কায়রো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের বিচারক ‘সুয়ারা ভাস্কর’
সুয়ারা ভাস্কর যাচ্ছেন ‘কায়রো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল (সিআইএফএফ)’-এ বিচারক হিসেবে। তিনি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা বিভাগে থাকবেন। তার বিভাগে মোট ১৪টি ভাগে বিদেশি সিনেমাগুলোকে বিচার ও পুরস্কার প্রদান করা হবে।
ইতিহাসের প্রথম ভারতীয় শিল্পী হিসেবে সুয়ারা ভাস্কর কায়রোর প্রতিযোগিতায় যাচ্ছেন। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ‘সিআইএফএফ’ বার্ষিক চলচ্চিত্র উৎসব।
মিশরের রাজধানীর কায়রো অপেরা হাউজে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭৬ সাল থেকে শুরু, এবার ৪৪তম আসর বসেছে। আয়োজন করে মিশরের সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়। এটি পুরো মধ্যপ্রাচ্যেরই সবচেয়ে পুরোনো সিনেমার প্রতিযোগিতা।
১৩ নভেম্বর থেকে প্রতিযোগিতাটি শুরু হয়েছে বিশ্বের সর্বকালের ইতিহাসে বাণিজ্যিকভাবে সবচেয়ে সফল পরিচালক ও হলিউডের অন্যতম নতুন ধারার পথিকৃৎ স্টিফেন স্পিলবার্গের ‘দি ফেইবেলম্যানস’র মাধ্যমে। উৎসব শেষ হবে ২২ নভেম্বর।
‘আমি একই সঙ্গে কৃতজ্ঞ ও সম্মানিত, এমন একটি বিখ্যাত চলচ্চিত্র উৎসবের একজন বিচারক নির্বাচিত হওয়ায়। সিআইএফএস বহু বছর ধরে বৈশ্বিক চলচ্চিত্রগুলোর একটি নামকরা প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে। বিশ্বের ও সেই অঞ্চলের এই বছরের সেরা ছবিগুলো দেখতে পারা, বিচার করা পরম সৌভাগ্য ও সুযোগ। আসলেই আমি বিস্মিত', একটি বিবৃতিতে জানিয়েছেন তিনি।
অভিনেত্রী সুয়ারা ভাস্করের বয়স মোটে ৩৪। হিন্দি ছবির অভিনেত্রী। নাম করেছেন মূলধারার চলচ্চিত্রে সহশিল্পী ও স্বাধীন ধারার সিনেমাগুলোতে ভালো অভিনয়ের সুবাদে। এ জন্য জয় করেছেন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস গ্রুপের দুটি ‘স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ড’, তিনবার মনোনীত হয়েছেন ফিল্মফেয়ারে। বাবা তার সি. উদয় ভাস্কর। তেলেগু।
ভারতীয় নৌ-বাহিনীর অফিসার। বিহারি মা, ইরা ভাস্কর ভারতের রাজধানী দিল্লীর জওয়াহারলাল ইউনিভার্সিটির সিনেমা অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক। দিল্লীতে বেড়ে উঠেছেন তাদের মেয়ে। পড়েছেন সর্দার প্যাটেল বিদ্যালয়ে, ইংরেজিতে পড়েছেন দিল্লী ইউনিভার্সিটি অধীভুক্ত মিরান্ডা হাউজে। এই কলেজটি টানা ছয় বছর ভারতের প্রথম স্থান অধিকারী কলেজ হয়েছে। দেশের অন্যতম শীর্ষ মেয়েদের উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মিরান্ডাতে তার সহপাঠী ছিলেন অভিনেত্রী মনীষা লাম্বা। মাস্টার্স করেছেন অন্যরকমের মেয়ে সুয়ারা দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানে।
