শীত ও বৃষ্টিতে দুর্ভোগ বেড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষের
ছবি: সংগৃহীত
অগ্রহায়ণ মাসের শেষ ভাগের এই বৃষ্টিকে অনেকেই বলছেন শীত নামানোর বৃষ্টি। ধূসর মেঘে ঢাকা রাজধানীর আকাশ। ভোর থেকেই সারা দিন থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে এই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি রাজধানীর নিম্ন্ন আয়ের মানুষের জন্য বয়ে এনেছে সীমাহীন দুর্ভোগ।
টানা বৃষ্টিতে তাদের দৈনন্দিন আয়ে টান পড়েছে, পাশাপাশি বেশি কষ্টে ফেলেছে ঠান্ডা ও শীতল আবহাওয়া। বৃষ্টির ঠান্ডা পানিতে ভিজে অসুস্থ হওয়ার উপক্রম হয়েছেন অনেকে। তবুও জীবন-জীবিকার তাগিদে ভিজে ভিজেই কাজ করছেন তারা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমনই চিত্র চোখে পড়েছে।
বৃষ্টির কারণে কর্মব্যস্ত এবং কর্মচঞ্চল নিউমার্কেট ও আশপাশের এলাকায় বৃহস্পতিবার তেমন লোকজনের উপস্থিতি নেই। রাস্তাঘাটও কিছুটা ফাঁকা। বিভিন্ন মোড়ে জবুথবু হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন রিকশাচালক ও হকাররা। যারা রাস্তায় ঘুরে ও বাসে পান, সিগারেট ও পানি বিক্রি করেন, আজ তারাও তেমন সুবিধা করতে পারছেন না। আর এসব এলাকার ফুটপাতও ফাঁকা। নেই ভ্রাম্যমাণ দোকানিদের আনাগোনা বা হাঁকডাক।
নীলক্ষেত এলাকায় আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ছাড়া নেই অন্যান্য দিনের মতো জমজমাট অবস্থা। ধানমণ্ডি এবং কলাবাগান এলাকার মূল সড়কে স্বাভাবিক গাড়ি চলাচল ও মানুষের উপস্থিতি বেশি থাকলেও অনেকটা সুনসান আবাসিক এলাকা।
সকাল থেকে বৃষ্টির জন্য কাক্সিক্ষত যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা রিকশা চালক আমিনুর রহমান বলেন, ‘সকাল থেকেই রাস্তায় মানুষজন কম। অন্যদিন ছাত্রছাত্রীরা সকাল-সকাল বের হয়। বৃষ্টির কারণে আজ অনেকেই বের হয়নি। সকাল থেকে এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ আয় করার কথা ছিল তার কিছুই হয়নি। আর ঠান্ডা তো আছেই, কষ্ট হচ্ছে। হাত-পা বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। তারপরও ঘরে বসে থাকলে তো আর পেট চলবে না।’ বৃষ্টির পানিতে যেন ঠান্ডা না লাগে সেজন্য অনেক রিকশাচালককে মাথায় ছোট পলিথিন এবং বড় পলিথিন কেটে শরীরে পরিধান করে থাকতে দেখা গেছে।
মহম্মদ হোসেন নামের এক রিকশাচালক বলেন, ‘বৃষ্টিতে ভিজে আমাদের অভ্যাস আছে। বর্ষাকালের বৃষ্টিতে কাপড় ভিজে আবার গায়েই কাপড় শুকায়। আল্লাহর রহমতে কিছুই হয় না। কিন্তু এখনকার বৃষ্টি ভয়ংকর। কারণ অল্পতেই ঠান্ডা লেগে যায়। তাই মাথায় যেন বৃষ্টি না পড়ে সেজন্য পলিথিন দিয়ে রাখছি।’
রিকশাচালক মোকাদ্দেস বলেন, ‘আমি মোহাম্মদপুরে এক গ্যারেজে থাকি। রাতের ঠান্ডায় এমনিতেই অসুস্থ হয়ে গেছি। তার ওপর আবার সকাল থেকে বৃষ্টিতে ভিজে অবস্থা খারাপ। সকাল থেকে ৫০০ টাকার মতো ইনকাম হয়েছে, একটু পরে চলে যাব।’
এদিক, ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে বেশ বিপাকে পড়েছেন খাবার ডেলিভারির কাজ করা ফুড রাইডার ও বাইক রাইডাররাও। বৃষ্টির কারণে যাত্রী পাচ্ছেন না রাইডাররা। বৃষ্টির কারণে তেহারি, বিরিয়ানি, খিচুড়ি ও কাচ্চিসহ মুখরোচক খাবারের চাহিদা বাড়ায় বৃষ্টি মাথায় নিয়েই ছুটতে হচ্ছে ফুড রাইডারদের।
শফিক ইসলাম নামে একজন জানান, ফুড রাইডিংয়ের কাজটি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের। সারাদিনে যতটি খাবার অর্ডার প্লেস করা যায়, সে হিসাবে টাকা পাওয়া যায়। তাই বৃষ্টির কথা চিন্তা করে বসে থাকলে অর্ডার মিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে যত দ্রুত একটি অর্ডার পূরণ করা যায়, তত দ্রুত আবার আরেকটি খাবার অর্ডার নেওয়া সম্ভব হয়। সেজন্য রোদ ও ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে যেভাবেই হোক অর্ডার দ্রুত গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেওয়াটাই বড় ব্যাপার।
বৃষ্টির কারণে যাত্রী পাচ্ছেন না বলে জানান বাইক রাইডাররা। খিলক্ষেত বাস স্টপেজের পাশে ফুটওভার ব্রিজের নিচে দাঁড়িয়ে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায় বেশ কয়েকজন বাইক রাইডারকে। জোবায়ের আহমেদ নামের এক রাইডার বলেন, ‘বৃষ্টিতে যাত্রী পাওয়া যায় না।
কারণ বাইকে ছাতা নিয়ে বসাটা কঠিন। আবার সবার তো রেইনকোটও নেই। অধিকাংশ মানুষই বাসে যাচ্ছে। অন্যান্য দিন সকাল থেকে যে পরিমাণ আয় হতো আজকে তার কিছুই হয়নি। মাত্র দুইজন যাত্রী পেয়েছি। আয় হয়েছে মাত্র আড়াইশ’ টাকা।’
আবহাওয়া অফিস বলছে, বৃষ্টি হওয়ায় তাপমাত্রা কমে গিয়ে কয়েকদিনের তুলনায় বৃহস্পতিবার শীত একটু বেশি অনুভূত হচ্ছে। রোববার থেকে মেঘ কেটে জেঁকে বসবে শীত।