনস্টেবল থেকে ধর্মগুরু, কে এই ‘ভোলে বাবা’
ছবি: সংগৃহীত
ভারতের উত্তর প্রদেশের হাতরাস জেলায় ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পদদলিত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১২১ জনে দাঁড়িয়েছে। এদের বেশিরভাগই নারী বলে জানিয়েছে পুলিশ। এছাড়াও এ ঘটনায় আহতও হয়েছেন বহু মানুষ, যাদের মধ্যে ২৮ জন গুরুতর আহত রয়েছেন। তবে অনুষ্ঠানের আয়োজক ধর্মীয় গুরুর সন্ধান এখনও মেলেনি বলে জানিয়েছে পুলিশ। মৃত্যুর ঘটনায় স্বঘোষিত ধর্মগুরু বাবা নারায়ণ হরি ওরফে ‘ভোলে বাবা’ গ্রেপ্তার হতে পারেন।
ধর্ম প্রচারক সাকার বিশ্ব হরি ভোলে বাবার ব্যানারে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে এই ধরনের অনুষ্ঠান করে আসছেন। স্বঘোষিত ধর্মগুরু বাবা নারায়ন হরি ওরফে ভোলে বাবার প্রকৃত নাম সুরাজ লাল। তিনি উত্তর প্রদেশের ইতাহের জেলার পাতিয়ালি পঞ্চায়েতের বাহাদুরনগরী গ্রামের বাসিন্দা। সাধারণ কৃষক পরিবার থেকে উঠে আসা সুরাজ একসময় উত্তরপ্রদেশ পুলিশের গোয়েন্দা শাখার হেড কনস্টেবল ছিলেন। এনডিটিভির প্রতিবেদনে এই তথ্য দেওয়া হয়েছে।
পরে ১৯৯৯ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে ধর্মীয় বাণী প্রচারে মন দেন এবং নিজের নাম পরিবর্তন করে নারয়ণ সাকার হরি রাখেন। পুলিশে তিনি প্রায় ১৮ বছর চাকরি করেন। প্রায় ২৭ বছর ধরে এই অঞ্চলে ও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলিতে ধর্ম প্রচার করতেন। এই ঘটনার পর প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
পদপিষ্ট হওয়ার জন্য অনেকেই আয়োজক সৎসঙ্গ কমিটিকে দায়ী করেছেন, আবার অনেকেই প্রশাসনের দিকে আঙুল তুলছেন। কিছু মানুষের দাবি, ভক্তদের অতিরিক্ত ভিড়ের কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। হাতরাস জেলার রতিভানপুর গ্রামের ধর্মীয় অনুষ্ঠান সৎসঙ্গে একজন ধর্ম প্রচারক ও তার স্ত্রী ভাষণ দিচ্ছিলেন।
প্রশাসনের একটি সূত্র জানিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী এই ঘটনার তদন্তের জন্য একটি বিশেষ কমিটি গঠন করেছেন। এই কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন আগরার অতিরিক্ত ডিজিপি। পুলিশ সূত্রে খবর, ফুলরাই গ্রাম থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে মৈনপুরি এলাকায় অবস্থিত ভোলে বাবার আশ্রমে তদন্তকারীরা উপস্থিত হয়েছেন। প্রশাসন নির্দেশ দিয়েছে, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে।
আলিগড় রেঞ্জের পুলিশ মহাপরিদর্শক শলভ মাথুর বলেন, অনুষ্ঠানের আয়োজকদের বিরুদ্ধে একটি এফআইআর নথিভুক্ত করা হচ্ছে। ইতাহ ও হাতরাস জেলার সীমান্তবর্তী স্থানে জমায়েতের জন্য একটি অস্থায়ী অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
ইতাহের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা উমেশ কুমার ত্রিপাঠী বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের ইতাহ মেডিক্যাল কলেজ মর্গে ২৭টি মৃতদেহ এসেছে। নিহতদের মধ্যে ২৫ জন নারী ও দুজন পুরুষ রয়েছে। আহত অন্তত ১৫০ জনকে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে।’
ইতাহের সিনিয়র পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট রাজেশ কুমার বলেন, ‘রোগীদের থাকার জন্য মেডিক্যাল কলেজের সামর্থ্য শেষ হয়ে গেছে। আমরা বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে পদদলিতদের জন্য শয্যা বরাদ্দ করতে বলেছি। ত্রাণ ও উদ্ধারের ব্যবস্থা জরুরি ভিত্তিতে চলছে।’
এক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘সৎসঙ্গে কমপক্ষে ১৫ হাজার মানুষের উপস্থিতি ছিল। আমরা পদদলিত হওয়ার সঠিক কারণ জানি না। তবে শ্বাসরোধের ফলে বেশিরভাগ মৃত্যু হয়েছে।’ মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ হাতরাসে পদদলিত হওয়ার কারণ অনুসন্ধানের জন্য আগ্রা জোনের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও আলিগড়ের পুলিশ কমিশনারসহ একটি তদন্তদল গঠন করেছেন বলে জানায় পুলিশ।
এএফপির এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, ভারতে ধর্মীয় সমাবেশগুলোর খুবই খারাপ রেকর্ড রয়েছে। সমাবেশ পরিচালনা ও নিরাপত্তা ঘাটতির কারণে মারাত্মক ঘটনা ঘটেছে। হিন্দু নববর্ষ উদযাপনের সময় ২০১৬ সালে নিষিদ্ধ আতশবাজি প্রদর্শনীতে একটি মন্দিরে বিস্ফোরণে অন্তত ১১২ জন নিহত হয়েছিল। কেরালা রাজ্যের ওই মন্দির কমপ্লেক্সে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিল।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে মধ্যপ্রদেশের একটি মন্দিরের কাছে একটি সেতুতে পদদলিত হয়ে ১১৫ জন ভক্ত নিহত হয়েছিল। সে সময় ওই এলাকায় প্রায় চার লাখ মানুষ জড়ো হয়েছিল। সেতুটি ভেঙে পড়ার গুজব ছড়িয়ে পড়লে মানুষ ছোটাছুটি শুরু করলে পরে পদদলিত হয়ে তারা মারা যায়।২০০৮ সালে উত্তর শহর যোধপুরে একটি পাহাড়ের মন্দিরে পদদলিত হয়ে ২২৪ জন তীর্থযাত্রী নিহত ও ৪০০ জনেরও বেশি আহত হয়।