ধর্ষণে অভিযুক্ত বিখ্যাত জার্মান পরিচালক ডিটা ভিডে মারা গিয়েছেন
জার্মানির ইতিহাসের অন্যতম সেরা টিভি পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার ডিটা ভিডে মারা গিয়েছেন। জানিয়েছে মিউনিখ স্টেট কোর্ট। খবরটি রাজ্য আদালতই দিয়েছে গতকাল বুধবার। তারা তার বিপক্ষে একটি নারীদের যৌন হয়রানির মামলার বিচার করছিলেন। ভিডের বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
আদালত জানিয়েছেন, তিনি মারা গিয়েছেন ১৩ জুলাই, ২০২২ তারিখে। উত্তরের শহরের হামবুর্গে। খবরটি প্রকাশও করেছে জার্মান নিউজ এজেন্সি বা সংবাদ বিক্রয় প্রতিষ্ঠান ডিপা (ডয়েচে প্রেস আগেনটুয়া)।
বুধবারই তার বিপক্ষে আদালতে বিচার শুরু হবার কথা ছিল। মামলাটিতে একজন উচ্চাকাংখী নবীন অভিনেত্রী ইয়ানি টেম্পেকে মিউনিখের একটি হোটেলে ১৯৯৬ সালে তিনি ধর্ষণ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
জার্মানির প্রথম নামকরা ব্যক্তিত্ব হলেন ডিটা ভিডে, ২০১৮ সালে দেশটিকে মিটু হ্যাশটাগ আন্দোলন শুরু হবার পর অভিযুক্ত হয়েছেন। তার বিপক্ষে টার্গেট করে গণমাধ্যম (টিভি, সিনেমা, রেডিও, মঞ্চ ইত্যাদি) এবং শিল্পকলার ভুবনের মেয়েদের যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণ ইত্যাদির অভিযোগ উঠেছে। কয়েকজন অভিনেত্রী নারী তার বিপক্ষে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাদের কথা হলো, যৌন মিলনের জন্য তিনি তাদের জোর করেছেন, প্রলোভন দেখিয়েছেন। যৌন নিপীড়নের অভিযোগই করেননি, অভিনেত্রী ইয়ানি টেম্পে ধর্ষণের মামলা করেছেন। তবে অভিযোগগুলো ভিডে অস্বীকার করেছেন এবং মামলাগুলোতেও ২০২১ সালে তিনি উপস্থিত হতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। সরকারীভাবেও তার বিপক্ষে কিছু করা যায়নি, তিনিও লুকিয়ে ফেলেছেন নিজের সব অপরাধ। এর কারণ হলো, এই খ্যাতনামা পরিচালকের বেশিরভাগ কাজই করা সরকারী সম্প্রচারমাধ্যমগুলোতে। তিনি টাকা নিয়েছেন ও সরকারকে টাকা এনে দিয়েছেন। কিন্তু ডিটা ভিডে শেষ রক্ষা করতে পারেননি নিজেকে ও সুনামকে এবং তার পরিবার-পরিজনকে। তার বিপক্ষে সরকারী তদন্তের পর ভিডে অত্যন্ত আকাংখিত নিনেলং ফেস্টিভ্যালের শিল্প পরিচালকের পদটিও ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
