চাঁদের পিঠে ল্যান্ডিং অপেক্ষায় চন্দ্রযান-৩
অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টারের ‘লঞ্চিং প্যাড’ থেকে গত ১৪ জুলাই দুপুর ২টা ৩৫ মিনিটে চন্দ্রযান-৩ এর সফল উৎক্ষেপণ করা হয়। বুধবার বিকেলে উৎক্ষেপণের ৪১ দিন পর ল্যান্ডার বিক্রমের চাঁদের মাটি ছোঁয়ার কথা। এই অভিযান সফল হলে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীনের পর চতুর্থ দেশ হিসেবে চাঁদে মহাকাশযান অবতরণে নাম উঠে আসবে ভারতের।
বুধবার চাঁদের কক্ষপথে ফের লাফ দিয়েছিল চন্দ্রযান-৩। চন্দ্রপৃষ্ঠের আরও কাছের কক্ষপথে পৌঁছে গিয়েছিল ইসরোর এই মহাকাশান। বুধবারই ছিল কক্ষপথ পরিবর্তনের শেষ পর্যায়। ইসরো সূর্রে খবর, ল্যান্ডার মডিউলটি মূল মহাকাশযান থেকে আলাদা হওয়ার পর চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০ কিলোমিটার উপরের কক্ষপথে পৌঁছবে। তারপর সেখান থেকে ধাপে ধাপে মহাকাশযানটিকে নামানো হবে চাঁদের পৃষ্ঠে।
চাঁদে পরিক্রমা শেষ হয়েছে। এবার আর অল্প সময়ের অপেক্ষা। ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর তৈরি চন্দ্রযান-৩ এবার চাঁদের মাটিতে পা রাখবে। শনিবার গভীর রাতে ল্যান্ডার বিক্রমের সর্বশেষ কক্ষপথ পরিবর্তনের ধাপ সম্পন্ন হয়েছে। চাঁদের পথে শেষ পরিকল্পিত কক্ষপথে পৌঁছে গেছে বিক্রম। এবার পাখির পালকের মতো চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করবে সে।
শনিবার রাত ২টার দিকে বিক্রমের শেষ কক্ষপথ পরিবর্তন করানো হয়। ইসরো জানিয়েছে, পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়েছে বিক্রম। এই মুহূর্তে বিক্রমের সঙ্গে চাঁদের সবচেয়ে কম দূরত্ব মাত্র ২৫ কিলোমিটার। সবচেয়ে বেশি দূরত্ব ১৩৪ কিলোমিটার। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে বিক্রম অবতরণের চেষ্টা করবে আগামী বুধবার (২৩ আগস্ট)।
কবে চাঁদের পৃষ্ঠ ছোঁবে ভারতের ল্যান্ডার 'বিক্রম'?:
ইসরোর পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৩ অগাস্ট সন্ধ্যা পৌনে ছয়টা নাগাদ চাঁদের বুকে অবতরণ করতে পারে চন্দ্রযান-৩। কিন্তু ঘোষিত দিনের আগে কি ভারত চাঁদের পৃষ্ঠে মহাকাশযান অবতরণ করাবে? এই নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। জল্পনা বেড়েছে কারণ মূল মহাকাশযান থেকে 'বিক্রম'-এর বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘটনায়। কারণ এই বিচ্ছেদের অর্থই হল অবতরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাওয়া। কারণ সাধারণত বিচ্ছিন্ন হওয়া ও অবতরণের মধ্যে এত দিন ব্যবধান থাকে না। ইসরো কর্তাদের একাংশ মেনে নিয়েছেন, বৃহস্পতিবার এই 'পৃথকীকরণ' পদ্ধতির পর চাঁদে মহাকাশযান অবতরণে আরও অনেক দিন সময় থাকছে হাতে। মূল মহাকাশযানের তুলনায় 'বিক্রম' আকারে যেহেতু ছোটো তাই তাকে ঘুরপাক খাইয়ে নামানো সোজা।তবে কি ঘোষিত সময়ের আগেই 'বিক্রম'-কে নামানো হবে চাঁদে? সরাসরি মন্তব্য করেনি ইসরো। তাঁদের কেউ কেউ জানিয়েছেন, ঘোষিত নির্ঘণ্টের আগে যদি অবতরণ করানো হয় তবে সেই সিদ্ধান্ত আসবে সরকারকে সর্বোচ্চ মহল থেকে। কারণ এর পিছনে থাকতে পারে কোনও রাজনৈতিক কারণ।
স্পষ্ট ভাবে কিছু বলা না হলেও মহাকাশকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দেশের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক অভিযানে চোখ রাখলেও কিন্তু উঠে আসছে একটি বিশেষ কারণ, মনে করছেন মহাকাশ বিজ্ঞানীদের একাংশ। তাঁদের মতে, বর্তমানে ভারতের চন্দ্রযান-৩ যেমন চাঁদকে ছুঁতে চলেছে তেমনই সারিতে রয়েছে রাশিয়ার 'লুনা-২৫'-ও। ভারতের মহাকাশযানটি চাঁদের উদ্দেশে রওনা দেয় ১৪ জুলাই। রাশিয়ার 'লুনা-২৫' রওনা দেয় ১১ অগাস্ট। দুই দেশেরই লক্ষ্য চাঁদের দক্ষিণ মেরু। বলা ভালো এখনও পর্যন্ত কোনও দেশই চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছতে পারেনি। ২০১৯ সালে একবার ট্রাই নিয়েছিল ভারত। কিন্তু সেই অভিযান ব্যর্থ হয়। এবার চন্দ্রযান-৩-কে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করানো হবে বলে ঠিক করা হয়েছে। একই লক্ষ্য রয়েছে রুশ মহাকাশযানেরও।
আর এখানেই দুই দেশের ঠান্ডা টক্কর চলছে বলে মনে করছেন অনেকে। রুশ মহাকাশ গবেষণা সংস্থা রসকসমসের তথ্য অনুযায়ী ২১ অগাস্ট তারা চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে একটি গহ্বরকে তাদের মহাকাশযানকে অবতরণ করাবে। এদিকে ভারতীয় চন্দ্রযানের ঘোষিত অবতরণের দিন ২৩ অগাস্ট। সেক্ষেত্রে রাশিয়াই প্রথম চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পা রাখতে পারে। আন্তর্জাতিক রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, মহাকাশ অভিযান আন্তর্জাতিক রাজনীতির একটি শরিক। এই নিয়ে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন-আমেরিকার মধ্যে সম্পর্ক ঠান্ডা যুদ্ধের সময় থেকেই মিলেছে। বর্তমানে সেই ঠান্ডা যুদ্ধ নেই বটে। তবে টক্করের চোরাস্রোত অব্যাহত রয়েছে। সে ভারত-রাশিয়া যতই মিত্র দেশ হোক না কেন। সেই চোরাস্রোতের টানে 'বিক্রম' নির্ধারিত সময়ের আগেই চাঁদে পৌঁছয় কি না সেই দিকেই নজর।