মাইকেল জ্যাকসনের জীবন নিয়ে সিনেমা হচ্ছে
‘পপ কিং’ মাইকেল জ্যাকসনের ওপর একটি আত্মজৈবনিক সিনেমা তৈরি করতে কাজ শুরু হয়েছে। এজন্য অস্কার-জয়ী ছবি ‘বোহেমিয়ান রাপসিটি’র প্রযোজক গ্রাহাম কিং ও বিশ্বখ্যাত সুপারহিট ‘গ্লাডিয়েটর’র চিত্রনাট্যকার জন লোগান একত্রে বসেছেন।
আমরা বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষই অন্যান্য দেশের মতো জানি, রোমান সম্রাজ্যের দাসদের রক্তক্ষয়ী ও মৃত্যুতে সমাধানের খেলার যোদ্ধা ‘গ্লডিয়েটর’র মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন সুপারহিট অভিনেতা রাসেল ক্রো। ২০০০ সালের ছবিটি আজও অনন্য। একটি ছবিই তাকে অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড বা অস্কার, ব্রডকাস্ট জানালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অ্যাওয়াড, লন্ডন ফিল্ম ক্রিটিক অ্যাওয়াড-সেরা প্রধান চরিত্রাভিনেতার জন্য এনে দিয়েছে। আরো ১০টি পুরস্কারের সেরা তালিকায় তিনি গিয়েছেন অন্যান্য পুরস্কারগুলোতে।
‘বোহেমিয়ান রাপসিটি’ হলো ব্রিটিশ সঙ্গীত ধারার রক ব্যান্ড ‘কুইন’র প্রধান গায়ক ফ্রেডি মারকিউরির জীবনী নিয়ে বানানো ছবি।
কানাডিয়ান-আমেরিকার বিনোদন প্রতিষ্ঠান ‘লায়নসগেট’ মাইকেল জ্যাকসনের ছবিটির সারাবিশ্বে বিপননের কাজটি করবে-বলেছেন প্রতিষ্ঠানটির স্টুডিও’র সহ-সভাপতি জো ড্রেক। এই তথ্যগুলো তিনি দিয়েছেন।
তাদের স্টুডিওটি থেকে জানা গিয়েছে-এই ছবিটি গভীরভাবে চিত্রায়ন করবে একজন সংশয়বাদী মানুষকে, যিনি ‘কিং অব পপ’ বা ‘পপ গানের রাজা’ হয়ে উঠেছেন। এটি নিয়ে আসবে তার জীবনের সবচেয়ে ভালো-দেবতার মতো সম্পন্ন করা কাজগুলোকে, যেগুলো এই বিনোদনদানকারী শিল্পীর প্রক্রিয়াতে এগিয়ে গিয়েছেন ও ব্যক্তিগতভাবে তার জীবন কেমন ছিল-সেসব বিষয়েও ভেতরের তথ্যগুলো জানাবে।
ছবিটি আরো প্রযোজনা করবেন জন ব্রাংকা। তিনি জাতে পর্তুগিজ, বিনোদন আইনের রক অ্যান্ড রোল শাখায় সিদ্ধহস্ত। ব্রাংকা মাইকেল জ্যাকসনের গানের ভুবন ‘দি মাইকেল জ্যাকসন কম্পানি’র এখন চেয়ারম্যান ও ‘দি মাইকেল জ্যাকসন স্টেট’ নামের তার বিপুল সম্পদের সহ-তত্বাবধায়ক। তার সঙ্গে থাকবেন একই সম্পত্তি প্রতিষ্ঠানে একই পদে থাকা জন ম্যাকক্লাইন।
‘দি জ্যাকসন বিজনেস’ নামে পরিচিত মাইকেলের ব্যবসাটি তিনি চিরকালের মতো চলে যাবার পর এখন আবার ওপরের দিকে উঠছে। তার এই প্রতিষ্ঠানটি থেকে বেরিয়েছে শো ব্যবসায়ের জন্য তাকে নিয়ে সঙ্গীতনিভর ‘এমজে : দি মিউজিক্যাল’। তবে এর আগে আইনীভাবে ভীষণ সংকটে পড়া প্রতিষ্ঠানটিকে ধারাবাহিক লড়াইগুলোতে জিততে হয়েছে।
