নওগাঁয় পুকুরে স্থায়ী বসবাস পরিযায়ী পাখির
সুদূর সাইব্রেরিয়া থেকে প্রতি বছরই বাংলাদেশে আসে বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি। প্রচণ্ড শীতের হাত থেকে রেহাই পেতে দিনের পর দিন থেকে যায় এদেশেই। তবে তাদের স্থায়ী হওয়ার ঘটনা কম। শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে এরা আমাদের দেশে আসতে শুরু করে। তারপর মার্চ থেকে এপ্রিলের দিকে ওদের দেশে বরফ গলতে শুরু করলে ফিরে যেতে থাকে নিজেদের দেশে। তবে আমাদের দেশে সারা বছর না থাকলে কি হবে, আমাদের দেশের মানুষ কিন্তু ওদের কম ভালোবাসে না। তাই নওগাঁয় অসময়ে পুকুরে স্থায়ী হচ্ছে পরিযায়ী পাখি ‘বালি হাঁস’। শুধু বালি হাঁসই নয় দেখা মিলল লেঞ্জা হাঁস, পাতারি হাঁস, বৈকাল হাঁস, গিরিয়া হাঁস, ধূসর রাজহাঁস, ভূতি হাঁস, চিতি হাঁস, বারো ভূতি হাঁস, বৌমুনিয়া হাঁস।
সরেজমিনে বুধবার (৫ এপ্রিল) দুপুরে নওগাঁর সদর উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের চাকলা গ্রামে একটি পুকুরে দেখা মিলল ঝাঁকে ঝাঁকে দল বেঁধে আসা পরিযায়ী পাখির ভিড় । পুকুরটির আয়তন ৯ বিঘা। মোমিনূল হক রাসেল নামে এক ব্যাংক কর্মকর্তা চাকরি ছেড়ে দিয়ে নিজস্ব পৈতৃক সম্পতিতে ২৫ বিঘা জমিতে ‘এ হক খামার বাড়ি’ গড়ে তুলেন। এই খামারে বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষসহ গরু-ছাগল ও পুকুরে মাছ চাষ করেন। তবে এবার তার পুকুরে শীতে পরিযায়ী পাখির বিচরণ ও কিচিরমিচির শব্দে মুগ্ধ করেছে তাকে। নওগাঁয় বড় বড় জলাশয় বিল থাকলেও পরিযায়ী পাখিরা ‘এ হক খামার বাড়ি’ পুকুরকেই বেছে নিয়েছে তাদের আশ্রয়স্থল হিসেবে। পাখিগুলো রাতে পকুরপাড়ে থাকে। আর ভোর হলেই খাবারের সন্ধানে পুকুরে নেমে আসছে।
পুকর মালিক মোমিনূল হক রাসেল ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, গত দুই বছর ধরে অতিথি পাখিদের অভয়াশ্রম হয়ে উঠেছে এই পুকুরটি। পাখিগুলোর কেউ যেন ক্ষতি না করতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখেন তিনি।
তিনি আরোও বলেন, সাইব্রেরিয়ান বালি হাঁস সাধারণত শীতকালে এলেও কখনই বদ্ধ পরিবেশে দেখা যায় না। তবে এখানে এর ব্যতিক্রম ঘটেছে। নিরাপদ আবাসস্থল তৈরি করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। এখানে আমি সার্বক্ষণিক তাদের দেখভাল করি। বিশেষ করে নজর দেই কেউ যেন পাখিদের বিরক্ত না করে। এ কারণে শীত চলে গেলেও পাখিরা যায়নি।
নওগাঁ সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর গোলাম কিবরিয়া ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, প্রতি বছর সাইব্রেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, ইউরোপ, কাশ্মীর ও হিমালয়ের আশপাশের কিছু জায়গা থেকে বাংলাদেশে আসে এসব পাখি। শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে কয়েক হাজার মাইল পাড়ি দেয় তারা। আবার নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পর নিজ ভূমিতে ফিরে যায়। তবে থেকে যায় কেউ কেউ।
তিনি আরও বলেন, বদ্ধ পরিবেশে প্রাণী ও পাখির জন্য উপযুক্ত বসবাসের পরিবেশ দেওয়া গেলে তারা সেখানেও স্বাভাবিক বংশ বিস্তার করতে পারে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের পরিবেশে সাইব্রেরিয়ান বালি হাঁসের স্থায়ী বসবাস ঘটনা বিরল হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মির্জা ইমাম উদ্দিন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘পাখিদের সুরক্ষার বিষয়ে মোবাইল কোর্টের অভিযান অব্যাহত আছে। পাখিদের অভয়াশ্রম করতে না পারলেও ওই পুকুরে যাতে কেউ পাখি নিধন করতে না পারে এ ব্যাপারে নজর রাখা হবে।’
এসআইএইচ