এবার ডিসেম্বরেও দুর্বল হয়ে টিকে থাকবে ডেঙ্গু
বাংলাদেশে ডেঙ্গু জ্বর প্রথম শনাক্ত হয় ২০০০ সালে। তখন থেকেই দেখা যাচ্ছে সাধারণত অক্টোবর দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত ডেঙ্গু থাকে। কিন্তু এবার ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা ডিসেম্বরেও থাকবে বলে জানাচ্ছেন কীটতত্ত্ববিদরা। যদিও তখন এটি দুর্বল হয়ে যাবে।
কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত ডেঙ্গুর মৌসুম। ২০০০ সাল থেকেই এমনটাই হয়ে আসছে। কিন্তু এবার দেখা যাচ্ছে ডেঙ্গুর আচরণ সম্পূর্ণ উল্টো। এবার ডিসেম্বরেও ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকবে।
যে অক্টোবরের শেষ দিকে ডেঙ্গু থাকারই কথা নয় সেই অক্টোবরে ডেঙ্গুতে রেকর্ড ৮৬ জন মারা গেছেন। নভেম্বরের ১৫ দিনেই মারা গেছেন ৭২ জন। অর্থাৎ আগের ধারা অনুযায়ী যে মাসগুলোতে ডেঙ্গু থাকারই কথা নয় সেই মাসগুলোতেই ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করেছে।
জানতে চাইলে কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কবীরুল বাশার ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আজ (১৫ নভেম্বর) থেকেই ডেঙ্গুর প্রকোপ কমতে শুরু করেছে। আজ মৃত্যু বেশি হলেও আক্রান্ত কম। এই প্রকোপ কমতে থাকলেও পুরোপুরি যাবে না। দুর্বল হয়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত থেকে যাবে।
এডিস মশার এ আচরণ পরিবর্তন প্রসঙ্গে কবিরুল বাশার বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন, মানুষের শরীরে নতুন রোগজীবানু তৈরিসহ ওয়াসার পানির লিকেজ ও পার্কিংয়ের গাড়ি ধোয়া একটা বড় কারণ।
অক্টোবর-নভেম্বরেও যে এডিস মশা ভয়ংকর রূপে টিকে আছে এর কারণ হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলামও দায়ী করেছেন জলবায়ু পরিবর্তনকে। একই কথা বলছেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসও।
সম্প্রতি ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, বিশেষজ্ঞদের অভিমত অনুযায়ী আমরা দেখেছি, সেপ্টেম্বরের পর থেকে ডেঙ্গু রোগের বিস্তার কমে আসে। কিন্তু এবার আমরা দেখছি তার উল্টো হয়েছে। এটা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ইকরামুল হকও বলেন, প্রতিকূল আবহাওয়া এবং মানুষের সচেতনতা কম হওয়ায় আমরা এখনো ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনতে পারিনি। এটা আমাদের জন্য অবশ্যই উদ্বেগের।
এবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুতে রেকর্ড হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, চলতি বছরের ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২১৩ জন। এ সময়ে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৪৯ হাজার ৯৯২ জন।
যদিও আগের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে আক্রান্ত ও মৃত্যু ছিল চলতি বছরের অর্ধেক। ওই বছর সারাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। তার মধ্যে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়।
আরইউ/আরএ/