অনুপম খেরের সমালোচনায় ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত
‘ভারতের আন্তজাতিক চলচ্চিত্র উৎসব-এর (দ্য ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অব ইন্ডিয়া)’ ৫৩তম এই আসর ২০ থেকে ২৮ নভেম্বর টানা আট দিনে সম্পন্ন হলো।
বিচারকমণ্ডলীর প্রধান ছিলেন ইসরায়েলের চলচ্চিত্র নির্মাতা ও চিত্রনাট্যকার নাদাভ লাপিদ। ৪৭ বছরের চলচ্চিত্রকারের ‘দ্য কাশ্মির ফাইলস’ নামের ছবিটির বিষয়ে মন্তব্য আলোড়ন তুলেছে। হিন্দি ভাষার এই নাটকীয় সিনেমার চিত্রনাট্য ও পরিচালক বিবেক রঞ্জন অগ্নিহোত্রী। প্রধান দুটি চরিত্র করেছেন বাঙালি-বলিউড সুপারস্টার মিঠুন চক্রবর্তী ও অনুপম খের।
গতকাল গোয়াতে শেষদিনের বিকালে তিনি বলেছেন, ‘বিবেক অগ্নিহোত্রীর পরিচালনা ‘একটি প্রপাকান্ডা বা প্রচার’ এবং ‘একটি অশ্লীল ছবি।’
নাদাভ লাপিদ শেষদিনে তার সভাপতির বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন, ‘আমরা ছিলাম, আমাদের সবাই-বিরক্ত এবং বিষ্মিত হয়েছি-১৫তম সিনেমা দ্য কাশ্মীর ফাইল’র মাধ্যমে। অমাদের কাছে সেটি একটি প্রচারণা মনে হয়েছে, একটি অশ্লীল সিনেমা মনে করেছি। এমন একটি মর্যাদাপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসবের প্রতিযোগিতা বিভাগে লড়াইয়ের জন্য অনুপযুক্ত মনে হয়েছে। আমি পুরোপুরি সুখী চলচ্চিত্রকার হিসেবে আপনাদের সবার সামনে এই মঞ্চে অনুভূতিগুলো ভাগ করে নিচ্ছি। একটি উৎসব গ্রহণের যে মর্ম থাকে, সেখানে এই আলোচনাও একটি কঠিন কাজ-কোন সিনেমাটি শিল্প ও জীবনের জন্য প্রয়োজনীয়।’
৫শ ৩২টি ছবিতে অভিনয় করা ভারতীয় সিনেমার সুদীর্ঘকালের ভিলেন ‘অনুপম খের’ এই সিনেমার একটি প্রধান চরিত্র করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ সিনেমার কলাকুশলীরা কার্যকর হয়েছেন মন্তব্য করার পর সঙ্গে, সঙ্গে এটি পূর্বপরিকল্পিত মনে হচ্ছে। ফলে চলচ্চিত্র উৎসবটির এই সমালোচনাটি পূর্বপরিকল্পিত।’
তিনি অভিযুক্ত করেছেন লাপিদকে যে, কাশ্মিরী পন্ডিতরা কষ্টে আছেন।’ অনুপম খের আরও বলেছেন, ‘কাশ্মিরী পন্ডিতদের দলবদ্ধ হয়ে দেশত্যাগের ওপর তৈরি একটি সিনেমার বিষয়ে যিনি এমন একটি সমাজ (ইহুদি) থেকে এসেছেন, যারা ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহতা সামলেছেন। একজন বিশিষ্ট ব্যক্তির এমন মন্তব্য নিন্দনীয়। ঈশ্বর তাকে বোঝার ক্ষমতা দান করুন।’
তিনি গতকাল রাতে তার টুইটারে দি কাশ্মিরী ফাইলস ও দি সিনড্রেলা’স লিস্ট”র বিশেষ অংশের দৃশ্য তার টুইটারে শেয়ার করেছেন। শেষ ছবিটি ইহুদিদের হত্যাকাণ্ডের উপর বানানো। সেখানে নাভিদ লাপিদের নাম উল্লেখ না করে ভারতের ‘পদ্মশ্রী’ ও ‘পদ্মভূষণ’ পদকে সম্মানিত বরেণ্য অভিনেতা, ৬৭ বছরের অনুপম খের লিখেছেন, ‘এই মিথ্যাটি কত বড় সেটি কোনো ব্যাপার নয়, সত্যের সঙ্গে তুলনায় এটি সবসময়ই ছোট।’
ভারতে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত নাও গিলন নাদাভ লাপিদকে তার এই মন্তব্যের জন্য অত্যন্ত সমালোচনা করেছেন। তিনি তাকে একটি খোলা চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, ‘ভারতীয় সংস্কৃতিতে তারা একজন অতিথি সেবাকে ঈশ্বর সেবা মনে করেন। আপনি সবচেয়ে খারাপভাবে আপনাকে প্রদান করা ভারতের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের বিচারকমণ্ডলীর সভাপতির সম্মানকে অপব্যবহার করেছেন। সেইসঙ্গে সত্যকে, সম্মানকে এবং আপনাকে প্রদান করা বিরাট আতিথেয়তাকে।’
নাও গিলন আরও লিখেছেন, ‘ভারত ও ইসরায়েলের রাষ্ট্র ও জনগণের বন্ধুত্ব খুবই শক্তিশালী এবং আপনার প্ররোচিত ক্ষতিতেও টিকে থাকবে। একজন মানুষ হিসেবে আমি লজ্জিত হয়েছি ও আমাদের আয়োজকদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে চাই এই খারাপ ব্যবহারের জন্য, যেভাবে আমরা তাদের উদারতা ও বন্ধুত্ব পরিশোধ করেছি।’
ভারতীয় প্রকল্প বা অনুষ্ঠান বিভাগে ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ তাদের দেশের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ২২ নভেম্বর প্রদর্শিত হয়েছে। ‘পৃথিবীর স্বর্গ’ নামে খ্যাত এই উপত্যকা থেকে ১৯৯০’র দশকে কাশ্মিরী পন্ডিতদের দলে, দলে চলে যাওয়া নিয়ে সিনেমাটি তৈরি।
গোয়াতে অনুষ্ঠিত উৎসবের বিচারক প্যানেল বলেছেন, ‘তাদের প্রধান বিচারকের এমন মন্তব্য পুরোপুরি ব্যক্তিগত মতামত।’
ওএফএস/