‘অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ এপনিয়া’ এক নীরব ঘাতক: চিকিৎসক
‘অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ এপনিয়া’ বিশ্বব্যাপী একটি অবহেলিত নীরব ঘাতক ব্যাধি। বাংলাদেশে শহুরে জনসংখ্যার শতকরা ৪ দশমিক ৪৯ ভাগ পুরুষ ও ২ দশমিক ১৪ শতাংশ মহিলারা এই ‘অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ এপনিয়া’ রোগে আক্রান্ত। মূলত ঘুমের মধ্যে কিছু সময়ের জন্য শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়াকে বলা হয় ‘স্লিপ এপনিয়া’।
চিকিৎসকরা বলছেন, এ রোগ মানুষের জন্য একটি নীরব ঘাতক। এই রোগে ঘুমের মধ্যে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে শতকরা ২ ভাগ মহিলা এবং ৪ ভাগ পুরুষ এ রোগে আক্রান্ত।
নীরব ঘাতক রোগ ‘অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ এপনিয়া’ শীর্ষক সেন্ট্রাল সেমিনারে এসব তথ্যে উঠে এসেছে।
রবিবার (১০ এপ্রিল) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এ ব্লকের মিলনায়তনে এই সেমিনারের আয়োজন করে সেন্ট্রাল সেমিনার সাব কমিটি।
সেন্ট্রাল সেমিনার সাব কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. বেলায়েত হোসেন সিদ্দিকী’র সভাপতিত্বে ও সেমিনারে রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সম্প্রীতি ইসলামের সঞ্চালনায় সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। বক্তা ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন।
উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, যাদের নাক ডাকার সমস্যা, যাদের ঠিক মত ঘুম হয় না, যাদের শরীর স্থূলাকার, তারা এ ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন। এ রোগের চিকিৎসা রয়েছে। ক্ষেত্রে বিশেষে কোনো কোনো রোগীর সার্জারির প্রয়োজন হয়।
তিনি বলেন, ‘স্লিপ এপনিয়া’ রোগ সম্পর্কে মানুষ জানে না। তাদের এ রোগ সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এ রোগের পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা হয়। এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে চিকিৎসা নেবার পরামর্শ দেন উপাচার্য।
উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন বলেন, স্লিপ এপনিয়া সারাবিশ্বের একটি অবহেলিত ঘাতক ব্যাধি। তবে এখনো স্লিপ এপনিয়ায় শতকরা ৯০ শতাংশ রোগী চিকিৎসা আওতার বাইরে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এখন এই রোগের চিকিৎসা রয়েছে। আমাদের দেশে এই রোগ সম্পর্কে চিকিৎসক ও রোগীদের মধ্যে আরও সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের এখানে দুটি স্লিপ ল্যাব রয়েছে। গত পাঁচ বছর এখান থেকে আমরা ‘স্লিপ এপনিয়া’ রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে আসছি।
চিকিৎসকদের উদ্দেশ্য অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন বলেন, স্লিপ এপনিয়ার সচেতনার লক্ষে প্রত্যেক চিকিৎসককে সচেতন হতে হবে। সচেতনার জন্য প্রত্যেক চিকিৎসকের উচিত রোগীর হিস্ট্রি নেওয়া। কম করে হলেও মাত্র ত্রিশ সেকেন্ড সময় বেশি ব্যয় করে চিকিৎসকদের উচিত রোগীর ঘুমের হিস্ট্রি নেওয়া।
তিনি বলেন, এ রোগের ফলে মানুষের রেসপিরটারি, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক্ট, কার্ডিয়াক ফেলিউরের মতো জটিল রোগ হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন। বক্তব্য রাখেন নাক, কান, গলা বিভাগের অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান তরফদার । সেমিনারে বিভিন্ন বিভাগের অধ্যাপক ও চিকিৎসকরা অংশগ্রহণ করেন।
এনএইচবি/এমএমএ/