ফিলিপাইনে সামরিক ঘাঁটি বাড়াবে যুক্তরাষ্ট্র
ফিলিপাইনে আরও চারটি সামরিক ঘাঁটি বাড়াবে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়িড অস্টিনের সফরকালে এই অনুমতি প্রদান করেছে দেশটির রাজধানী ম্যানিলা। যুক্তরাষ্ট্রকে পুরো ফিলিপাইনজুড়ে সামরিক ঘাঁটি বাড়ানোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) দেশ দুটি বলেছে, চীনের অহংবোধে দক্ষিণ চীন সাগরে সামরিক উন্নতি ঘটানো ও স্বশাসিত তাইওয়ানে উত্তেজনা বাড়ানোর প্রেক্ষিতে উদ্বিগ্ন হয়ে তারা এই চুক্তি করেছে।
দুই দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের বিবৃতিতে যৌথভাবে ঘোষণা করেছে, ওয়াশিংটনকে ২০১৪ সালের একটি এনহান্সড ডিফেন্স কো-অপারেশন এগ্রিমেন্ট (ইডিসিএ) বা একটি উন্নত প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সমঝোতার অধীনে আরও চারটি নিরাপত্তা স্থান দেওয়া হবে।
ইডিসিএ’র অধীনে অবকাঠামোগত বিনিয়োগে বর্তমানে পাঁচটি স্থানে ৮২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বরাদ্দ প্রদান করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইডিসিএ ফিলিপাইনে মার্কিনীদের পাঁচটি নিরাপত্তা ঘাঁটিতে যৌথ সামরিক প্রশিক্ষণ, সরঞ্জাম স্থাপন, বিমানের রানওয়ে তৈরি, তেলের গুদাম স্থাপন ও সামরিক আবাসন করতে সুবিধাগুলো প্রদান করেছে। তবে এই চুক্তি অনুসারে দেশটি সেখানে স্থায়ীভাবে থাকতে পারবে না।
গেল বছরের অক্টোবরে আরও পাঁচটি অতিরিক্ত সামরিক ঘাঁটি গেড়ে সেগুলোতে বিপুল মাত্রায় তার সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের প্রবেশ ও অস্ত্র স্থাপন করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
তবে আজকের বিবৃতিতে কোন অতিরিক্ত ঘাঁটিগুলো মার্কিনীদের ব্যবহারের জন্য প্রদান করা হতে পারে তা নির্দিষ্ট করা হয়নি। ফিলিপাইনের সাবেক সেনাবাহিনী প্রধান লেফট্যানেন্ট জেনারেল বার্তোলোমে বাকাররো এর আগে বলেছেন, ‘মাকিন যুক্তরাষ্ট্র তার দেশের উত্তরের খন্ড লুজনে ব্যাপকভাবে, তাইওয়ানের সঙ্গে দেশের সবচেয়ে কাছাকাছি অংশ, পালাওয়ান দ্বীপের ঘাঁটিগুলো এবং দক্ষিণ চীন সাগরে তাদের ছোট, ছোট বিতর্কিত দ্বীপগুলোতে প্রবেশ সেগুলোও ব্যবহারের অনুমতির জন্য অনুরোধ করেছে।’
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মি. অস্টিন ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে তার সমকক্ষ দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কারলিতো গ্যালভেজের সঙ্গে বৈঠকের আগেই দেশের প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়রের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
তিনি মঙ্গলবার দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ফিলিপাইনে এসেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোরিয়ান উপদ্বীপে তার দক্ষিণ কোরিয়ান মিত্রের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার পারমানবিক হুমকিতে সাড়া দিতে অগ্রসর অস্ত্রগুলোর মাধ্যমে নিজের স্থাপনাগুলো বাড়াতে পারে। সেগুলোর মধ্যে থাকবে ফাইটার জেট ও বোম্বারগুলো। এগুলো দিয়ে তারা দক্ষিণ কোরিয়ার