গির্জায় যাওয়ার অপরাধে গ্রাম থেকে উচ্ছেদ!
একটি পাঁচ বছরের মেয়ে তার পুরো শক্তি দিয়ে একটি বেলুন ফোলাচ্ছে। সে তার প্রতিযোগীদের সঙ্গে বিজয়ী হতে চায়। এজন্য তাকে বাকিদের চেয়ে বড় করতে হবে বেলুনটি। তাদের এই দলের সামান্য দূরে আছে আরেক দল-দুটি শিশু, যারা আলাদা দুটি গ্রাম থেকে এসেছে। তারা সর্বশক্তি দিয়ে একটি ওড়না টানাটানি করছে। ওড়নার দখল নিয়ে তারা যুদ্ধে মেতেছে। আর দুটি শিশু খেলছে জামাই-বৌ। দুই বছরের মেয়েটি হয়েছে বউ আর তিন বছরের ছেলেটি সেজেছে বর। আরেক জায়গায় আরও বয়সের শিশুরা মেতেছে ভলিবল খেলায়। এই শিশুদের বেশিরভাগই ভিন্ন ভিন্ন গ্রামের সন্তান। কয়েক মাস আগেও ছিল একে, অন্যের কাছে পুরো অচেনা, যখন তাদের পরিবারগুলোকে ভারতের ছত্রিশগড় রাজ্যের ১৫টি গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হলো, উচ্ছেদ করা হলো।
তাদের অপরাধ, তারা গির্জায় যান। পুলিশ বিভাগ জানিয়েছে, বাড়ি-ঘর থেকে উচ্ছেদ মানুষগুলো এখন ছত্রিশগড়ের নারায়ণপুরের একটি ইনডোর স্টেডিয়ামের ভেতরে অস্থায়ী ক্যাম্প বানিয়ে শরণার্থী হিসেবে জীবন কাটাচ্ছেন।
জেলা কর্তৃপক্ষের বিবরণ অনুসারে, মোট চার শতাধিক আদিবাসী খ্রিস্টানকে নিজেদের বাড়ি থেকে সহিংসতা, সংঘাত, আক্রমণ ও মারধর করে জোর করে বের করে দেওয়া হয়েছে। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। তারা ছত্রিশগড়ের নারায়ণপুর, কোন্ডেগাঁও এবং খানকের জেলার আদি বাসিন্দা। সবাই এখন শরনার্থী শিবিরে।
সবকিছু থেকে উচ্ছেদ হয়ে বয়স্ক মানুষদের মধ্যে পরিস্থিতি বোঝার ক্ষমতাও যখন হারিয়ে গেল, শিশু-যারা খুব ছোট তারা তো পরিস্থিতি বুঝতে অক্ষম, শিশুদের কাছে এই অস্থায়ী আবাসই একটি সুখী স্থান হয়ে গেল। সেখানে তারা তাদের নতুন বন্ধুদের সঙ্গে পরিচিত হলো ও তাদের বন্ধুত্ব গড়ে উঠলো। তাদের জীবনের সবচেয়ে মজা হলো, খেলাধুলা তো অবারিত করতেই পারছে, কেউই তাদের পড়তে বসতে বা বাড়ির কোনো কাজ করতে হুকুম করছে না। তাদের মায়েরাও নন।
এই আদিবাসী সম্প্রদায়ের একজন সোনি কাপদে, নারায়ণপুর জেলার বোরাওয়ানে গ্রামের বাসিন্দা বলেছেন, ‘ওদের হাসতে ও গল্প করতে দেখে আমাদের চাপগুলোও চলে যাচ্ছে। ওরা নতুন বন্ধু পেয়ে খুব খুশি হয়েছে। সারাদিন ধরে সবাই মিলে খেলছে। বুঝতে পারার জন্য খুব ছোট বলেও তারা কী ঘটেছে, পরিস্থিতি তেমন জানে না, মনেও রাখে না।’
এই শরনাথী শিবিরে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম দি প্রিন্টের আলোকচিত্র সম্পাদক পারভীন জৈন কিছু হাসি আনন্দের ছবি তুলেছেন। কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে তিনি লিখেছেন, গির্জাতে যাওয়া দুই শতাধিক আদিবাসী পুরুষ নারী ও শিশু-কিশোর-কিশোরীরা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হওয়ার পর থেকে এখানে বসবাস করছেন।
ওএফএস/এএস