ভিডে সবচেয়ে বিখ্যাত ৯০’ দশক ও ২০ দশকের টিভি সিরিজের সূত্রধর (পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার) হিসেবে তার কাজের জন্য। এরপর তিনি এই একটি ওপেন এয়ার থিয়েটার বা উন্মুক্ত মঞ্চ উৎসব পরিচালনায় প্রধানের ভূমিকার জন্য খ্যাতি লাভ করেছেন। এটি হয় জার্মানির কেন্দ্রের ব্যাড হেয়াসফেইডে। হেয়াসফেইড-রোটেনবোর্গ রাজ্যের হেয়াসফেইড উৎসবের নগরী হয়েছে। শহরের সবচেয়ে নামকরা ও বিশ্বের অন্যতম স্বীকৃত ‘নিনেলং ফেস্টিভ্যাল’র শিল্প পরিচালক হিসেবে ডিটা ভিটে ২০০৩ থেকে ২০১৪ টানা ১১ বছর কাজ করে দারুণ প্রশংসা ও খ্যাতি এবং সম্মান লাভ করেছেন। ২০০২ সাল থেকে জার্মানিতে মঞ্চ নাটকের উৎসবটি চলছে। তারই হাতে গড়া তার যশ, সম্মান।
তার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে নিয়মানুসারে মামলাগুলো বাতিল করা হয়েছে।
ডিটা ভিডের আইনজীবিরা জানিয়েছেন দীর্ঘকালের রোগের পর তিনি মারা গিয়েছেন। জামান গণমাধ্যম ডিপা আরো উল্লেখ করেছে, তারা উকিলরা গণমাধ্যমকে এই মামলাগুলো নিয়ে রিপোর্টিংয়ের জন্য তার পক্ষে সমালোচনা করেছেন।
তার পুরো নাম ডিটা কার্ল সেজা ভিটে। তবে ডিটা ভিডে নামেই খ্যাতিমান ছিলেন। জন্মেছেন ১৯৩৯ সালের ১২ নভেম্বর। একজন বিখ্যাত জার্মান পরিচালক। নাটক, সিনেমার কিংবদন্তী। ১৯৬০ দশকের শেষের দিক থেকে তিনি টিভি পরিচালনার জীবন শুরু করেছেন। অনেকগুলো অত্যন্ত জনপ্রিয় ও সফল হয়েছে। ভিডের বিখ্যাত মিনি সিরিজের অন্যতম, ড্যা গোসে বেলহাইম, ড্যা কুনিক ফন জাংক ড ফাউলি, ডি আফিয়ারে জেমেলিন। তাতে বিবেচনা করা হতো টিভি চালুর পর থেকে জার্মানির সবচেয়ে পরিচিত ও নামী পরিচালকদের একজন।
ডিটা ভিটে জার্মানির আরেক নামকরা নারী ওজুলা ভল্টাসকে বিয়ে করেছেন। তাদের অনেক বছরের সংসার। এর মধ্যেও তার অন্য রানীদের সঙ্গে শারিরীক সম্পর্ক ছিল। অভিনেত্রী হানালোহা এজনার আছেন। তিনি অত্যন্ত বিখ্যাত একজন অভিনেত্রী। টিভি ও সিনেমায় কাজ করেছেন। টিভি সিরিজই বেশি নাম করেছে। এখন আর নেই। ৭৬ বছর বয়সে ২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল মারা গিয়েছেন। ডিডা ভিটোর শারিরীক সম্পর্ক ছিল ইংগ্রেড স্টিগারের সঙ্গেও। ১৯৬৮ সালে এই বিখ্যাত মডেল মিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’ হয়েছেন বার্লিনে। এরপর সিনেমা ক্যারিয়ারের শুরু। জার্মানির সবচেয়ে বিখ্যাত ও বিক্রিত কিশোর পত্রিকা ‘ব্রাভো’ তাকে পর পর চারবার দর্শকদেরই বিচারে পুরস্কার দিয়েছে। তিনি ‘অটো’ নামের সেরা পুরস্কারটিও লাভ করেছেন। দর্শকদের বিচারে ১৯৭৫ সালে পেয়েছেন ব্রোঞ্জ, ’৭৬ ও '৭৭ সালে রৌপ্য এবং ১৯৭৮ সালে স্বর্ণ জয় করেছেন। আজও সেই রেকর্ড কেউ ভাঙতে পারেননি। এতই সুন্দরী ছিলেন তিনি।
এই নারীদের সঙ্গে সম্পর্কের সমান তালে ডিডা ভিটে সংসার করে গিয়েছেন। তাদের ছয়টি ছেলে, মেয়ে আছে।
ওএস।