দক্ষিণ কোরিয়াতে ভয়াবহ শ্রমিক ধর্মঘট চলছে
দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে হাজার, হাজার বিক্ষোভকারী শ্রমিক সমাবেশ করছেন। শনিবার (৩ নভেম্বর) তারা পদযাত্রা করে চলে এসেছেন রাজধানীতে। তারা ধর্মঘটে অংশে নেওয়া হাজারের বেশিট্রাককেও কাজে ফেরত নিয়ে যাবার বিপক্ষেও বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন। এই বিক্ষোভের শুরু মালবাহী ট্রাকের খবর বাড়ানোর বিপক্ষে।
জাতীয় সংসদের পাশে তাদের বিক্ষোভ চলছে। তবে এখানে গুরুতর কোনো সংঘাতের খবর এখনো ছাপা হয়নি। বিক্ষোভকারীদের বেশিরভাগই দ্য কোরিয়ান কনফেডারেশন অব ট্রেড ইউনিয়নসগুলোর সদস্য।
তারা প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইয়ল সরকারের বিপক্ষে শ্রমিকদের শোষণ পরিবর্তন না করার মনোভাব, তেলের খরচ বেড়ে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় পৌঁছানো, ট্রাক ড্রাইভারদের কঠিন ও বিরামহীন কর্মপরিবেশ এবং আর্থিক দৈন্যতার অবসানের জন্য এই শ্রমিক ধর্মঘট ও সমাবেশের ডাক দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সরকার ধর্মঘটে অংশ নেওয়া ২ হাজার ৫০০ সিমেন্ট ট্রাককে কাজে ফিরে যেতে আদেশ দিয়েছেন। জাতীয় অর্থনীতিতে তীরের মতো আঘাত করছে তাদের কর্মে যোগদান না করা। তবে এরপর কত ট্রাক কাজে ফিরে গিয়েছে সেই খবর এখনো ভালোভাবে জানা যায়নি। কেননা তাদের ইউনিয়ন ধর্মঘট চালিয়ে যেতে আহ্বান জানিয়েছে।
সিমেন্টবাহী ট্রাকের পাশাপশি কয়েক হাজার কার্গো ট্রাক তাদের সংগঠনগুলোর ঐক্যমতের ভিত্তিতে গেল সপ্তাহ থেকে ধর্মঘট করছে। ২০২২ সালে শেষ হওয়া নুন্যতম সরকারি মজুরি বহাল রাখার বিপক্ষে তারা আন্দোলন করছেন। তারা জীবনযাপনের জন্য একটি নূন্যতম মজুরি প্রদানের দাবি করছেন।
মালবাহী কন্টেইনারের শ্রমিকরাও এই ধর্মঘটে যোগ দিয়েছেন।
এই কারণে দক্ষিণ কোরিয়াতে প্রবল আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। কেননা, সিমেন্ট ও শিপিং কনটেইনারের চালক এবং শ্রমিকরা অন্যান্য কার্গোগুলোতে তাদের দাবি করা মজুরি এবং সুবিধাদির জন্য বিক্ষোভ করছেন। এর ফলে এই শ্রমিক ধর্মঘটে তেলবাহী ও কেমিক্যাল ট্যাংকারগুলোও যোগ দিতে পারে।
বিক্ষোভে যোগ দিতে পারে স্টিল ও অটোমোবাইল ক্যারিয়ারগুলো এবং প্যাকেজ মালামাল আনা-নেওয়া করা ট্র্যাকগুলো। তারা সবাই বৃহত্তর ঐক্যমতের ভিত্তিতে এই আন্দোলনে যোগদানের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে সরকারী কর্মকর্তাও উদ্যোগ গ্রহণ করছেন। ফলে বন্দরগুলোতে কন্টেইনার ট্রাফিকগুলো স্বাভাবিক অবস্থার ৮১ শতাংশে আবার পৌঁছাতে পেরেছে শনিবার সকালে।
গেল সপ্তাহে মোটে প্রায় ২০ শতাংশ কন্টেইনারগুলোকে তারা বন্দরগুলোতে আনতে পেরেছিলেন। এই তথ্যগুলো প্রদান করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার ভূমি, পরিকাঠামো এবং যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। তারা আরও জানিয়েছেন শনিবার থেকে প্রায় ৫ হাজার ট্র্যাক ধর্মঘটে যোগদানরত অবস্থায় রয়েছে। তবে দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার তাদের বির্তকিত ২০০৪ সালের একটি আইনানুসারে ট্র্যাকগুলোর চালক ও কর্মীদের তাদের চাকরিতে ফেরত যেতে নির্দেশ দিয়েছে।
এই আইনে সমর্থনযোগ্য কোনো কারণ ব্যতিরিকে কাজ না করলে বা নিয়ম ভাঙলে তিন বছর পর্যন্ত জেল বা সর্বোচ্চ ৩০ মিলিয়ন ইয়েন জরিমানার আদেশদানের অধিকার রয়েছে আদালতের। টাকার অংকে তা ২২ হাজার ৪শ মার্কিন ডলার। শহরগুলো থেকে জানানো হয়েছে, একটি ধর্মঘটে কী ধরণের গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে সেটি পরিস্কারভাবে সংবিধানে নেই। শ্রমিকরা জানাচ্ছেন, তারা সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ করছেন। অন্যদিকে সরকারী কর্মকর্তারা আইন লংঘনের অভিযোগ করছেন। শহরে, শহরেও শ্রমিকদের বিক্ষোভ ছড়িয়েছে।
সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা সবার আগে সিমেন্ট ট্রাকগুলোর চালক ও কর্মীদের কাজ শুরু করার নির্দেশ জারি করেছেন। কেননা নির্মাণ খাত তাদের মালামাল প্রাপ্তিতে সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির মোকাবেলা করছে। তাদের কাছে মাল পৌঁছাচ্ছে না বলে মুখ থুবড়ে পড়েছেন। তারা আশা করছেন, ট্র্যাকগুলোর চালকদের মালামাল আনা-নেওয়ার জন্য পরিবহন বাবদ তেল খরচ সরকারি বিশেষ নির্দেশে প্রদানের আদেশটি এরপরের ধাপে লাভ করবেন। তারা আরো বিবেচনা করবেন যে, গ্যাস স্টেশনগুলোতে জ্বালানির সংকট চলছে।
এই ধর্মঘট দক্ষিণ কোরিয়ার দেশীয় শিল্পখাতকে প্রবলভাবে আক্রান্ত করেছে। তবে রপ্তানি নির্ভর শিল্পকারখানাগুলোও অচল হয়ে গিয়েছে কি না এই বিষয়ে কোনো পূর্ণ তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। শ্রমিকরা তাদের নূন্যতম আর্থিক ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা প্রদানের জন্য দাবি করছেন। তারা বলছেন এই বিষয়গুলোর সমাধান না করে তাদের জোর করে গাড়ি চালানোর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
ওএফএস/