সোমালিয়ায় আল-শাবাবের গাড়িবোমা হামলায় ৩৫ জনের মৃত্যু
সোমালিয়ার মধ্যাঞ্চল, হাইরানের মাহাস শহরে বুধবার (৪ জানুয়ারি) আল-শাবাব সন্ত্রাসীদের দুটি গাড়িবোমা হামলায় এই পর্যন্ত অন্তত ৩৫ জন মারা গিয়েছেন। তাদের মধ্যে একই পরিবারের আটজন সদস্য রয়েছেন। শহরটিতে এই সাম্প্রতিক বোমা হামলায় আল-শাবাবের সঙ্গে আল-কায়েদার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ করেছে সরকার।
এই দুটি সংগঠনের বিপক্ষে যুদ্ধ করা সরকার ও আদিবাসী গোষ্ঠীর সশস্ত্র সদস্যরা মিলে তাদের দীর্ঘদিন দখল করে রাখা অঞ্চলটি থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর এটিই সবচেয়ে বড় হামলা।
হেরশাবিন রাজ্যের উপ-পুলিশ কমিশানার হাসান-কাফি মোহামেদ ইব্রাহিম বলেছেন, ‘বেশিরভাগ সাধারণ মানুষই মৃত্যুবরণ করেছেন। তারা নারী ও শিশু। নয় সদস্যের পরিবারের একটি মাত্র শিশু বেঁচে গিয়েছে। অন্য পরিবারগুলোও তাদের অর্ধেক সদস্য হারিয়েছে। দুটি আত্মঘাতী কার বোমা হামলা অনেক সাধারণ পরিবারের বাড়িঘর পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে।’
মাহাস জেলার কমিশনার মুমিন মোহামেদ হালান বলেছেন, একটি বোমা তার বাড়ি লক্ষ্য করে হামলা করা হয়েছে। আরেকটি আঘাত করেছে ফেডারেল পার্লামেন্টের একজন সদস্যের বাড়িতে।
সোমালিয়ার প্রেসিডেন্ট হাসান শেখ মোহামুদ আল-শাবাবের বিপক্ষে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। এর ফলে দুর্বল ফেডারেল সরকারের আন্তর্জাতিক সাহায্য নিয়ে এই আল-শাবাব ও আল-কায়েদার বিপক্ষে ১৫ বছরের মধ্যে তীব্র যুদ্ধ চলছে।
জুলাই মাসে মেকোলিয়ানজ নামে পরিচিত স্থানীয় আদিবাসী গোষ্ঠী আল-শাবাবের বিপক্ষে মধ্য সোমালিয়ার বিভিন্ন অংশে বিদ্রোহ শুরু করেছে। তাদের যুদ্ধে সাহায্য করতে মোহামুদ সাম্প্রতিক মাসগুলোকে সেনাদের প্রেরণ করছেন।
এই মাসগুলোতে সরকারি সেনাবাহিনী ও স্থানীয় গোষ্ঠীগুলোর সৈন্যরা মিলে দেশের মধ্য এলাকার গালমুদক ও হেরশাবিন প্রদেশের বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করেছেন। তারা হাইরানেও মার্কিন বিমান বাহিনী ও আফ্রিকান ইউনিয়নের সেনাবাহিনীর সাহায্য নিয়ে অপারেশন পরিচালনা করছেন।
এদিকে বিদ্রোহীরা একের পর এক রক্তক্ষয়ী হামলার মাধ্যমে প্রতিশোধ নিচ্ছেন। তারা সোমালিয়ার শহরগুলোর কেন্দ্রে একের পর এক হামলা করছেন এবং সামরিক স্থাপনাগুলোর ক্ষতিসাধন করে চলেছেন।
দেশের প্রধান শহরাঞ্চলগুলো থেকে ১০ বছর আগে সরে গেলেও আল-শাবাব এখনো দেশের গ্রামীণ এলাকা, পৌর এলাকা ও দক্ষিণাঞ্চলে সুরক্ষিত এবং শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তারা একের পর এক হামলা করছে। এর মধ্যে তারা রাজধানী মোগাদিসুতে সরকারি প্রতিষ্ঠান ও হোটেলগুলোতে রক্তক্ষয়ী হামলা করেছে। জঙ্গী সংগঠনটি আন্তর্জাতিক সাহায্যগুলোকে দুর্বল করে দিয়েছে। এর ফলে হর্ণ অব আফ্রিকার দেশটি চার দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থার মোকাবেলা করছে।
হাইরান অঞ্চলের রাজধানী বিলেদুইন শহরে অক্টোবর মাসে তাদের পরপর তিনটি বোমা হামলায় ৩০ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মোগাদিসুর একটি হোটেল তারা কমপক্ষে ৩০ ঘন্টা দখল করে রেখেছে ও ২১ জনকে মেরেছে। এরপর হোটেলটি নিরাপত্তা কর্মকর্তারা দখল করতে পেরেছেন।
এই বছরের ২৯ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দুটি বিধ্বংসী কার বোমা হামলায় রাজধানী মোগাদিসুর ১২১ জন বাসিন্দা মারা গিয়েছেন। ফলে পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ২৭ নভেম্বর রাজনীতিবিদ ও সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে জনপ্রিয় একটি হোটেল তারা ২১ ঘন্টা দখল করে রেখেছে ও আটজন সাধারণ মানুষকে মেরে ফেলেছে।
ওএফএস/এএস