স্বাধীনতা সংগ্রামী, কাকাবাবু সিরিজ আটকে গেল
পিটিআই বা প্রেস ট্রাষ্ট্র অব ইন্ডিয়ার খবরে প্রকাশিত হয়েছে-সিনেমা হল ও মাল্টিপ্লেক্সগুলোতে যখন চলচ্চিত্র প্রেমিকরা ফিরতে শুরু করছেন, তখনই কোভিড-১৯ রোগের ঘটনাবলী গভীর হতে শুরু করেছে। ফলে তিনটি ভারতীয় বাংলা ছবি মুক্তি আটকে গিয়েছে। একটি বেরুনোর কথা ছিল আজ বুধবার ২৬ জানুয়ারি, ২০২২।
“সর্বপ্রথম বেরুনো ছবির নাম ‘৮/১২’। ঐতিহাসিক এই সিনেমাটি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়কদের জীবন ঘিরে বানানো। সেই সময়ের বা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের দিনগুলোতে অত্যাচারী আইজি (প্রিজনস) লেফটেন্যান্ট কর্ণেল এন এস সিম্পসনকে স্বাধীনতা যোদ্ধা বিনয় বোস, বাদল গুপ্ত ও দীনেশ গুপ্ত ব্রিটিশদের সচিবালয় কলকাতার হৃদপিন্ডে অবস্থিত রাইটার্স বিল্ডিংয়ে গুপ্ত হত্যার দিনগুলোকে বণনা করেছে”-জানিয়েছেন এর প্রযোজক খান সিং সুধা।
‘৮/১২’ বেরুনোর কথা ছিল ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস-আজ ২৬ জানুয়ারি। এই বছর বিশাল দেশটি ৭৩তম দিবস পালন করছে। এই দিন তাদের সংবিধান কার্যকর হয়েছে।
খান সিং সুধা তার বক্তব্যে আরো বলেছেন, ‘শুরুতে আমরা এই কোভিড-১৯ পরিস্থিতির জন্য উভয় সংকটে পড়েছিলাম। তবে চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত নিলাম, এই তিন মহান স্বাধীনতা সংগ্রামীকে সম্মান জানানোর উত্তম নিদর্শন হিসেবে একে আমাদের প্রজাতন্ত্র দিবসে মুক্তি দেওয়া যথাযথ হবে।’
ছবিটির পরিচালক অরুণ রায়। বলেছেন, ‘জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে, যখন কেসগুলো ছড়িয়ে গিয়েছিল, আমরা তালগোল পাকিয়ে মুক্তি মুলতুবি করেছি। যাই হোক, অনেক আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নিয়েছি জানুয়ারির ২৬ তারিখে মুক্তি দেব। কারণটি হলো, আমাদের জন্য বিশেষ সিনেমা এটি-যেখানে আমরা জাতীয় বীরদের শ্রদ্ধা জানিয়েছি।’
অন্য দুটি বড় ছবি মুক্তির তালিকাতে আছে সৃজিত মুখার্জি পরিচালিত ‘কাকাবাবুর প্রত্যাবতন’ অন্যটি শিবপ্রসাদ মুখাজি ও নিবেদিতা রায়ের প্রযোজনা ‘বাবা বেবি ও’। ছবি দুটি ৪ ফেব্রুয়ারি মুক্তির সিডিউল ছিল।
পরিবেশকদের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যানার ইষ্টান ইন্ডিয়া মোশন পিকচার্স অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, পরের দুটি ছবির পরিচালকরা তাদের ছবির মুক্তি স্থগিতের পর মাথা গরম করে ফেলেছিলেন। তবে তারা মনোভাব পরিবতন করেছেন। সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সিনেমা হলগুলোতে আসবেন গভীর কভিড ১৯ কেসগুলোর পর, ভালো সময়ে, উপযুক্তকালে।
‘আমাদের সিনেমা ৪ ফেব্রুয়ারি আগের সিদ্ধান্তে বেরুবে’-বলেছেন কাকাবাবুর প্রত্যাবর্তনের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এসভিএফ (শ্র ভেঙ্কটেশ ফিল্মস; ভারতের একটি গণমাধ্যম ও বিনোদন কম্পানি। কলকাতাতে তাদের সদর দপ্তর। শক্তিনাথ মোহতার কম্পানিটি ভারতীয় বাংলা ছবির প্রযোজনা ও পরিচালনা করে। পূর্ব ভারতে তারা হলিউড ও বলিউডের ছবি প্রযোজনা করেন)’র একজন মুখপাত্র।
‘কাকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’ ভারতের অমর বাঙালি সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বিখ্যাত ‘কাকাবাবু’ সিরিজ। এই কাকাবাবু একজন পঙ্গু, ক্র্যাচে ভর দিয়ে হাঁটেন। অসীম সাহসী ও বুদ্ধিমান। তার বিখ্যাত কিশোর গোয়েন্দা সিরিজটি সারাবিশ্বের বাংলা ভাষার মানুষের তুমুল প্রিয়। সৃজিতের পরিচালিত সিরিজের এই চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন টালিউডের রাজা প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জি; তিনিই কাকাবাবু। আর যে বইটি এবার সিনেমাতে এলো সেটির নাম ‘জঙ্গলের মধ্যে এক হোটেল’।
‘বাবা বাবু ও’ ছবিতে বাবা-মা নেই এমন এক শিশুর পালক পিতার চরিত্রে অভিনয় করেছেন যীশু সেনগুপ্ত।
এই ছবিগুলোর প্রযোজকদের হয়ে একজন মুখপাত্র বলেছেন, “২০২১ সালের পুরোটা সময় ধরে আমরা কোভিড-১৯ রোগকে মূল্যায়ন করে চলেছিলাম। আরো ভালোভাবে করলাম, যখন মহামারি রোগটির দ্বিতীয় ঢেউ আমাদের দারুণভাবে আঘাত করলো। গেল বছরের শেষের দিকের গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোতে ছবিগুলোর মুক্তির তারিখগুলো ঘোষণা করা হয়েছিল। আমরা এমন কোনো সময়ের বা তারিখের সঙ্গে সংঘাতে যেতে চাইনি-যখন বাংলা চলচ্চিত্র শিল্প বিপুল পরিমান সাহায্য প্রার্থনা করছে বা তার তেমনটি দরকার। যাই হোক, একটি কালের বিষন্নতার পর আমরা নতুন একটি বছর শুরু করেছিলাম অনেক ভালোবাসা ও হাসি-তামাশার মাধ্যমে; যেমনটি হলো ‘বাবা বেবি ও’। এটি সেরকমই পূর্ণ বিনোদনের ছবি।”
সিনেমার পরিস্থিতি নিয়ে একটি করে আসনের জনপ্রিয় এক সিনেমা হলের মালিক ও পশ্চিমবঙ্গের একজন বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিবেশন সত্য দ্বীপ সাহা বলেছেন, ‘বক্স অফিস বা সিনেমার পর্দাতে সম্প্রতি বেরুনো সবগুলো ছবি ভালো করছে।’
তিনি আরো বলেছেন, “দেব ও পরান বন্দোপাধ্যায়ের মতো তারকা আছেন ‘টনিক’-এ। ছবিটি এখনো হাউজফুল থাকছে ছুটির দিনগুলোতে। একটি মাস পরেও এই ঘটনা ঘটে চলেছে। এমন ঘটনাগুলো ভারতীয় বাংলা প্রযোজক ও পরিবেশকদের বড় পর্দাগুলোতে ছবি মুক্তি দিতে মনোবল চাঙা করে তুলছে।”
ওএস।