ইরানে শিগগির বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে সৌদি আরব
সৌদি আরবের অর্থমন্ত্রী মোহামেদ আল জাদান বলেছেন, ইরানে তার দেশ খুব শিগগির বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে। দুই দেশের কূটনৈতিক বন্ধনের সমঝোতা হওয়ার পর এ পথে অগ্রসর হলো সৌদি আরব।
অনুষ্ঠানিকভাবে গত শুক্রবার চীনের মাধ্যমে ইরান ও সৌদি আরবের সম্পর্ক নতুন করে শুরু হয়েছে। এর আগে ইরাক ও ওমানে দেশ দুটি কয়েক বছর ধরে তাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের জন্য আলোচনা চালিয়ে গিয়েছিল।
‘ইরানে সৌদি বিনিয়োগ করার প্রচুর সুযোগ রয়েছে। আমরা অন্তরায়গুলোর কোনোটি দেখেনি। যেকোনো ধরনের সমঝোতার শর্তগুলোকে সম্মান করা উচিত’, সৌদি অর্থমন্ত্রী আল জাদান গতকাল বুধবার রাজধানী রিয়াদে অর্থনৈতিক খাতের সম্মেলনে আরও বলেছেন।
গত সপ্তাহে সৌদি আরবের সরকার বলেছে, তার দেশের গড় দেশীয় উৎপাদন ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। তেলের দাম রেকর্ড ভেঙে বাড়ার মাধ্যমে সৌদি আরব এই অর্থনৈতিক উন্নতি করেছে।
কয়েক দশক ধরে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরান আন্তর্জাতিকভাবে বাণিজ্যিক অনুমোদনের অভাবে প্রবল অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে। বিশ্বশক্তি ইরানকে তার পারমানবিক কর্মসূচি বাতিল করতে প্রধানত এই চাপ প্রয়োগ করছে। এর বাদেও ইসরায়েল-ফিলিস্থিন ইস্যুতে ইরানের অনমনীয় ভূমিকা রয়েছে। তবে এই মধ্যপ্রাচ্যের পরাশক্তির তেলের রপ্তানি তরঙ্গায়িত হয়েছে, বলেছেন তেহরানের তেল মন্ত্রী জাওয়াদ ওজি এই মাসের শুরুতে।
আন্তজাতিক শক্তি সংস্থা বা ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির তথ্যানুসারে, ইরান এই মাসে প্রায় ৫৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মুনাফা ঘরে আনতে পেরেছে। তাদের আনুমানিক বাজেট ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সামান্য কম মুনাফা হয়েছে।
রয়টার্সকে দেওয়া একটি স্বাক্ষাৎকারে সৌদি অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘এই অঞ্চলের জন্য স্থায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তেমনিভাবে পুরো বিশ্বের জন্য ও এই অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য। আমরা সবসময় বলেছি যে, ইরান আমাদের প্রতিবেশী ও আমাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে সংঘাতের কোনো আগ্রহ নেই, যদি তাদের সহযোগিতার আগ্রহ থাকে।’
ইরানের জটিল বদলি সেনাদল ইয়েমেনের হুতি বিদ্র্রোহী ও ইরাকি মিলিশিয়াদের মধ্যে পাঠানোয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা সহযোগী দেশগুলো নিয়মিতভাবে তাদের উদ্বেগ বাড়িয়ে চলেছে।
এর মধ্যে চীনের সহযোগিতায় মধ্যপ্রাচ্য ও আরব বিশ্বের প্রধান দুটি দেশের মধ্যে উত্তেজনা থামলো। চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর ফলে তাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছে।
সৌদি অথমন্ত্রী আরও বলেছেন, ‘আমাদের ইরানে বিনিয়োগ না করার কোনো কারণ নেই এবং তাদের সৌদি আরবে বিনিয়োগ না করতে দেওয়ার কোনো কারণ নেই। আমাদের আগ্রহ এটি যে, একে-অন্যের সম্পদগুলো থেকে দুটি দেশই যেন লাভবান হতে পারে তা নিশ্চিত করা এবং আমাদের মধ্যে যেন প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা তৈরি হয়।’
তিনি বলেছেন, ‘যদি তারা (ইরান) এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে আগ্রহী থাকে, তাহলে আমাদের আরো আগ্রহ রয়েছে এই প্রক্রিয়াতে এবং তাদের দেখানোর বাসনা আছে যে, ‘আপনারা স্বাগত’। আমরা তাদের উন্নয়নে অংশীদার হতে পারলে আরো বেশি খুশি হব।’
২০১৬ সালে ইরানের সঙ্গে সকল ধরনের বন্ধন বিচ্ছিন্ন করেছে সৌদি আরব দুই দেশের উত্তপ্ত বাদানুবাদের পর রাজধানী রিয়াদে একজন প্রধান শিয়া মুসলমানের প্রাণদন্ড দেবার পর এবং তাদের তেহরান দূতাবাসের ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে যাওয়ায়।
সৌদি রাজত্ব ২০১৯ সালে তাদের কমপ্লেক্সগুলোর ওপর ইরানি মিসাইল ও ড্রোন হামলার জন্যও দেশটিকে চরমভাবে দায়ী করে চলেছে। এ ছাড়া, তারা গলফের পানিতে তাদের তেলবাহী ট্যাংকারগুলোর ওপর আক্রমণের জন্যও দেশটিকে দায়ী করেছে। এই অভিযোগগুলো ইরান অস্বীকার করে চলেছে।
চীনের মধ্যস্থতায় দুই দেশের কূটনীতি আবার চালু হওয়ার পর দুটি দেশটি ২০০১ সালের নিরাপত্তা চুক্তিকে আবার চালু করতে রাজি হয়েছে। এই চুক্তির অধীনে মাদকগুলোর পরিবহনের ক্ষেত্রে ইরান ও সৌদি আরবের যৌথ সমঝোতা রয়েছে। চিহ্নিত এবং সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসের বিপক্ষেও তাদের যৌথ অপারেশন রয়েছে, তার বাদেও তাদের বাণিজ্য, অথনৈতিক ও বিনিয়োগের সহযোগিতা পুরোনো ও নতুন চুক্তিতে রয়েছে।
সৌদি অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘আবার কূটনৈতিক সম্পক শুরু করার মানে এই নয় যে আমরা কঠোর তপস্যা করছি...সৌদি আরবের কূটনৈতিক সম্পর্কগুলো হলো তার আদর্শ এবং আমাদের সবার সঙ্গেই তা থাকা উচিত।’
ওএফএস/