সশস্ত্র বাহিনীগুলোর সঙ্গে যৌথ প্রশিক্ষণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করবেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী লয়িড অস্টিন ফিলিপাইনের শহর জামবুয়াঙ্গা সফর করেছেন। দক্ষিণের এই শহরে তিনি ফিলিপাইনের সেনা বাহিনীর জেনারেলদের সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি তাদের সন্ত্রাসে সাড়া দেওয়া ছোট একটি মিলিটারি কন্টিনজেন্টে গিয়েছেন। সেটি আছে স্থানীয়দের সামরিক ঘাঁটিতে বলেছেন ফিলিপাইনের আঞ্চলিক সামরিক কামান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল রায় গালইদো। কয়েক বছর ধরে ১শর বেশি মার্কিন বাছাই সামরিক ব্যক্তিত্ব ও সেনা অফিসার কৌশলগত ও গোয়েন্দা এবং যৌথ পরামর্শগুলো প্রদান করছেন ফিলিপাইনের সেনা অফিসারদের, যাতে তারা দশকের পর দশক স্থায়ী স্থানীয় মুসলমানদের বিদ্রোহ ও সামরিক সন্ত্রাসকে আরো ভালোভাবে এবং কার্যকর উপায়ে মোকাবেলা করতে পারেন। ফিলিপাইন এই সশস্ত্র বিদ্রোহীদের স্বস্তিপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে আসতে পারলেও এখনো তারা একটি মৌলিক হুমকি হিসেবে রয়ে গিয়েছেন।
সর্বসম্প্রতি মার্কিন সেনা সদস্যরা তীব্র ও প্রসারিত যৌথ প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছেন। তারা যুদ্ধকালীন প্রস্তুতির দিকে জোর দিয়েছেন ও বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মার্কিন কায়দায় প্রশিক্ষণ প্রদান করেছেন। ফিলিপাইনের সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে তাদের যৌথ মহড়ার আয়োজন করা হয়েছে দেশটির পশ্চিমের উপকূলভাগে। এই অংশটি চীনের দক্ষিণ সাগরের মুখোমুখি। এছাড়াও উত্তরের লুজন অঞ্চলে সাগরের ভেতর দিয়ে, যেটি তাইওয়ান প্রণালীর কাছে।
২০২১ সালের নভেম্বরে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের ফিলিপাইন সফর অনুসরণ করে এসেছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। কমলা হ্যারিস সামরিক স্থাপনা পালাওয়ানে থেমেছিলেন।
ফিলিপাইন ও তাদের আসিয়ানের সদস্যভুক্ত দেশ ব্রুনাই, মালায়শিয়া ও ভিয়েতনাম তাইওয়ানের সঙ্গে দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে চীনের সঙ্গে আঞ্চলিক উত্তেজনার মোকাবেলা করছে। সাগরের অধিকার নিয়ে চীনের সঙ্গে ফিলিপাইনের যুদ্ধ বেঁধে গেলে তাদের সামরিক সদস্যদের সাহায্য করতে দেশটিতে এসেছেন মার্কিন সামরিক সদস্যরা। সেজন্য তাদের বিমান ও জাহাজগুলো এখানে রয়েছে।
এই আমেরিকারদের দেশের বাইরে সবচেয়ে বড় সামরিক অতিথি দেশ এখন ফিলিপাইন। তবে ৯০’র দশকের শুরুর দিকে ফিলিপাইনের সিনেট মার্কিন বিস্তার করতে অস্বীকার করে বিল পাশ করলে মার্কিনীরা তাদের এই সামরিক ঘাঁটিগুলো বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। তবে ১৯৯৯ সালের ভিজিটিং ফোর্স এগ্রিমেন্টের অধীনে মার্কিন সশস্ত্র বাহিনী ফিলিপাইনের সামরিক সদস্যদের সঙ্গে বড় আকারের যুদ্ধকালীন মহড়া শুরু করতে ফিরে এসেছে ফিলিপাইনে। তবে ফিলিপাইনের সংবিধান বিদেশী সেনা সদস্যদের স্থায়ী ঘাঁটি তৈরি এবং স্থানীয় যুদ্ধে তাদের জড়িত হতে নিষিদ্ধ করেছে।
ওএফএস/এএস