মাইকেল জ্যাকসনের জীবনের শেষের দিকের ভাঙনটি আমাদের সবার জানা। সারা বিশ্বের মানুষ একজন কৃষ্ণাঙ্গ ও আমেরিকার পিছিয়ে পড়াদের প্রতিনিধি মাইকেল জ্যাকসনের অসাধারণ প্রতিভা ও সৃষ্টিশীলতার দৌলতে বিশ্বের সবচেয়ে ভালো গায়ক ও নৃত্যশিল্পীর মিশ্রণটিকে গড়ে উঠতে দেখেছেন। এরপর তারা তার পিছু ধাওয়া করেছেন জীবনভর।
মাইকেলের শিল্পসম্রাজ্য ‘দি মাইকেল জ্যাকসন স্টেট’ ব্রাংকা ও ম্যাকক্লাইনের নির্দেশনাতে গেল ১১ বছরে দি মোট ২.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করতে সক্ষম হয়েছে।
মাইকেল জ্যাকসন নামের বিশ্বের জনপ্রিয়তম পপ ও গানের মানুষটি ৫০ বছর বয়সে মারা যাবার পর থেকে এমনভাবে ভক্ত ও নতুনদের কাছে পৌছাচ্ছেন যে, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি আয় করা মৃত তারকা ফি বছর হচ্ছেন।
তবে তার আত্মজীবনীটি নিয়ে সামান্যই তারা জানিয়েছেন। এমনকি এখনো পরিচালক ও অভিনেতা-অভিনেত্রীদের কারো নামই জানানো হয়নি। তবে এটি ধারণা করা হচ্ছে যে, অস্কারের মতো সবচেয়ে দামী পুরস্কারটির দিকে চোখ রেখে বানানো হবে ছবিটি। এর আগে লোগান ও গ্রাহাম মিলেছিলেন ‘দি এভিয়াটর’ সিনেমাতে। ১১টি শাখায় অস্কার জিতেছে ২০০৪ সালে বেরুনো ছবিটি; এখনো সবচেয়ে আয় করা ১০টি ছবির তালিকাতে রয়ে যাচ্ছে। ছবিটির চিত্রনাট্য লিখেছিলেন লোগান। তারা দুজনেই অস্কার জিতেছেন।
গ্রাহাম কিং মাইকেল জ্যাকসনের সঙ্গীত ও ব্যক্তিগত জীবনকে ধরে বানানো ছবিটির আলাপে মাইকেলের সঙ্গে তার পরিচয়ে ডানা মেলে দিয়েছেন, “আমি প্রথম ‘দি জ্যাকসন ফ্যামিলি’র সাথে সাক্ষাৎ করেছিলাম ১৯৮১ সালে। আমি তাদের সঙ্গীতের উত্তরাধিকারকে বড় পর্দাতে তুলে ধরতে পেরে সম্মানিত বোধ করছি।’ এরপর সেই বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলসের কাছের ডজার স্টেডিয়ামে বসে তাদের ‘ভিক্টরি ট্যুর’ দেখেছি ও শুনেছি। (ভিক্টরি ট্যুর নামে ইউনাইটেড স্টেটস ও কানাডায় জ্যাকসন পরিবার ১৯৮৪ সালের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ধারাবাহিক কনসার্টের আয়োজন করেছিল। ছয় জ্যাকসন ভাইদের একমাত্র সঙ্গীতযাত্রা এটিই। দলটি আহত ভাই-পাঁচ নম্বর; জ্যাকি জ্যাকসনকে নিয়েও ট্যুর কনসার্ট করে গিয়েছে। মোট ৫৫টি কনসার্টে তারা গান গেয়েছেন ও ২০ লাখ মানুষের সামনে দাঁড়িয়েছেন)। তবে কোনোদিনও ভাবতে পারিনি, ৩৮ বছর পর এখন আমি তাদের সেই সিনেমাটির একটি অংশ হবার সুযোগ লাভ করবো।’
মাইকেল জ্যাকসন ও জেনেট জ্যাকসনের মা ক্যাথেরাইন জ্যাকসন একটি বিবৃতিতে বলেছেন, “যখন আমার মাইকেল ছোট্ট ছিল, জ্যাকসন-৫’র একজন সদস্য হিসেবে সে সিনেমার জাদু দেখতে ভালোবাসত। একটি পরিবার হিসেবে আমরা আমাদের জীবনের গল্প বড় পর্দাতে বেঁচে থাকার সুযোগ পাওয়ায় সম্মানিত।”
ওএস।
দি হিন্দু থেকে।