উইলি নেলসের ব্যান্ডের আত্মা ও আপন বোন ববি নেলসেন মারা গিয়েছেন
উইলি নেলসনের পাঁচ দশকের গানের সঙ্গী বোন ববি নেলসেন মারা গিয়েছেন ১০ মার্চ, বৃহস্পতিবার। তিনি মারা গিয়েছেন ৯১ বছর বয়সে। ভাই উইলি নেলসনের সঙ্গে টানা পাঁচ দশকের বেশি পারফর্ম করে গিয়েছেন।
‘সেদিন ভোরে ঘুমের মধ্যে তিনি শান্তিতে চলে গিয়েছেন’-জানিয়েছেন উইলি নেলসনের গণসংযোগকারী।
ববি নেলসেন ছিলেন একজন বিখ্যাত পিয়ানোবাদক বা পিয়ানিস্ট ও গায়িকা। তারা একসঙ্গে পারফরমেন্স করতেন। তিনি তাদের ‘দি উইলি নেলসন অ্যান্ড ফ্যামেলি (তারা ফ্যামেলি উইলি নেলসন’স ব্যান্ড নামেও ডাকেন) ব্যান্ড’ দলটির একেবারে শুরু থেকে থাকা আসল মানুষ; পরিবারের ভাই-বোন হিসেবে কাজ শুরু করেছেন।
এর বাদেও তিনি তার ভাইয়ের প্রশ্নাতীত ভালো সুরগুলো তৈরির পেছনে অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে কাজ করে গিয়েছেন। যদিও মঞ্চে ভাই সুরগুলোকে তুললে তিনি সেগুলোকে তার পিয়ানোতে মেশাতেন ও কাজ করতেন অন্য সঙ্গীতশিল্পীদের সঙ্গে। মাঝে, মধ্যে তাদের ব্যান্ডকে পরিচালনা করতেন। তার সুদক্ষ পিয়ানো বাদনে দারুণ আনন্দ দিতেন গানপ্রেমীদের। তিনি একজন নিয়মিত গায়িকাও ছিলেন।
ববি প্রায় দুই বছরের বড় ছিলেন তার ছোট ভাইয়ের। তারা তাদের দাদা-দাদীর কাছে বড় হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের একটি গীর্জায়।
ববির মৃত্যুর পর দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে তার ভাষ্যে, “আমি যখন পিয়ানো বাজানো শিখছি, সেই ছোট্ট বয়সে দাদা বলেছিলেন, ‘যদি পিয়ানো নিয়ে কাজ করতে পার, তাহলে তোমার জীবনজীবিকা একসময় গানের মাধ্যমে করতে পারবে।’ আমি কোনোদিন এই কথা ভুলিনি।”
এই সহদোরা-সহদোর কিশোর বয়সে বারগুলোতে তাদের দেশের গান গাওয়া ও বাজানো শুরু করেছেন। তখন থেকে তাদের সঙ্গী হয়েছেন ববির স্বামী ব্লাড ফ্লেচার। তিনি ছিলেন একজন সঙ্গীতশিল্পী ও রসিক ব্যক্তি। ১৯৭০’র দশকের শুরুর দিকে তিনি তার কৌতুকের অ্যালবামগুলো প্রকাশ করেছেন।
তাদের এই গানের দলে পারিবারিকভাবে ছিলেন তাদের বাবা আইরা নেলসন। তার পুরো নাম আইরা নেলসন মরিস। তিনি একজন আমেরিকান লেখক ও কূটনীতিবিদ। সুইডেনে ১৯১৪ থেকে ১৯২৪ সাল পর্যন্ত তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্টদূত ছিলেন। ইতালিতে তাকে কমিশনার জেনারেল নিয়োগ করা হয়েছিল। আইরা নেলসন তাদের সঙ্গে তখন গিটার বাজাতেন।
একটি কার দুঘটনায় ববির স্বামী ব্লাড ফেচার মারা গিয়েছেন ও তারপর তাদের তিনটি এতিম সন্তানের দেখাশোনা এবং ব্যবসা নিয়ে পড়ালেখা করতে পারিবারিক ব্যান্ডদলটি ছেড়ে চলে গেলেন ববি।
কলেজ থেকে অনার্স পাশের পর ববিকে ‘দি হ্যামন্ড অর্গান কম্পানি’ অফিসের কাজে সাহায্য করতে চাকরি দিল। এটি একটি বিখ্যাত ইলেকট্রিক বাদ্যযন্ত্র তৈরি প্রতিষ্ঠান। ১৯৩৫ সালে প্রথম বাদ্যযন্ত্রটি তারা তৈরি করেছেন। সেখানে ববি তাদের পণ্যগুলোকে সাজানো ও ক্রেতাদের দেখার ব্যবস্থা করতেন।
যখন তার ছেলেমেয়েরা আরো বড় হয়ে গেল এবং তার নিজের মধ্যে একজন পারফরমার হিসেবে পারফরমেন্সের ইচ্ছে রয়ে গিয়েছে বলে, তিনি তাদের ব্যান্ডদলে এসে গানের শোগুলোতে আবার পিয়ানো বাজানো শুরু করলেন।
