‘বিশ্বসুন্দরীর মুকুট আমার জীবন বদলে দিয়েছে’
আজ সুস্মিতা সেনের ৪৬তম জন্মদিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে জন্মেছেন ভারতের প্রথম বিশ্বসুন্দরী ও বলিউডের জনপ্রিয় নায়িকা সুস্মিতা। তিনি সবার নজর কাড়েন প্রথম ‘মিস ইন্ডিয়া’ হয়ে।
১৯৯৪ সালের ২১ মে। ভারতের প্রতিটি মানুষকে খুশির সাগরে ভাসিয়ে বিশ্বের ৭৭টি দেশের সেরা সুন্দরীদের হারিয়ে মুকুট জয় করেন সুস্মিতা সেন। তখন তিনি মোটে ১৮ বছরের তরুণী।
এরপর বলিউড তাকে ডেকে নিল হাতছানি দিয়ে। মিস ইউনিভার্স জয়ী বলিউডে অভিনেত্রী হিসেবে পা রাখলেন। তবে তখন থেকে তিনি নিশ্চিত করতে চাইলেন, আরেকজন গ্ল্যামার সর্বস্ব অভিনেত্রী হবেন না। যদিও তাদের সেরা ছিলেন সুস্মিতা সেন। কোনোদিন তিনি এই ধরনের চরিত্রগুলো ফিরিয়ে দিতে পিছপা হননি। অন্যরকমের চরিত্র করতে চেষ্টা চালিয়ে গেছেন।
সুম্মিতার জন্ম হয়েছে ভারতের তেলেঙ্গানা প্রদেশের রাজধানী হায়দ্রাবাদ শহরে। একজন বাঙালি নারী বলে আমাদের আগ্রহ অসীম। তার বাবার নাম সুবীর সেন। ভারতীয় বিমান বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। অবসর নিয়েছেন উইং কমান্ডার হিসেবে। তার মায়ের নাম শুভ্রা সেন। তিনি একজন জুয়েলারি ডিজাইনার ও দুবাইয়ে তার নিজের একটি স্বর্ণের দোকান আছে। তাদের আরেকটি সন্তান আছে।
সুস্মিতার লেখাপড়া নয়াদিল্লীর এয়ারফোর্স গোল্ডেন জুবলি ইনস্টিটিউটে। এরপর গিয়েছেন সেন্ট অ্যানস স্কুলে, সিকান্দাররাবাদে। এরপর আর কোনো উচ্চতর লেখাপড়া করেননি এই অনিন্দ্য সুন্দরী।
বিশ্বসুন্দরী হওয়ার পর নিজের এই বিষয়ে একটি প্রকল্প করলেন তিনি। নাম দেওয়া হয়েছিল ‘আই অ্যাম শি-মিস ইউনিভার্স ইন্ডিয়া’। টানা তিন বছর প্রকল্পের মাধ্যমে অনেক স্বেচ্ছাসেবা ও সমাজউন্নয়নের কাজ করলেন সুস্মিতা সেন। তারপর ২০১২ সালে ফেমিনা প্রকল্পটি গ্রহণ করল। তাদের মাধ্যমে কাজ করেন তিনি।
সুস্মিতা সেন ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে আবার গেলেন বিশ্বসুন্দরী নির্বাচনের ৬৫তম আসরে। আসরটি হয়েছিল ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায়। সুস্মিতা যেবার বিশ্বের সেরা সুন্দরী হয়েছেন সে প্রতিযোগিতাটিও এখানেই হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, ‘বিশ্বসুন্দরীর মুকুট আমার জীবনটি চিরকালের জন্য বদলে দিয়েছে।’
সুস্মিতা সেনের অভিনয় জীবনের শুরু ১৯৯৬ সাল থেকে। তিনি প্রথম অভিনয় করেছেন ‘দস্তক’ ছবিতে। তার জীবনের সেরা ছবির মধ্যে আছে ‘বিল্লি নাম্বার ১’। ১৯৯৯ সালের ফিল্মফেয়ারের সেরা সহ-অভিনেত্রীর পুরস্কার এনে দিয়েছে। বছরে সবচেয়ে বেশি আয় করা সিনেমাও হয়েছে এটি।
সুস্মিতার বাণিজ্যিকভাবে অত্যন্ত সফল ও তার অন্যতম সেরা অভিনয় হিসেবে বিবেচিত হয় ‘আনখিন’। তার নায়ক অর্জুন রামপাল। এ সিনেমায় আরও অভিনয় করেছেন মেগাস্টার অমিতাভ বচ্চন, অক্ষয় কুমার।
সুস্মিতার সবচেয়ে আয় করা সিনেমার মধ্যে আরও আছে ‘ম্যায় হো না হো’। সেখানে তিনি অভিনয় করেছেন শাহরুখ খানের নায়িকা হিসেবে। ৩৩ কোটি রূপী আয় করে সিনেমাটি। সেবছর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আয় করা সিনেমা হয় এটি।
সুস্মিতা তার জীবনে যে কাজটি বেশি করেছেন, সেই সুপার মডেলের চরিত্র করলেন ২০১০ সালে। ছবিটির নাম হলো ‘দুলহা মিল গায়া’। মাঝারি মানের আয় করেছে।
তিনি তার মা-বাবার ভাষা বাংলায় অভিনয় করেছেন পশ্চিমবঙ্গের একটি ছবিতে। ২০১৫ সালে মুক্তি পেয়েছে। নাম ‘নির্বাক’।
তিনি ২০২০ সালে অংশগ্রহণ করেছেন ডিজনি হটস্টার’স টিভি সিরিজ ‘আরিয়া’তে। সেখান থেকে ২০২১ সালের ‘ক্রিটিকস চয়েজ অ্যাওয়ার্ড’ জয় করেছেন।
‘অ্যাডিসন’স ডিজিজ’ নামের একটি জটিল রোগে ভুগছেন সুস্মিতা সেন। এই রোগের উপসর্গ-তার অস্বাভাবিক আচরণ, শারিরীক দুর্বলতাসহ নিয়মিতভাবে ওজন হারানো। এজন্য সারাজীবনই চিকিৎসকের ওষুধ খেতে হবে সুস্মিতাকে।
একজন ফ্যাশন মডেল রোমান শলের সঙ্গে ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সম্পর্ক ছিল সুস্মিতার। ২০২২ সালের জুলাই মাসে খবরে প্রকাশিত হয়, তিনি ব্যবসায়ী ও ক্রিকেট প্রশাসক লোলিত মোদীর সঙ্গে সম্পর্কে রয়েছেন। তিনি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের প্রতিষ্ঠাতা, প্রথম চেয়ারম্যান ও কমিশনার।
ওএফএস/আরএ/