‘অন্য নারীর সঙ্গে স্ত্রীর তুলনা মানসিক নির্যাতনের শামিল’
স্ত্রীকে অন্য নারীর সঙ্গে তুলনা করা এবং স্ত্রী হিসেবে প্রত্যাশাপূরণে ব্যর্থ- স্বামীর এমন মন্তব্য মানসিক নির্যাতনের শামিল বলে রায় দিয়েছে ভারতের কেরালা রাজ্যের হাইকোর্ট।
একটি বিয়ে বিচ্ছেদের মামলাকে কেন্দ্র করে আদালত এ রায় দেয় বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে এতথ্য জানানো হয়।
ওই মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে বিয়ে করেন ওই দম্পতি। সেই সময়ে স্বামীর বয়স ২৯ বছর এবং স্ত্রীর ২৬ বছর ছিল। কিন্তু নানা কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তেমন ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়নি। ওই বছরের নভেম্বরেই বিচ্ছেদের মামলা করেন স্ত্রী। দীর্ঘ সময় বিচ্ছিন্ন থাকার পরে বিবাহ বিচ্ছেদের রায় দিয়েছিল পারিবারিক আদালত। সেই রায়ের বিরুদ্ধে কেরল হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন স্বামী। কিন্তু তার আবেদন খারিজ করেছে হাইকোর্ট। সেই সময়ই এ মন্তব্য করে আদালত।
পারিবারিক আদালতে বিচ্ছেদের রায় ঘোষণার সময়ে জানানো হয়েছিল, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে পরিপূর্ণতা না-থাকায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়েই পাল্টা মামলা করেন স্বামী। কেরল হাইকোর্টে বিচারপতি অনিল কে নরেন্দ্রন এবং বিচারপতি সিএস সুধার বেঞ্চ বিচ্ছেদের রায় বহাল রেখেও তার কারণ হিসাবে ১৮৬৯ সালের বিচ্ছেদ আইনের উল্লেখ করে জানিয়েছেন, এ ক্ষেত্রে বিষয়টি মানসিক নির্যাতনের মধ্যে পড়ে।
হাইকোর্ট জানিয়েছে, স্বামীর তরফে বার বার বলা হয়েছে স্ত্রী তার প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ। এ ক্ষেত্রে অন্য নারীর সঙ্গে স্ত্রীর তুলনাও টেনে আনেন স্বামী। স্বামীর এমন আচরণ কোনো স্ত্রীর পক্ষে সহনীয় নয়। তা মানসিক নির্যাতনের শামিল।
এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে স্ত্রী ও তার মায়ের সাক্ষ্য। সঙ্গে স্ত্রীকে পাঠানো স্বামীর ই-মেল। সম্পর্ক রাখতে গেলে স্ত্রীকে কেমন আচরণ করতে হবে তার নির্দেশনা দেওয়া ছিল ওই ই-মেইলে। এ ক্ষেত্রে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর অবহেলার বিষয়টিও তুলে ধরেছে আদালত। সঙ্গে আদালত জানিয়েছে, স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রী অভিযোগ এনেছেন যে, তিনি আকর্ষক নন বলে তার সঙ্গে সহবাসেও অনিচ্ছুক ছিলেন স্বামী। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে দাম্পত্য সম্পর্কে স্বামীর ব্যবহার যথোপযুক্ত এবং স্বাভাবিক ছিল না বলেও উল্লেখ করেছে আদালত। যদিও খুব অল্প সময়েই একসঙ্গে থেকেছেন ওই দম্পতি।
আদলতের বক্তব্য, এক্ষেত্রে দুজনের সম্পর্কের ত্রুটি-বিচ্যুতি সংশোধন সম্ভব নয় বলেই মনে হচ্ছে। শুধু নামেই বিয়ে টিকিয়ে রাখা অর্থহীন। তাই বিচ্ছেদের সিদ্ধান্তই জারি রাখা বাঞ্ছনীয় বলে জানায় আদালত।
এসএন