স্বাভাবিকভাবেই এই বিখ্যাত ব্যান্ডদলটির প্রতিষ্ঠাতার বোন, অন্যতম সদস্য ও নামকরা পিয়ানোবাদক যুক্তরাষ্ট্রের অস্টিন ও নাশভিলের শোগুলো থেকে জীবিকা উপার্জন করতে পারলেন।
জীবনে আবার ফিরে আসার সময়গুলোর কথা তিনি এভাবে বলেছিলেন, ‘এটি একটি অবিশ্বাস্য ব্যাপার ছিল। কারণ আমি আবার পিয়ানো বাজানো ও গান নিয়ে কাজ করার জন্য ফিরে এসেছিলাম। আমি বাদ্যযন্ত্র বিক্রি ও সাজানোতে জীবনটি কাটিয়ে দিতে চাইনি। তবে আবার গানের আসনে বসতে পেরে খুব খুশি হয়েছি। কেবল আমার হৃদয় ও আত্মার জন্য কাজ করতে পেরে খুব ভালো লেগেছে।’
যখন তাকে ব্যান্ডে আমন্ত্রণ জানালেন, ছোট ভাই উইলি ১৯৭২ সালে, আটলান্টিক রেকর্ডসের সঙ্গে একটি রেকর্ড গড়া চুক্তি করেছেন।
বোন বলেছেন, ‘উইলির সঙ্গে আবার সঙ্গীত নিয়ে কাজ করতে পেরে আমি এত খুশি হয়েছি যে বলে বোঝাতে পারব না।’
তবে অনেক, অনেক বছর নিজের প্রথম অ্যালবামটি প্রকাশ করেছেন ববি নেলসেন। তার এই অ্যালবামের নাম ‘অটোবায়োগ্রাফি’। অ্যালবামটির ১২টি গানের মধ্যে দুটিতে তিনি ভাইকে নিয়েছেন। উইলি নেলসেন সেগুলোতে বাজিয়েছেন ও গেয়েছেন।
সম্প্রতি তিনি কাজ করেছেন ‘দি উইলি নেলসেন ফ্যামেলি’ নামের তাদের ব্যান্ড দলের অ্যালবামে। এটি ২০২১ সালে লিগাসি রেকর্ডস থেকে মুক্তি পেয়েছে। তাদের গানের আদলে এখানেও গানগুলো আছে। সেগুলো হলো দেশের গান বা কান্ট্রি মিউজিক, লোককথার গান, নীতিবাক্য নিয়ে তৈরি গানের চরণে সাজানো। তাতে উইলি’স ফ্যামেলি ব্যান্ডের সদস্যরা গেয়েছেন ও বাজিয়েছেন।
গেল দুই বছরের মধ্যে প্রকাশিত দুটি বই লিখেছেন এই দুই ভাই, বোন। দুটিই স্মৃতিকথার বই। একটি হলো উইলির নামে প্রকাশিত-‘মি অ্যান্ড সিস্টার ববি : ট্রু টেলস অব দি ফ্যামেলি ব্যান্ড’ এবং আরেকটি ‘সিস্টার, ব্রাদার, ফ্যামেলি : অ্যান আমেরিকান চাইল্ডহুড ইন মিউজিক।’
পিয়ানোবাদক, ব্যান্ডের সহ-সদস্য ও ভালোবাসার বোনকে হারিয়ে ফেললেন উইলি নেলসেন। তাকে নিয়ে একটি হৃদয়বিদারক পোস্ট দিয়েছেন তিনি তার ইনস্ট্রগ্রামে বুধবার ১০ মার্চ, বোনের মৃত্যুর খবর জানার পর-“নেলসেন পরিবার থেকে : আজ সকালে ববি নেলসেন চলে গেলেন। তিনি পরিবারের সমস্যদের মাঝে শান্তিতে চিরবিদায় নিয়েছেন। তার চমৎকারিত্ব, দয়াশীলতা, সৌন্দর্য্য ও মেধা এই বিশ্বকে আরো ভালো জায়গায় পরিণত করেছে। তিনি উইলি’স ব্যান্ডের প্রথম সদস্য ছিলেন। সেখানে তিনি যোগ দিয়েছিলেন একজন পিয়ানো বাদক ও গায়িকা হিসেবে। আমাদের সবার হৃদয়গুলো তার চলে যাওয়ায় ভেঙে গিয়েছে। তিনি গভীরভাবে আমাদের মনে অভাব অনুভব করাবেন। আবার তাকে আমাদের জীবনে পাওয়ায় আমরা সত্যিকারভাবে সৌভাগ্যবান। আপনাদের ভাবনাগুলোতে তার ও তার পরিবারকে দয়া করে রাখুন। তাদের এখন একা থাকতে দিন এই গভীর শোক কাটানোর প্রয়োজন বলে।’’
উইলি নেলসেন ও তার বোন ববি নেলসেন অত্যন্ত ঘনিষ্টভাবে জীবন কাটিয়েছেন। বোনকে নিয়ে তিনি তার ব্যান্ড দলটির স্মৃতিকথার বইটি ২০২০ সালে প্রকাশ করেছেন। তখন পিপল ম্যাগাজিনকে উইলি নেলসেন বলেছেন, ‘তিনি আমার সারাজীবনের সবসময়ের সবচেয়ে ঘনিষ্ট বন্ধু। তিনি তার জীবন নিয়ে যা কিছু করেছেন, সেজন্য কিছু স্বীকৃতি পেলেন বলে আমি আনন্দিত।’
ওএস।