পোপ বেনেডিক্ট ও পোপ ফ্রান্সিসের জীবন নিয়ে ‘দ্য টু পোপস’
খ্রিস্টানদের দুইজন প্রধান ধর্মগুরু-সাবেক পোপ ষোড়শ বেনেডিক্টেএবং বর্তমান পোপ ফ্রান্সিসকে নিয়ে একটি আত্মজৈবনিক সিনেমা তৈরি করা হয়েছে। তুলনামূলক ছবিটির নাম হলো ‘দ্য টু পোপস’। বেরিয়েছে ২০১৯ সালে।
বর্তমান পোপ ফ্রান্সিস, যার আসল নাম কার্দিনাল হোর্হে বেরগোইয়ো, একজন স্প্যানিশ এবং তার আগের পোপ কার্ডিনাল ইউজেফ অ্যালয়জিও সাতসিঙ্গা, একজন জার্মান, তাদের ঘিরেই এই সিনেমাটি।
পোপ ফ্রান্সিসের চরিত্র করেছেন ব্রিটেনের বিখ্যাত প্রবীণ টিভি, সিনেমা ও মঞ্চাভিনেতা স্যার জনাথন প্রাইস সিবিই। তিনি ব্রিটেনের রয়্যাল অ্যাকাডেমি অব ড্রামাটিক আর্ট থেকে পাশ-৭৫ বছরের এই দীর্ঘ ও খ্যাতির জীবনে লাভ করেছেন অলিভার অ্যাওয়ার্ড, দুটি টনি অ্যাওয়ার্ড, মঞ্চের সেরা অভিনেতার পুরস্কার।
বয়সের ভারে ন্যুজ্ব পোপ বেনেডিক্টের চরিত্র করেছেন ওয়ালশের দুবারের অস্কারজয়ী অভিনেতা স্যার অ্যান্থনি হপকিন্স। এখন ৮৫ বছরের হপকিনন্স ওয়ালশ তো বটেই বিশ্বেরই অন্যতম নামকরা অভিনেতা।
তাদের দুজনকেই ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথ ‘নাইট’ উপাধিতে ভূষিত করেছেন। ‘দ্য টু পোপস’ ছবির মাধ্যমে তারা দুজনেই ধর্মপ্রাণ খ্রিস্টানদের মধ্যে খ্যাতির শীর্ষে উঠে অমর হয়ে আছেন।
পোপ ফ্রান্সিস ও পোপ ষোড়শ বেনেডিক্টের পোপ জীবনের সত্যি কাহিনী নিয়ে সিনেমাটি তৈরি করা হয়েছে। প্রধানত সেট হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে তাদের ধর্মীয় রাজ্য ভ্যাটিকান সিটি।
ছবিটির শুরু হয়েছে দুইজন পোপের আদর্শগত, ধর্মীয় এবং মানসিক পার্থক্য নিয়ে। এই ছবিতে আছে খ্রিস্টধর্মানুসারীদের ধর্মীয় বিবাদ ও পার্থক্যগুলো, যেগুলোর প্রবল স্রোত তাদের মধ্যেও এসেছে। খ্রিস্টধর্মানুসাসীদের প্রধান প্রতিষ্ঠানের দুই পোপের সংগঠিত ধর্মীয় ও কার্যক্রমের বিবাদও উঠে এসেছে।
একটি সামান্য অথচ অসামান্য তাৎপর্যপূণ বরাবরের বিষয় নিয়ে খ্রিস্টানদের প্রধান দুই ধর্মযাজকের জীবনের এই গল্প সমাপ্ত হয়েছে। একত্রে বসে তারা আবার পিৎজা খেতে, খেতে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখছেন টিভিতে। আদর্শবান, আধুনিক ও অত্যন্ত শিক্ষিত এই ধর্মীয় প্রধান দুই নেতা এই বার্তাও দিয়েছেন, খেলাটি তাদের সকলের মধ্যেই আলো নিয়ে আসছে।
তবে সিনেমার মতো দুই পোপের আসল জীবন ছিল না। ২০১৯ সালে সাবেক পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট তার ৬ হাজার শব্দের যাজকদের যৌন নিপীড়নের বিষয়ে একটি খোলা চিঠি প্রকাশ করেছেন। তিনি দাবি করেছেন করেছেন তার পত্রে-এই সংঘাত ও গভীর সংকট উদার ধর্মতাত্বিক এবং ধর্মযাজক এবং গির্জা ও ধর্মপ্রাণ খ্রিস্টানদের মধ্যে হয়েছে এবং সেখানে আরও প্রধান বিষয় হিসেবে কাজ করেছে, পশ্চিমের দেশগুলোর মানুষদের মধ্যে যৌনতার বিষয়ে