ঈদের ছুটিতে ঝড়-শিলাবৃষ্টির আভাস
সারাদেশে টানা দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ। এতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। দেশের কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি ছুঁয়েছে। ৫৮ বছরের মধ্যে সবচেয়ে উত্তপ্ত দিন অতিক্রম করেছেন রাজধানীবাসী। তবে এর মধ্যেও আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ঈদের ছুটিতে কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টি হতে পারে।
অন্যদিকে, কয়েকদিন এমন অবস্থা থাকলে দেশে তাপমাত্রাজনিত জরুরি অবস্থা ঘোষণার প্রয়োজন হতে পারে বলে মনে করছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
দেশের এমন পরিস্থিতিতে বৃষ্টির আশায় রাজধানীসহ সারাদেশে খোলা আকাশের নিচে বিশেষ নামাজ (সালাতুল ইস্তিসকার) আদায় করছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।
তীব্র তাপপ্রবাহে নাকাল দেশবাসীর জন্য এখনই তেমন কোনো সুখবর নেই আবহাওয়াবিদদের কাছে। কোথাও কোথাও বৃষ্টিপাতের আভাস মিললেও সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। তবে আগামী সপ্তাহ থেকে কালবৈশাখীর প্রবণতা বাড়বে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদফতর।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত ৪ এপ্রিল থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে বেড়েছে দেশের তাপমাত্রা। ঢাকায় ১৬ এপ্রিল গত ৫৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সোমবার (১৭ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় দেশের সর্বোচ্চ ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ধারণ করা হয়েছে পাবনায়। একই দিনে চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ঢাকায় ১৯৬৫ সালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এর আগে ১৯৬০ সালে রাজধানীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ১৯৭৫ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যেটা এখনো ভাঙেনি।
আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুল হামিদ মিয়া মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) সকালে গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেট অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথা আমরা পূর্বাভাসে বলছি। তবে এই সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে দক্ষিণা বাতাস জলীয় বাষ্পসহকারে বইতে শুরু করেছে। এজন্য বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আগামী দুই-তিন দিনে এই প্রবণতা বাড়বে। ২১, ২২ এপ্রিলের দিকে দেশের বেশিভাগ স্থানে বৃষ্টিপাত হতে পারে। ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে এসময় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা কম। এ সব এলাকাসহ পুরো দেশেই বৃষ্টিপাত এবং কালবৈশাখী হবে ২৩ এপ্রিল থেকে। তবে সেটা একটানা নয়।
তিনি আরও বলেন, তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে শক্তিশালী কালবৈশাখী, বজ্রঝড় ও শিলাবৃষ্টি হতে পারে। আগামী ১৯, ২০ এপ্রিল থেকে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টিপাত সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১৯ ও ২০ এপ্রিলের দিকে বিক্ষিপ্তভাবে উত্তর-পূর্বাঞ্চল অর্থাৎ সিলেট বিভাগে ও ময়মনসিংহ বিভাগে কিছু কিছু জায়গায় হালকা বৃষ্টিপাত হতে পারে। ২২ এপ্রিলের দিকে তাপপ্রবাহ কমতে পারে। তবে একেবারে কেটে যাবে তা নয়। হয়ত ব্যাপ্তি ও মাত্রা কমবে।
এদিকে, অসহ্য গরমের পর স্বস্তির বৃষ্টি নেমেছে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে। ঠান্ডা বাতাসে জুড়িয়েছে শরীর। সোমবার (১৭ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১০টায় দমকা হাওয়া বয়ে যায় সিলেট নগরীতে। এর মধ্যে সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় রাত ৯টায় দিকে এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
জানা গেছে, রাত ৮টা ৫০ মিনিটের দিকে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে শুরু হয় বৃষ্টি। রাত ১০টার দিকে শুরু হয় শিলাবৃষ্টি।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজিব হোসেন গণমাধ্যমে বলেন, ‘আগেই আমরা আভাস দিয়েছিলাম বৃষ্টির। কোম্পানীগঞ্জসহ বেশ কয়েক জায়গায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে।
উল্লেখ্য, ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মৃদু, ৩৮ ডিগ্রি থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস মাঝারি, ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তীব্র ও ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বিবেচনা করা হয়।
কেএম/আরএ/