তার বিষয়ে এবারের কায়রো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব পরিচালক আইকনিক আমির রামসেস জানিয়েছেন, বোর্ডে তারা একজন ভালো ভারতীয় অভিনেত্রীকে পেয়ে আনন্দিত। সিআইএফএফ সুয়ারা ভাস্করকে অভ্যর্থনা জানাতে পেরে গর্বিত।
তিনি বলেন, ‘তিনি ভারতের একজন উল্লেখযোগ্য ও নানা ধরনের অভিনয়ের পারঙ্গম অভিনেত্রী। একই সঙ্গে মূল ও স্বাধীন সিনেমাগুলোতে তার অভিনয় নৈপুণ্য প্রদর্শন করে চলেছেন। একজন গতিশীল অভিনেত্রী, নানা ধরনের মেধা আছে তার। ভাস্কর অত্যন্ত উচ্চকন্ঠ, সমাজসেবক এবং কলাম লেখক হিসেবেও। মানুষের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বিষয় ও সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করছেন। কায়রো অন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব সত্যিকারভাবেই আনন্দিত যে, তিনি এত দারুণ অভিজ্ঞতা ও সংবেদনশীলতা তৈরি করেছেন। তিনি আমাদের প্রধান উৎসবে বিচারকের দায়িত্ব পালন করবেন।’
সুয়ারা ভাস্করের ১৪টি ভাগের পাঁচটিতে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার আছে। উৎসবে তার শাখায় প্রধান বিচারক-জাপানের পরিচালক নাওমি কাওয়াসে। বিখ্যাত নারী এই চলচ্চিত্রকার নাওমি সেন্তোও নামে পরিচিত, তার সাবেক স্বামীর নামের সঙ্গে মিলিয়ে নামটি ব্যবহার করেন। তার অনেক কাজই প্রামাণ্যচিত্র। অন্যতম সেরা ‘ইমব্রেইসিং (আলিঙ্গনাবন্ধ)’। সিনেমাটি শিশুকালে তাকে ফেলে রেখে চলে যাওয়া বাবার খোঁজে তৈরি করেছেন। আরেকটি প্রামাণ্যচিত্র খুব খ্যাতি লাভ করেছে ‘কাতাসমোরি’, সেই দাদীর গল্প যিনি তাকে বড় করেছেন।
আরও বিচারক মিশরের সিনেমাটোগ্রাফার ন্যান্সি আবদেল ফাত্তাহ। নারী এই ক্যামেরাম্যান প্রধানত তার দেশের আরবী ভাষার সিনেমাগুলোতে কাজ করেন। তার স্বদেশী আছেন কম্পোজার রাগেহ দাউদ। তৃতীয় প্রজন্মের এই কম্পোজার সমকালীন ক্লাসিক্যাল গান নিয়ে কাজ করেন সিনেমায়।
আছেন ইতালিয়ান অভিনেত্রী স্তেফানিয়া কাজিনি। ৭৪ বছরের বিখ্যাত ইতালিয়ান এই অভিনেত্রী, চিত্রনাট্যকার, পরিচালক ও প্রযোজক। তার ‘লোনতানো দা দোভে’ ছবির জন্য ‘দি অ্যাকাডেমি অব ইতালিয়ান সিনেমা’র ইতালিয়ান রেঁনেসার পরিচয়বাহী ‘দাভিদ দ্য দোনাতেল্লো’ পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। অভিনয় করেছেন রবার্ট ডি নিরো ও জেরার্ড ডে পারডিউ’র সঙ্গে নায়িকা হিসেবে প্রয়াত, প্রখ্যাত ইতালিয়ান পরিচালক বেনার্দো বেরতোলুচ্চির ১৯৭৬ সালের সিনেমা ‘১৯০০’তে।
এ আয়োজনে আরও থাকছেন ম্যাক্সিকান তরুণ চলচ্চিত্রকার হুয়াকিস দেল পাসো। ফ্রেঞ্চ-আলজেরিয়ান ‘ইব্রাহিম’ খ্যাত সিনেমার পরিচালক ও অভিনেতা সামির গুসেমি।
ওএফএস/