উদার অবস্থান এবং চর্চা। এরপর গির্জাগুলোতে এই বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে। তার সূত্রে মানুষের জীবনে ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়েছে। তুমুল বিখ্যাত এই ছবি এবং ধর্মীয় বিবাদ, আলোচনা ও পত্রের পর ২০২২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তার জীবনের আশ্রয়স্থল ভ্যাটিকান সিটি আবার তার একটি পত্র প্রকাশ করেছে। সেখানে অত্যন্ত প্রভাবশালী পোপ ষোডশ বেনেডিক্ট গির্জার যৌন নিপীড়নের সংকটের সময় তার কার্যক্রমে ব্যর্থতার অংশগুলোর জন্য গির্জা, ধর্মযাজক, ধর্মপ্রাণ খ্রিস্টান ও বিশ্ববাসীর কাছে মাফ চেয়েছেন।
তাদের দুজনের জীবনের কাহিনীতে সাজানো ‘দ্য টু পোপস’ সিনেমাটির পরিচালক ব্রাজিলিয়ান চলচ্চিত্র নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার ও প্রযোজক ফেরনান্দো মেইরেলিস। তিনি বিখ্যাত ছবি ‘দ্য সিটি অব গড’র সহ-পরিচালক হিসেবে সবচেয়ে খ্যাতি লাভ করেছেন।
তিনি পরিচালক শাখায় অস্কার, গোল্ডেন গ্লোবের জন্য মনোনীত হয়েছেন তার সিনেমা নিয়ে কাজের সূত্রে। তার এই ছবিটির কথা তো বলাই বাহুল্য, যেহেতু তিনি দুজন পোপের কর্মজীবনকেই এক সুতোয় গেঁথেছেন।
‘দ্য টু পোপস’ সিনেমাটির চিত্রনাট্য লিখেছেন এবং তুমুল বিখ্যাত হয়েছেন নিউজিল্যান্ডের বিখ্যাত লেখক ও চিত্রনাট্যকার অ্যান্টনি ম্যাককার্টেন। তিনি তার ‘দ্য টু পোপস’ নামের নাটকটি থেকেও চিত্রনাট্য ধার করেছেন।
ব্রিটেনের বিখ্যাত নর্থহ্যাম্পশায়ারের ‘বয়্যাল অ্যান্ড ডারেনগেট থিয়েটার’র ‘টেলিইউরাইট চলচ্চিত্র উৎসব’র মাধ্যমে ৩১ আগস্ট, ২০১৯ সালে ‘দ্যা টু পোপস’ শুভযাত্রা শুরু করেছে।
২০১৯ সালের ২০ ডিসেম্বর নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে। ইংরেজি, স্প্যানিশ ও ইতালিয়ান ভাষায় মুক্তি পাওয়া ‘দ্য টু পোপস’ আজ পর্যন্ত আয় করেছে ৭ লাখ ৫৮ হাজার ৭১১ মাকিন ডলার। পরে চীনা ভাষায়ও অনূদিত হয়েছে। বলা বাহুল্য আয়ের বেশিরভাগই গিয়েছে গির্জার তহবিলে।
দ্য টু পোপস অনুসরণ করেছে মূলত ষোড়শ পোপ বেনেডিক্টকে। তিনি তার উত্তরসূরী পোপ ফ্রান্সিসকে সন্তুষ্ট করতেও চেষ্টা করেছেন। তিনি তাকে আর্চবিশপ হিসেবে পদত্যাগের পর আবার যেন ধর্মীয় পদটি ফিরিয়ে দিতে রাজি হন, অনুরোধ করেছেন। দুজন পোপের জীবন নিয়ে বানানো এই ছবি অসাধারণ খ্যাতিও লাভ করেছে। প্রাইস ও হপকিন্স খুব ভালো অভিনয় করেছেন জীবনের পড়ন্ত বেলায় তাদের ধর্মবিশ্বাসের উপস্থাপক দুজন প্রধান পুরুষের জীবনের কাহিনীতে। খুব ভালো চিত্রনাট্য তৈরি করছেন ম্যাককার্টেন। সেরা হয়েছেন পরিচালক ফেরনান্দো মেইরেলিস।
এই সিনেমার প্রধান তিনজন-হপকিন্স, ম্যাককার্টেন ও মেরেইলিস দ্যা টু পোপসের জন্য অস্কার, গোল্ডেন গ্লোব ও বিএএফএ (ব্রিটিশ অ্যাকাডেমি ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হয়েছেন।
ওএফএস/