লোকসভা নির্বাচনে ৬ ব্যাটেলগ্রাউন্ড রাজ্যের ৫টিতেই পিছিয়ে বিজেপি
নরেন্দ্র মোদি ও রাহুল গান্ধী। ছবি: সংগৃহীত
সদ্য শেষ হওয়া ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। আজ চলছে ভোটগ্রহণ। এরই মধ্যে বিভিন্ন রাজ্যের বেশকিছু আসনের ফলাফল প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো। সবশেষ ফলাফল অনুযায়ী ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ‘ব্যাটেলগ্রাউন্ড’ হিসেবে চিহ্নিত ৬টি বড় রাজ্যের পাঁচটিতেই ক্ষমতাসীন বিজেপি তেমন সুবিধা করতে পারছে না। এখন পর্যন্ত বেশি আসনবিশিষ্ট এই রাজ্যগুলোতে বিরোধী দল কংগ্রেস এবং তাদের শরীক দলদের জয়জয়কার।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ভোট গণনার প্রাথমিক পর্যায়ে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসসহ ইন্ডিয়া জোটের ভালো ফলাফলের ইঙ্গিতে ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সদর দপ্তরে বিষণ্ণতার ছাপ দেখা গেছে।
২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে প্রধানত ৬টি বড় রাজ্যকে ‘ব্যাটেলগ্রাউন্ড’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বিশ্লেষকরা। রাজ্যগুলোর মধ্যে কর্নাটকে ২৮, মহারাষ্ট্রে ৪৮, বিহারে ৪০, উত্তর প্রদেশে ৮০, পশ্চিমবঙ্গে ৪২ এবং অন্ধ্র প্রদেশে ২৫টি আসন রয়েছে।
মঙ্গলবার (৪ জুন) বেলা ১১টা পর্যন্ত প্রাথমিক ফলে দেখা গেছে, একমাত্র অন্ধ্র প্রদেশ ছাড়া বিজেপি ও তার শরিকরা ততটা ভালো ফল করতে পারেনি। অন্ধ্র প্রদেশের সম্ভাব্য ভাল ফলের প্রধান ভাগীদার অবশ্যই তেলুগু দেশম। তারা রাজ্য বিধানসভাতেও সম্ভবত দখল করতে চলেছে।
কিন্তু বাকি পাঁচ রাজ্যে বিজেপির অবস্থা বেশ খারাপ। সবচেয়ে বড় বিস্ময় জাগিয়েছে উত্তর প্রদেশ। যে রাজ্য থেকে বিজেপি এবার ৭০-৭৫ আসন পাবে বলে আশা করছিল, সেখানে প্রাথমিক ফলে দেখা যাচ্ছে, ইন্ডিয়া জোট ৪৩ আসনে এগিয়ে রয়েছে। আর ৩৭ আসনে সমাজবাদী পার্টি এবং সাতটিতে এগ্রিয়ে রয়েছে কংগ্রেস। এমনকি বারানসিতে কিছুটা সময় পিছিয়ে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এছাড়া আমেথিতে পিছিয়ে রয়েছেন স্মৃতি ইরানি।
ব্যাটেলগ্রাউন্ড কর্নাটকে বিজেপি ও তার সহযোগীরা গতবার পেয়েছিল ২৭ আসন। একটি মাত্র আসন পেয়েছিল বিরোধীরা। এবার সেখানে কংগ্রেস অন্তত ১০ আসনে এগিয়ে রয়েছে। মহারাষ্ট্রের ফল চমকে দিচ্ছে। বিজেপি ও তার সহযোগী শিন্ডে শিবসেনা ও অজিত পাওয়ারের এনসিপিকে সরিয়ে জায়গা দখল করেছে উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা, শরদ পাওয়ারের এনসিপি ও কংগ্রেস। বেলা ১১টার পর্যন্ত তারা এগিয়ে রয়েছে মোট ৩০ আসনে। বিহারে এনডিএ ভালো করলেও ইন্ডিয়ার কাছে তারা পিছিয়ে রয়েছে অন্তত ৮টি আসনে। গতবার তারা একটিমাত্র আসন হারিয়েছিল কংগ্রেসের কাছে।
বিজেপি এবার প্রবল আশা করেছিল পশ্চিমবঙ্গ ঘিরে। গতবার তারা ৪২ আসনের মধ্যে পেয়েছিল ১৮টি। এবার বেলা ১১টার হিসেবে তারা এগিয়ে মাত্র ১২টিতে। তৃণমূল কংগ্রেস এগিয়ে ৩০টিতে।
এদিকে প্রাথমিক ফলাফলের চিত্র নিজেদের আশানুরূপ না হওয়ায় বিজেপির সদর দপ্তরে বিষণ্নতার ছাপ লক্ষ করা গেছে বলে খবর দিয়েছে বিবিসি।
ভারতের লোকসভা ভোটের প্রাথমিক ফল দেখে মনে হচ্ছে, দুই দিন আগে বুথ ফেরত জরিপ সংস্থাগুলো বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের জয় নিয়ে যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল, তা সম্ভবত বাস্তবে পরিণত হচ্ছে না। কিন্তু মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হওয়া ভোট গণনার চিত্র বলছে, শাসক দল ওই পূর্বাভাসের কাছাকাছিও পৌঁছাতে পারছে না। বরং বিরোধী শিবির ইন্ডিয়া জোট তুলনামূলক ভালো করছে।
এদিকে সরকার গড়তে প্রয়োজন ২৭২ আসন। সেই নিরিখে প্রাথমিক ফল অনুযায়ী, বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ অনেকটাই এগিয়ে। কিন্তু এই চিত্র অপরিবর্তিত থাকলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পক্ষে তা খুব একটা সম্মানজনক হবে না। কারণ, এনডিএ ২৯৭ আসনে এগিয়ে থাকলেও বিজেপি ২৪০ এর কাছাকাছি ঘোরাঘুরি করছে। নরেন্দ্র মোদির ইচ্ছানুযায়ী সবকিছু হয়তো চলবে না।
কংগ্রেসের ভালো ফলাফলে বিজেপি শিবিরের উচ্ছ্বাসে খানিকটা বিবর্ণ রূপ লক্ষ করা গেলেও দলটির নেতারা বলছেন, সরকার গঠনে সুবিধাজনক অবস্থানেই রয়েছেন তারা।