‘সবাইকে ভাবতে হবে আমি শুধু আমার না, আমি আমাদের’
কিংবদন্তি গীতিকবি, চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক গাজী মাজহারুল আনোয়ার আর নেই। সবাইকে কাঁদিয়ে রবিরাব (৪ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৬টায় না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন তিনি। তার মৃত্যুতে সংগীতাঙ্গন এবং চলচ্চিত্রাঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। কিছুদিন আগে ঢাকাপ্রকাশ-এর সঙ্গে এফডিসিতে কথা হয়েছিল এই কিংবদন্তির। সেই কথার কিছু অপ্রকাশিত অংশ তুলে ধরা হলো ঢাকাপ্রকাশ-এর পাঠকদের জন্যে।
ঢাকাপ্রকাশ: আপনি সিনেমার মানুষ, গানের মানুষ। অনেকদিন পর এফডিসিতে এসে কেমন লাগছে?
গাজী মাজহারুল আনোয়ার: শারীরিক অসুস্থতার কারণে এখন আর এত বেশি আসা হয় না। তারপরও সময় সুযোগ পেলে শরীর ভালো থাকলে আমি চেষ্টা করি এখানে আসতে। তবে এখানে আসলে মনটা খুব ভারাক্রান্ত হয়ে যায়। যে উচ্ছ্বাস থেকে আমরা একত্রিত হয়ে এদেশের চলচ্চিত্র ও সংস্কৃতিকে নানা ভাবে সমৃদ্ধ করতে পেরেছিলাম। সেই জায়গা থেকে এসে এখন মনে হচ্ছে আমরা কোথাও না কোথাও, কোনো না কোনো কারণে আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি। সেটা অত্যন্ত আমাদের জন্য দুঃখজনক। বর্তমান সরকার নিশ্চয়ই মনে প্রাণে চেষ্টা করে যাচ্ছেন আমাদের সংস্কৃতি ও চলচ্চিত্রের উন্নয়নে কাজ করতে। অনেকেই বলছেন এখন এটার পরিবেশ নেই, ওটার পরিবেশ নেই। তাহলে পরিবেশ গেল কোথয়া? পরিবেশ রক্ষা করার দায়িত্ব কাদের। পরিবেশটা কেন অগ্রগামী হয়ে যাচ্ছে। এই দোষটা কেউ কাউকে না দিয়ে নিজেই আবার বলছেন এখন তো ভাই গান-বাজনার পরিবেশ নাই। চলচ্চিত্রের পরিবেশ নাই। নির্মাণের পরিবেশ নাই। তাহলে পরিবেশটা গেল কোথায়? এগুলো হলো মিথ্যা আত্মসমর্পন। আমাদের তো দায়িত্ব আছে। পরিবেশতো আমাদের সৃষ্টি করতে হবে। সবাইকে ভাবতে হবে আমি শুধু আমার না, আমি আমাদের।
ঢাকাপ্রকাশ: তাহলে করণীয় কী?
গাজী মাজহারুল আনোয়ার: আমি যখন জাতীয় বা আন্তর্জাতিকভাবে কথা বলি সবাইকে একই কথা বলি। সেটা হলো আমাদের বাংলাদেশের মতো সৃষ্টিশীল মানুষের অভাব সারা পৃথিবীতে। প্রত্যেক মানুষে আত্মত্যাগ করার যে স্পৃহা সেটা ক্রমাগতভাবে আমরা হারিয়ে ফেলছি। এই দেশটার মতো এতো উন্নত সৃষ্টিশীল দেশ পৃথিবীর আর কোথাও নেই। সামান্য বৃষ্টি হলেই এখানে ফসল হয়। এখানে মাটি উর্বর। সামান্য পরিশ্রম করলে এখানে প্রাপ্তি এসে যায়। এত অল্পতে যখন এত প্রাপ্তি এসে যায় তাহলে আমাদের এত দুর্বলতা কেন।
ঢাকাপ্রকাশ: চলচ্চিত্রে যে সংকট চলছে এটা নিয়ে আপনার মন্তব্য কী?
গাজী মাজহারুল আনোয়ার: এটা ক্ষণিকের সংকট। এই সংকট নিরসন হয়ে যাবে। আমাদের সবাইকে আরও বেশি ইতিবাচক হতে হবে। এই অঙ্গনটাকে আমাদের নিজেদের মনে করতে হবে। আমি একটা জিনিস বিশ্বাস করি, এই মাটিতে আমার জন্ম হয়েছে তাই এই মাটিকে উর্বর করার দায়িত্ব আমার।
ঢাকাপ্রকাশ: সিনেমা নির্মা করবেন কি?
গাজী মাজহারুল আনোয়ার: আমি অবশ্যই নতুন সিনেমা নির্মাণ করতে চাই। সিনেমা নির্মাণ না করার ইচ্ছে থাকলে এফডিসিতে আসতাম না। তবে এফডিসিতে এখন একে অপরকে যেভাবে দোষারোপ করা হচ্ছে। এটা দুঃখজনক। আমাদের সবাইকে একত্রিত হয়ে সুন্দর সুন্দর কাজ করে যেতে হবে। তবেই আমাদের সফলতা আসবে।
ঢাকাপ্রকাশ: কবে নাগাদ শুরু করবেন?
গাজী মাজহারুল আনোয়ার: এটা এখনো পরিকল্পনা করিনি। তবে গল্পভাবনা চলছে। সবকিছু ঠিক থাকলে নতুন সিনেমা নির্মাণে হাত দেব।
এএম/এমএমএ/