মৃত্যুর আগে ঢাকাপ্রকাশ-কে দেওয়া ফারুকের শেষ সাক্ষাৎকার
ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ঢাকাই চলচ্চিত্রের মিয়া ভাইখ্যাত কিংবদন্তি চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুক মারা গেছেন। সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্থানীয় সময় সোমবার (১৫ মে) সকাল ৮টায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন এই কিংবদন্তি নায়ক।
দীর্ঘদিন ব্যয়বহুল চিকিৎসার পর কিছুটা সুস্থ হয়ে ২৬ অক্টোবর ২০২২ মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতাল থেকে তার শারীরিক অবস্থা ও অন্যান্য বিষয়ে ঢাকাপ্রকাশ-এর সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এটিই গণমাধ্যমে প্রকাশিত ফারুকের শেষ সাক্ষাৎকার। তার প্রয়াণ দিনে ফারুকের ভক্ত ও ঢাকাপ্রকাশ-এর পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি আবারও তুলে ধরা হলো:
ঢাকাপ্রকাশ: কেমন আছেন?
ফারুক: আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহর অশেষ রহমতে এখন বেশ ভালো আছি।
ঢাকাপ্রকাশ: এখন কি পুরোপুরি সুস্থ?
ফারুক: এখন আমি সুস্থ। তারপরও টুকটাক ঝামেলা থাকেই। তবে আমি স্বাভাবিক খাবার খেতে পারছি। কথা বলতে পারছি। সবার দোয়ায় শরীরও অনেক ভালো আগের চেয়ে।
ঢাকাপ্রকাশ: দেশে ফিরবেন কবে?
ফারুক: ডাক্তার বলেছেন সামান্য অসুস্থতা আছে। শতভাগ সুস্থ হতে আরও দুইমাস লাগবে। আমরা চাইলে এখনই দেশে ফিরে যেতে পারি। যেহেতু ডাক্তার আরও দুই মাসের কথা বলেছেন তাই তোমার ভাবী (ফারহানা ফারুক) চাচ্ছে ডাক্তাদের পরামর্শ অনুযায়ী সবকিছু করতে। আল্লাহ চাইলে নতুন বছরের শুরুর দিকে দেশে ফিরব, ইনশাহআল্লাহ।
ঢাকাপ্রকাশ: সুস্থ হয়ে কোন বিষয়টি বেশি মনে পড়ছে?
ফারুক: আমার স্ত্রীর কথাই বেশি মনে পড়ছে। তিনি সর্বক্ষণ আমার পাশে থেকে যেভাবে কষ্ট করছেন সেটা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব হবে না। আল্লাহর কাছে হাজারো শুকরিয়া। আমি কপাল গুণে এমন একজন স্ত্রী পেয়েছি। খোদার অশেষ রহমত ছাড়া এমন জীবনসঙ্গী পাওয়া সম্ভব নয় (কান্না...)। আমার স্ত্রীর কষ্টটা নজিরবিহীন।
ঢাকাপ্রকাশ: দেশের কথা মনে পড়ে না?
ফারুক: কী বলো...! দেশই হলো আমার প্রাণ। প্রতিদিন চোখ বন্ধ করে দেশের কথা কল্পনা করি। দেশের মানুষের কথা, চলচ্চিত্রের মানুষদের কথা আমার ভীষণ মনে পড়ে।
ঢাকাপ্রকাশ: সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার কিছুদিন পর থেকেই আপনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আপনার নির্বাচিত এলাকার জন্য তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো কাজও করতে পারেননি। এজন্য কষ্ট বা খারাপ লাগে না?
ফারুক: এজন্য কী পরিমাণ যে কষ্ট লাগে তা কেউ কল্পনাও করতে পারবে না। ৩১ বছর মুজিব কোট পরে চিৎকার (কান্না) করেছি। প্রধানমন্ত্রী প্রিয় আপা আমাকে সুযোগও দিয়েছেন। ভেবেছিলাম এবার মানুষের জন্য কাজ করতে পারব। কিন্তু ভাগ্যের নির্মমতায় সুযোগ পেয়েও মানুষের জন্য কাজ করতে পারলাম না। অসুস্থতা আমার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াল। এ জন্য খুব কষ্ট হয়।
ঢাকাপ্রকাশ: আবারও কি নির্বাচন করার ইচ্ছে আছে?
ফারুক: মানুষের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা আছে। দলের প্রতিও কৃতজ্ঞতা ও দায়বদ্ধতা অনেক। তাই মানুষের জন্য কাজ করার জন্য আমি আরেকবার সুযোগ চাই। জানি না সেটা পাব কিনা। তবে আপা (শেখ হাসিনা) অনেক মহৎ ও উদার। আশা করি মানুষের জন্য কাজ করার জন্য আমাকে আরেকবার সুযোগ দেবেন। রাজনীতি ছাড়া আমি বাঁচবই না। রাজনীতিতে আমি থাকবই।
ঢাকাপ্রকাশ: শোনা যাচ্ছে আপনার চিকিৎসার জন্য সরকার থেকে ব্যাপক সহযোগিতা পেয়েছেন। এটা কি সত্যি?
ফারুক: আমি প্রথম যখন অসুস্থ হয়ে সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ভর্তি হই তখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী আমার চিকিৎসার জন্য ১ লাখ ডলার দিয়েছিলেন। সেই টাকাটা আসলে আমার কী যে উপকার হয়েছিল তা বলে বোঝাতে পারব না। এ ছাড়া, এমপি হিসেবে আমি আমার বেতনটা নিচ্ছি শুধু। প্রায় চার বছর ধরে আমি অসুস্থ। মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে অনেক বেশি টাকা লাগে। আমার চিকিৎসার জন্য আমার সারাজীবনের সঞ্চয় তিনটা বাড়ি বিক্রি করেছি। গ্রামের অনেক সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছি।
ঢাকাপ্রকাশ: চলচ্চিত্রের কেউ কি আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করে সহযোগিতার কথা বলেনি?
ফারুক: ফিল্মের তেমন কেউ যোগাযোগ করে আমাকে সহযোগিতার কথা বলেনি। শুধু ডিপজল ফোন করে বারবার বলেছে মামা আপনার কী লাগবে। কোনো কিছু লাগলে আমাকে জানাবেন। আল্লাহর রহমতে কারো সহযোগিতার প্রয়োজনও হয়নি। এ ছাড়া, পরিচালক ও এডিটর দেবুদা নিয়মিত আমার খোঁজ-খবর নিয়েছেন।
ঢাকাপ্রকাশ: চলচ্চিত্রের মানুষদের উদ্দেশে কিছু বলতে চান?
ফারুক: আমি তো সব সময় তাদেরকে ভালোবাসি। গানের লাইনের মতো বলতে চাই ‘আমি আছি থাকব, ভালোবেসে মরব’।
ঢাকাপ্রকাশ: ঢাকাপ্রকাশকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ফারুক: তোমাকেও ধন্যবাদ, সেইসঙ্গে ঢাকাপ্রকাশ-এর জন্য শুভকামনা রইল।
এএম/এমএমএ/